শেষের পাতা
গাউছিয়া মার্কেট
বিক্রি নিয়ে হতাশ ব্যবসায়ীরা
ফাহিমা আক্তার সুমি
২৫ মার্চ ২০২৪, সোমবারঈদকে সামনে রেখে গাউছিয়া মার্কেট সেজেছে নতুন রূপে। দেশি-বিদেশি পণ্যের রয়েছে বিপুল সমারোহ। ক্রেতাদের নজর কাড়তে প্রচেষ্টার কমতি নেই দোকানিদের। তবে পণ্যের বিপুল সমারোহ থাকলেও বিক্রি না বাড়ায় হতাশ ব্যবসায়ীরা। প্রতিবছর রমজানে শপিংমলগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ও আনাগোনা থাকলেও এবারের চিত্র পুরোই ভিন্ন। কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার দেখা না মেলায় অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকটে আমদানি পণ্যের বাড়তি খরচের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা সাধারণ মানুষ। তবে ১৫ রমজানের পর এমন অসহায় চিত্র কিছুটা বদলাবে বলে আশা করছেন অনেকে।
গতকাল গাউছিয়া মার্কেটে সরজমিন দেখা যায়, দেশি-বিদেশি পোশাকের সরবরাহে নজর কাড়ছে আগত ক্রেতাদের। বিক্রেতার ক্রেতার নজর কাড়তে নতুন নতুন পোশাক সাজিয়ে রেখেছেন দোকানগুলোতে। তবে ক্রেতার আনাগোনা দেখা গেলেও বেচা-বিক্রি তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। ঘুরে ফিরে মলিন মুখে চলে যাচ্ছেন তারা। অন্যদিকে অলস সময় পার করছেন বিক্রেতারা। পণ্যের দাম বাড়ায় দুশ্চিন্তাও রয়েছে দোকানিদের। ছোট-বড় দোকানগুলোতে রঙিন পোশাকের রয়েছে অসংখ্য সমাহার। ঈদে প্রিয় মানুষদের জন্য পছন্দের পোশাক কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন কেউ কেউ। নানা বয়সী ক্রেতারা খুঁজছেন তাদের পছন্দের পোশাক। তাদের মধ্যে অনেকে কিনছেন, আবার অনেকে ঘুরেফিরে চলে যাচ্ছেন।
শিশুদের পোশাকে কিছুটা ভিড় থাকলেও সেখানেও রয়ে বাড়তি দামের অভিযোগ। শাড়ি-পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট-প্যান্ট, সেলোয়ার-কামিজ, ওয়ান পিস-টু-পিস-থ্রি পিসসহ শিশুদের বিভিন্ন ডিজাইনের জামা রয়েছে দোকানগুলোতে। এসব ড্রেসের দাম ১ হাজার থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত রয়েছে। সেই সঙ্গে জুতা ও কসমেটিকস পণ্যের সমাহারও রয়েছে অনেক দোকানে।
গাউছিয়া মার্কেটের ২য় তলার ডালিয়া ফ্যাশনের দোকানি মো. নুরুল ইসলাম বলেন, মার্কেটে কোনো ক্রেতা নেই। ব্যবসা অনেক খারাপ। অন্য বছর বা করোনার সময় এর চেয়ে ভালো গিয়েছে। অন্যান্য বছরে এমন সময় আমরা কথা বলারই সুযোগ পেতাম না ক্রেতাদের চাপে। মার্কেট বাড়ছে, দোকান বাড়ছে এতে ক্রেতা ভাগ হয়ে গেছে। আমার মনে হয় শতকরা ৮০ শতাংশ দোকানদার লসের দিকে যাবে। এখন যদি বিক্রি না হয় তাহলে আমরা ঈদের বেচাকেনা কখন করবো। দোকানের পোশাকগুলো সব ভারতের। এগুলো তো কারও কাছ থেকে আনতে হয়। এবং তাদের টাকাগুলো দিতে হলে তো বেচাকেনা করেই আমাদের দিতে হবে। এই দেনা-পাওনাটা দিতে সবচেয়ে বেশি হিমশিম খেতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে যে কারণে মানুষ আর পারছে না। এদিকে মানুষের ইনকাম নেই। এখন এমন অবস্থা হয়েছে তাতে ছোটদের মন ভোলানের জন্য তারা মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসছে। কিন্তু বড়রা কিন্তু কিনছে কম। আমার লাইফে এই রকম পরিস্থিতি কখনো দেখিনি। সকাল থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ৫-৬ পিস ড্রেস বিক্রি করেছি। অন্য সময় এটি দ্বিগুণ বিক্রি হতো।
শাহীদা ফ্যাশনের মো. হারুন বলেন, ঈদের বাজার এইবার মার্কেট ফাঁকা। আগে এই সময় মার্কেটে হাঁটতে পারে না এমন অবস্থা হয়। এদিকে আমাদেরও ব্যস্ততা থাকে কথা বলার সুযোগ থাকে না। মানুষ কিনছে না। এইবার সবকিছুর দাম অনেক বেশি। মানুষের আয়ের চেয়ে ব্যয় হচ্ছে দ্বিগুণ। মানুষের স্বাদ আছে সাধ্য নেই অবস্থা। এইবার ব্যবসা খারাপ যাবে সেটি এখনই বোঝা যাচ্ছে। প্রথম দিকে বিক্রির অবস্থা এমন হলে শেষের দিকে আর আশা করা যাবে কীভাবে। আজ ১৩ রোজা এই সময় আমাদের দম ফেলানোর সময় থাকতো না কিন্তু এইবার ভিন্ন। মাত্র ১ পিস ড্রেস বিক্রি করছি।
গাউছিয়া নূর ম্যানশনের সামানা হাউজের পরিচালনাকারী মো. লিটন বলেন, ঈদের বাজার একেবারে খারাপ। এখন ব্যবসার অবস্থা খুবই খারাপ। একদিকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি অন্যদিকে সামনের ওভার ব্রিজটা ভাঙার কারণে ক্রেতা কম আসছে। সব পণ্যের দাম বাড়তি। সবার একটা বাজেট থাকে। যারা কিনছেন তারা বেশি দামেরটা না কিনে কম দামেরটা কিনছে। অন্যবার এই সময় ক্রেতার ভিড়ে জমজমাট থাকে। সাধারণ সময়ের চেয়ে বিক্রি কম। আড়াই হাজার-দুই হাজার টাকা দামের গাউনের চাহিদা বেশি।
মালিহা ফ্যাশন শাড়িজ-এর বিক্রেতা মো. শাহীন বলেন, বিক্রির কথা বলতে গেলে কষ্ট লাগে। এমন অবস্থা কখনো হয়নি। আমার জীবনে এত খারাপ পরিস্থিতি কখনো দেখিনি। ক্রেতাই মার্কেটে আসছে না। দেশের যে পরিস্থিতি মানুষ খাবে না পোশাক পরবে। মানুষের কাছে টাকা নেই। যারা নিচ্ছে তারা কম দামের শাড়ি নিচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। চার-পাঁচ হাজার টাকা দামের কোনো ক্রেতাই নেই, তাদের আমরা একেবারে পাচ্ছি না।
ফাবিহা ফ্যাশন হাউজের শাড়ির দোকানের বিক্রেতা রমজান বলেন, বাজার একবারে ভালো না। এখন দুপুর আড়াইটা বাজে সকাল থেকে একটাও বিক্রি করতে পারিনি। দাম শুনে চলে যাচ্ছে ক্রেতারা। দামি শাড়ির দিকে তো নজরই নেই কারও। কাশফিয়া ফ্যাশনের বিক্রেতা মনির বলেন, অন্য ঈদগুলোতে অনেক ভালো ছিল। এখন ১৩ রোজা চলে কিন্তু কোনো বিক্রি নেই। বিভিন্ন অফার দিয়েও ক্রেতা আসছে না। ক্রেতারা যারা আসছে তারা দাম শুনে বা তিনটার জায়গায় একটা পোশাক নিয়ে চলে যাচ্ছে। মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে একদম অচল হয়ে গিয়েছে। মানুষ পেটে খাবার দিবে নাকি নতুন নতুন পোশাক পরবে।
বৃষ্টি ফ্যাশনের দোকানি চান মিয়া বলেন, অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা ক্রেতার অপেক্ষায় বসে আছি। দুই-তিন মাস ধরে দোকান ভাড়াই দিতে পারি না। লোন করে খাচ্ছি। ব্যবসায়ীরা সবাই লসে আছে। দাম শুনে ক্রেতা চলে যাচ্ছে। আমাদের চালানটাও উঠবে না। মিডিয়াম দামের পোশাকও কেউ নিচ্ছে না। মাসে এই দোকানে ৭০-৮০ হাজার শুধু খরচ আছে কিন্তু আয় নেই। চিন্তা করেছিলাম ঈদে বিক্রি ভালো হবে সেটিও হচ্ছে না।
গাউছিয়া চিশতিয়া মার্কেটের লেস কর্নারের বিক্রেতা ফাহিম বলেন, ১০ শতাংশ বিক্রিও নেই এইবার। অন্যান্যবার মানুষ রমজানের শুরুতেই কামিজের ও বিভিন্ন জামার ডিজাইনের জন্য লেস কেনার জন্য দোকানে ভিড় জমায়। কিন্তু এখন সকাল থেকে বিকাল বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় দেখছি না। মানুষের টাকা নেই- কোথা থেকে কি করবে। এখন মানুষ খাবার পাচ্ছে না আর পোশাক দিয়ে কি করবে।
আমার ধারণা ছিল না, সাংবাদিকরা ও মন্দা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন না ।