ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, মঙ্গলবার, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শাবান ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

বেইলি রোড ট্র্যাজেডি

আগুনে প্রাণ গেল কুমিল্লার ৬ জনের

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে
৩ মার্চ ২০২৪, রবিবারmzamin

বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে মারা গেছে কুমিল্লার ৬ জন। এদের মধ্যে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মা-মেয়ে লুৎফুন নাহার ও তার মেয়ে জান্নাতুল তাজরী, লালমাই উপজেলার চরবাড়ী এলাকার আপন দুই বোন ফৌজিয়া আফরিন রিয়া ও সাদিয়া আফরিন আলিশা, তাদের খালাতো বোন সদর উপজেলার হাতিগাড়া এলাকার নুসরাত জাহান নিমু, মুরাদনগর উপজেলার গৃহিণী পম্পা পোদ্দার। তাদের মধ্যে ফৌজিয়া আফরিন রিয়া পড়াশুনার জন্য মালয়েশিয়া থাকতেন,  ছুটি কাটাতে দেশে এসেছিলেন। বাকি ৫ জন ঢাকায়ই বসবাস করেন।

লালমাই চরবাড়ী এলাকার নিহতদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১লা মার্চ রাতে রিয়ার মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। তাই আগেরদিন ২৯শে ফেব্রুয়ারি বোনদের নিয়ে গেছেন শপিংয়ে। তার খালাতো বোন আর খালার সঙ্গে দেখা করে ফেরার কথা। সেখানে গিয়ে আর ফেরেনি আমার দুই মা। যাওয়ার আগে বলেছিল বাবা আমরা তাড়াতাড়ি ফিরবো। একথা বলে কেঁদে উঠেন কোরবান আলী। তার মেয়ে ফৌজিয়া আফরিন রিয়া ও সাদিয়া আফরিন আলিশা বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন তাদের খালাতো বোন নুসরাত জাহান নিমুও। 

কুমিল্লার লালমাই উপজেলার পেরুল দক্ষিণ ইউনিয়নের চরবাড়িয়া এলাকার হাজী কোরবান আলীর মেয়ে তারা দু’জনে। ফৌজিয়া আফরিন রিয়া মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। আর সাদিয়া আফরিন আলিশা ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। একই ঘটনায় মারা গেছে, রিয়া ও আলিশার খালাতো বোন নুসরাত জাহান নিমু। নিমু সদর উপজেলার হাতিগড়া এলাকার আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে ও ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। তারা একই সঙ্গে শপিং করতে গিয়েছিল। ফাঁকে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে যায়।

নিহতদের বাবা কোরবান আলী বলেন, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে তারা এলাকায় এসেছিল। সে কয়েকদিন বাড়িতে থেকে চলে গেছে। শুক্রবার (১লা মার্চ) রাতে আমিসহ মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল। টিকিটও কেটেছিলাম। কিন্তু গত রাতেই সে মারা গেছে। নিমুও তাদের খালাতো বোন। একই সঙ্গে গিয়ে আর ফেরেনি। আবার কাকরাইলের বাসায় থেকে সে পড়াশোনা করতো। আমার ঘর আনন্দে ভরে থাকতো। আজ আমার ঘর শূন্য।
তিন বোনকে কুমিল্লায় তাদের গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টের ভবনের অগ্নিকাণ্ডে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজের সিনিয়র শিক্ষিকা লুৎফুন নাহার ও তার মেয়ে জান্নাতুল তাজরী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। লুৎফুন নাহার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নে কান্দুঘর গ্রামের খোকন মিয়ার স্ত্রী এবং জান্নাতুল তাজরী তার মেয়ে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, লুৎফুন নাহার ও তার মেয়ে জান্নাতুল তাজরী ২৯শে ফেব্রুয়ারি রাত ৯ টায় ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খাওয়ার জন্য যায়। পরে পরিবারের লোকজন আগুন লাগার খবর শুনে বেইলি রোডের সামনে গিয়ে খোঁজ-খবর নিলে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় তাদের খোঁজ মেলে।

এদিকে, দুই মেয়ের জন্য রাতের খাবার আনতে গিয়ে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে নিহত হয়েছেন পম্পা পোদ্দার (৪৬)। তিনি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর গ্রামের জয়ন্ত পোদ্দারের স্ত্রী। তিনি মাঝে-মধ্যে ধর্মীয় পূজা বা সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে আসতেন। গত তিনদিন আগেও নবীপুর গ্রামে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। বড় মেয়ে কানাডা থেকে দেশে এলে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে ঢাকায়, নাকি গ্রামের বাড়ি নবীপুরে পম্পা পোদ্দারের লাশ দাহ হবে।

নবীপুর গ্রামের জয়ন্ত পোদ্দার পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকেন। তিনি একটি প্রাইভেট অডিট ফার্মের মালিক। তার স্ত্রী পম্পা পোদ্দার একজন গৃহিনী। বৃহস্পতিবার রাতে পম্পা পোদ্দার বাসায় থাকা দুই মেয়ের জন্য বেইলি রোডের ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টেুরেন্ট থেকে রাতের খাবার আনতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। এই দম্পতির তিন মেয়ে। বড় মেয়ে প্রজ্ঞা পোদ্দার (২৫) কানাডায় লেখাপড়া করছেন। মেজো মেয়ে শ্রেয়া পোদ্দার (১৭) ও ছোট্ট মেয়ে শ্রেষ্ঠা পোদ্দার (১২) ঢাকায় লেখাপড়া করে।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status