অনলাইন
ইসরাইলের বোমায় চুরমার অসংখ্য নিঃসন্তান ফিলিস্তিনি দম্পতির স্বপ্ন
মানবজমিন ডিজিটাল
(৮ মাস আগে) ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ৩:২১ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১:০২ অপরাহ্ন
গত বছরের ডিসেম্বরে ইসরাইলি বাহিনীর একটি গোলা আঘাত হেনেছিল গাজার বৃহত্তম ফার্টিলিটি ক্লিনিকে। বিস্ফোরণে সেখানকার ভ্রুণবিদ্যা ইউনিটের এক কোণে সংরক্ষিত পাঁচটি তরল নাইট্রোজেন ট্যাঙ্কের ঢাকনা ফেটে ঘটে যায় মর্মান্তিক এক ঘটনা। অতি-ঠাণ্ডা তরল বাষ্পীভূত হওয়ার সাথে সাথে ট্যাঙ্কের ভিতরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, গাজা শহরের আল বাসমা আইভিএফ সেন্টারে সংরক্ষিত ৪,০০০ ভ্রুণ এবং আরও ১,০০০ শুক্রাণুর নমুনা এবং নিষিক্ত ডিম ধ্বংস হয়ে যায়। সেই একক বিস্ফোরণের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী- গাজার ২.৩ মিলিয়ন মানুষের উপর ইসরাইলের সাড়ে ছয় মাসের হামলার পাশাপাশি এক অদেখা নির্মম বর্বরতা। ওই ট্যাঙ্কের ভ্রুণগুলোই ছিল বন্ধ্যাত্বের মুখোমুখি হওয়া শত শত ফিলিস্তিনি দম্পতির শেষ ভরসা।
কেমব্রিজ-প্রশিক্ষিত প্রসূতি বিশেষজ্ঞ এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বাহেলদিন ঘালাইনি (৭৩) যিনি ১৯৯৭ সালে ক্লিনিকটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, বলছেন- 'আমরা জানি যে এই ৫,০০০ জীবন বা সম্ভাব্য জীবন, পিতামাতার ভবিষ্যতের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অন্তত অর্ধেক দম্পতি- যারা আর কার্যকর ভ্রুণ তৈরির জন্য শুক্রাণু বা ডিম্বাণু তৈরি করতে পারবে না- তাদের গর্ভবতী হওয়ার আর সুযোগ থাকবে না। আমার হৃদয় টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গেছে। 'ঘটনাটি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর প্রেস ডেস্ক জানিয়েছে যে তারা প্রতিবেদনগুলো খতিয়ে দেখছে। ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করার কথা অস্বীকার করেছে এবং হামাস যোদ্ধাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছে।
তিন বছরের ফার্টিলিটি ট্রিটমেন্ট করার সময় জাফরাভির মনে প্রবল চাপ পড়ে। তার ডিম্বাশয় থেকে ডিম পুনরুদ্ধার বেদনাদায়ক ছিল, হরমোন ইনজেকশনের শক্তিশালী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছিল এবং দু'টি গর্ভধারণের চেষ্টা ব্যর্থ হবার পর জাফরাভি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। জাফরাভি (৩২) স্বাভাবিকভাবে গর্ভবতী হতে পারেননি এবং ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশনের সাহায্য নেন, যা গাজায় ব্যাপকভাবে উপলব্ধ।
ফিলিস্তিনের পরিসংখ্যান ব্যুরো অনুসারে, ছিটমহলে বড় পরিবারগুলো সাধারণ, যেখানে প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা ১৮ বছরের কম এবং উর্বরতার হার প্রতি নারীর ক্ষেত্রে ৩.৩৮ জনের বেশি। বৃটেনে প্রজনন হার প্রতি নারীর ক্ষেত্রে ১.৬৩ জন।
আল ঘালাইনি বলছেন, গাজার দারিদ্র্য সত্ত্বেও, বন্ধ্যাত্বের মুখোমুখি দম্পতিরা আইভিএফ অনুসরণ করে, কেউ কেউ চিকিৎসার জন্য টিভি এবং গয়না বিক্রি করে দেন। গাজার অন্তত ৯টি ক্লিনিককে আইভিএফ হয়, যেখানে একজন নারীর ডিম্বাশয় থেকে ডিম সংগ্রহ করা হয় এবং একটি ল্যাবে শুক্রাণু দ্বারা নিষিক্ত করা হয়। নিষিক্ত ডিম, যাকে ভ্রুণ বলা হয়, প্রায়শই একজন নারীর জরায়ুতে স্থানান্তরের আগে পর্যন্ত হিমায়িত থাকে। গাজার বেশিরভাগ হিমায়িত ভ্রুণ আল বাসমা কেন্দ্রে সংরক্ষণ করা হয়েছিল, যা একটা বোমার আঘাতে মুহূর্তের মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
সূত্র: আরব নিউজ