অনলাইন
আদালতে নেয়া হয়েছে ট্রান্সকমের ৫ কর্মকর্তাকে, চাওয়া হবে রিমান্ড
স্টাফ রিপোর্টার
(৭ মাস আগে) ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ৩:৫৫ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:০২ পূর্বাহ্ন
ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানের শেয়ার জালিয়াতি, বিভিন্ন ব্যাংকে তার রেখে যাওয়া স্থায়ী আমানতের অর্থ আত্মসাৎ এবং জাল দলিল সৃজনের অভিযোগে আটক ট্রান্সকম গ্রুপের ৫ কর্মকর্তাকে আদালতে নেয়া হয়েছে। মামলার অধিক তদন্তের জন্য তাদের বিরুদ্ধে রিমান্ড চাইবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক আলাউদ্দিন বলেছেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এখন অধিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদেরকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে। আদালত কতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করবেন, না-কি তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করবেন এটা আদালতের ব্যাপার।
পিবিআইয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত লতিফুর রহমানের বড় মেয়ে সিমিন রহমানের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ, সম্পত্তি দখল ও অবৈধভাবে কোম্পানির শেয়ার হস্তান্তর করার অভিযোগ এনে ছোট মেয়ে শাযরেহ হক গুলশান থানায় এই মামলা করেছেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই গ্রুপটির শীর্ষ ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক শাযরেহ হক গুলশান থানায় তিনটি মামলা দায়ের করেন। শাযরেহ হক মামলায় তার বড় বোন সিমিন রহমান, তার মা ও ছেলেকে আসামি করেছেন। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই ট্রান্সকম গ্রুপের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন-প্রতিষ্ঠানের আইন উপদেষ্টা ফখরুজ্জামান ভুঁইয়া, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) কামরুল হাসান, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) আব্দুল্লাহ আল মামুন, ম্যানেজার আবু ইউসুফ মো. সিদ্দিক ও সহ-কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক।
এ বিষয়ে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহানুর রহমান বলেন, শাযরেহ হক বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার গুলশান থানায় উপস্থিত হয়ে তিনটি মামলা করেছেন। এসব মামলায় কোম্পানির শেয়ার ও অর্থসম্পদ নিয়ে প্রতারণামূলক বিশ্বাস ভঙ্গ এবং জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। পিবিআই এজাহারভুক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি বলেন, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে শাযরেহ হক মামলায় ১ নম্বর আসামি করেছেন ট্রান্সকম লিমিটেডের চেয়ারম্যান শাহনাজ রহমানকে। ২ নম্বর আসামি করেছেন লতিফুর রহমানের বড় মেয়ে এবং ট্রান্সকম গ্রুপের সিইও সিমিন রহমানকে। পরিবারের এ দুই সদস্যের বাইরে ট্রান্সকমের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স (আইন) বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. ফখরুজ্জামান ভুঁইয়া, পরিচালক (প্রাক্তন কোম্পানি সেক্রেটারি) মো. কামরুল হাসান ও পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) আবদুল্লাহ আল মামুনকেও আসামি করা হয়েছে।
শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগে করা মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে লতিফুর রহমানের বড় মেয়ে সিমিন রহমানকে। অন্য আসামিরা হলেন যথাক্রমে ট্রান্সকমের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স (আইন) বিভাগের নির্বাহী পরিচালক মো. ফখরুজ্জামান ভুঁইয়া, অ্যাসিস্ট্যান্ট কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ও কোম্পানি সেক্রেটারি অফিসের ম্যানেজার আবু ইউসুফ মো. সিদ্দিক।
আর জাল ডিড অব সেটলমেন্ট তৈরির অভিযোগে করা মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে প্রতিষ্ঠানের সিইও সিমিন রহমানকে। ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে ট্রান্সকমের চেয়ারম্যান শাহনাজ রহমানকে। এছাড়া মামলায় আসামি করা হয়েছে মো. ফখরুজ্জামান ভুঁইয়া, মো. কামরুল হাসান ও সিমিন রহমানের সন্তান যারাইফ আয়াত হোসেনকে।
ব্যাংকে রাখা স্থায়ী আমানত থেকে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে মামলার এজাহারে মরহুম লতিফুর রহমানের মেয়ে অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকাবস্থায় ২০২০ সালের ১ জুলাই কুমিল্লায় মারা যান তার বাবা লতিফুর রহমান। জীবিত থাকাবস্থায় প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ঢাকা, এইচএসবিসি ঢাকা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ আরো অন্যান্য ব্যাংকে তার নামীয় বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট ও এফডিআরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রেখে মারা যান। আমিসহ অন্য ওয়ারিশগণ আমার পিতার রেখে যাওয়া ১০০ কোটি টাকার মুসলিম শরিয়াহ আইন অনুযায়ী হকদার, কিন্তু লতিফুর রহমানের স্ত্রী ও বড় মেয়ে নিজেদের মধ্যে আত্মসাৎ করা অর্থ ভাগাভাগি করে নেন।
শেয়ার জালিয়াতির মামলায় শাযরেহ হক বলেছেন, আমার পিতা লতিফুর রহমান তার জীবদ্দশায় ট্রান্সকম লিমিটেডের ২৩ হাজার ৬০০টি শেয়ারের মালিক থাকা অবস্থায় মারা যান। তার ২৩ হাজার ৬০০টি শেয়ার থেকে আমাকে এবং আমার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে বঞ্চিত করার জন্য অবৈধভাবে নিজের নামে বেশি শেয়ার ট্রান্সফার করে হস্তগত করার হীন অসৎ উদ্দেশ্য গ্রহণ করেন। এক্ষেত্রে সিমিন রহমান ট্রান্সকম লিমিটেডের করপোরেট অ্যাফেয়ার্স নির্বাহী পরিচালক মো. ফখরুজ্জামান ভুঁইয়া, ট্রান্সকম লিমিটেডের করপোরেট ফাইন্যান্স পরিচালক (প্রাক্তন কোম্পানি সচিব) মো. কামরুল হাসান, ট্রান্সকম লিমিটেডের বর্তমান অ্যাসিস্ট্যান্ট কোম্পানি সেক্রেটারি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক, ট্রান্সকম লিমিটেডের কোম্পানি সেক্রেটারি অফিসের ম্যানেজার আবু ইউসুফ মো. সিদ্দিক-এ চারজনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা নেন। মামলার নথিতে বলা হয়, এভাবে জালজালিয়াতির মাধ্যমে দলিল হস্তান্তরসহ আরো গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার ট্রান্সফারের বিভিন্ন কাগজ আমার এবং আমার ভাইয়ের অজ্ঞাতসারে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে সৃজন করেন। আমার পিতার মৃত্যুর পর নিজের অ্যাকাউন্টে এ টাকা সরিয়ে ফেলেন।
স্বাক্ষর জাল করে দলিল সৃজনের অভিযোগ তুলে মামলার এজাহারে শাযরেহ হক অভিযোগ করেন, পিতার মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠানের সিইও ও চেয়ারম্যান ট্র্যান্সকম গ্রুপের শেয়ার ও পজিশন নিজেদের অনুকূলে হস্তগত করার উদ্দেশ্যে জালজালিয়াতির মাধ্যমে একটি ডিড অব সেটলমেন্ট তৈরি করেন, যেখানে আমার পিতার এবং আমার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে আসামিরা নিজেরাই স্বাক্ষর করেন। তারা আমার দুই পুত্র যোহেব আসরার হক এবং মিকাইল ইমান হকের স্বাক্ষর জাল করে নিজেরাই ডিড অব সেটলমেন্টে স্বাক্ষর করেন।