অনলাইন
শেয়ার জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাৎ মামলা
ট্রান্সকম গ্রুপের পাঁচ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার
অনলাইন ডেস্ক
(১ বছর আগে) ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, শুক্রবার, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৯:৩৭ অপরাহ্ন

সম্পত্তিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে করা মামলায় ট্রান্সকম গ্রুপের পাঁচজন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের বিভিন্ন সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন-ট্রান্সকম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স-আইন) মো. ফখরুজ্জামান ভূঁইয়া, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) কামরুল হাসান, পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) আবদুল্লাহ আল মামুন, সহকারী কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক ও ব্যবস্থাপক (কোম্পানি সেক্রেটারি) আবু ইউসূফ মো. সিদ্দিক।
এ বিষয়ে গুলশান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহানুর রহমান বলেন, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাযরেহ হক বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার গুলশান থানায় তিনটি মামলা করেছেন। এসব মামলায় কোম্পানির শেয়ার ও অর্থসম্পদ নিয়ে প্রতারণামূলক বিশ্বাস ভঙ্গ এবং জালিয়াতির অভিযোগ আনা হয়েছে। পিবিআই এজাহারভুক্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গুলশান থানা-পুলিশ জানায়, তিনটি মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচজনসহ মোট আটজনকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বাদী শাযরেহ হকের বড় বোন ও ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমান; তার মা ও ট্রান্সকম গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহনাজ রহমান এবং সিমিন রহমানের ছেলে ও ট্রান্সকমের হেড অব ট্রান্সফরমেশন যারেফ আয়াত হোসেনের নামও রয়েছে। পুলিশ আরও জানায়, মামলায় ১ নম্বর আসামি সিমিন রহমান, ২ নম্বর আসামি মো. ফখরুজ্জামান ভূঁইয়া, ৩ নম্বর আসামি মো. কামরুল হাসান, ৪ নম্বর আসামি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক এবং ৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে আবু ইউসুফ মো. সিদ্দিককে।
এদিকে লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে শাযরেহ হক স্বাক্ষরিত মামলার এজহারে বলা হয়েছে, আমার পিতা লতিফুর রহমান তার জীবদ্দশায় ট্রান্সকম লিমিটেডের ২৩,৬০০টি শেয়ারের মালিক থাকা অবস্থায় পহেলা জুলাই ২০২০ সালে মারা যান। আমিসহ অন্যান্য উত্তরাধীকারগণ উক্ত শেয়ারের মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী মালিক বটে। আমার পিতার উক্ত ২৩,৬০০টি শেয়ার থেকে ১নং আসামি আমাকে এবং আমার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে বঞ্চিত করার জন্য অবৈধভাবে নিজের নামে বেশি শেয়ার ট্রান্সফার করে হস্তগত করার হীন অসৎ উদ্দেশ্যে ২-৫ নং আসামিগণের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তিনটি ফর্ম ১১৭ (হস্তান্তর দলিল) সহ আরো গুরত্বপূর্ণ শেয়ার ট্রান্সফারের বিভিন্ন কাগজাদী আমার এবং আমার ভাইয়ের অজ্ঞাতসারে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে সৃজন করেন।
আমার পিতার মৃত্যুর পর জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজনকৃত ফর্ম ১১৭ (হস্তান্তর দলিল) সহ শেয়ার ট্রান্সফারের অন্যান্য কাগজাদি ৩নং আসামি রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস (আরজেএসসি) এ জমা প্রদান করেন। ১ নং আসামি থেকে অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে ৪ নং এবং ৫ নং আসামিগণ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজনকৃত তিনটি ফর্ম ১১৭-এ স্বাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন এবং ১-৫ নং আসামিগণ ষড়যন্ত্র করে পারষ্পারিক সহযোগিতায় আমার, আমার পিতার এবং আমার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের স্বাক্ষর জাল করে নিজেরাই ফর্ম ১১৭-এ স্বাক্ষর করেন।
আমার পিতা মারা যাবার পর প্রথমে ২নং আসামি ২৩/০৩/২০২৩ইং তারিখে এবং পরবর্তীতে ২নং এবং ৩নং আসামিগণ ১৪/০৫/২০২৩ইং তারিখে আমাকে জানায় যে, আপনার পিতা আপনিসহ আপনার ভাই বোনদের শেয়ার হস্থান্তর করে দিয়েছেন। পরবর্তীতে, আমি (আরজেএসসি) থেকে শেয়ার হস্তান্তর সংক্রান্ত দলিলাদির অনলাইন কপি ০২/০৯/২০২৩ইং তারিখে সংগ্রহ করি। উক্ত অনলাইন দলিলাদি অনুযায়ী গত ১৩/০৬/২০২০ইং তারিখে আমার পিতা আমাকে ৪,২৭০টি শেয়ার, আমার ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে ৪,২৭০টি শেয়ার এবং ১নং আসামিকে ১৪,১৬০টি শেয়ার হস্তান্তর করেছেন মর্মে ৩নং আসামি শেয়ার হস্তান্তর সংক্রান্ত দলিলাদি দাখিল করেছেন। কিন্তু কোন সময়ই আমি কিংবা আমার ভাই উক্ত হস্তান্তর সংক্রান্ত ফরম-১১৭ (হস্তান্তর দলিল)-এ সই কিংবা টিপসই প্রদান করিনি। অধিকন্তু, আমার পিতা তার জীবদ্দশায় কখনো হস্তান্তর সংক্রান্ত ফরম-১১৭ (হস্তান্তর দলিল)-এ সই কিংবা টিপসই প্রদান করেননি। ট্রান্সকম লিমিটেডে থাকা আমার পিতার ২৩,৬০০টি শেয়ার মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী তার উত্তারিধাকারিদের মধ্যে বণ্টন না করে ১নং আসামি নিজের নামে বেশি শেয়ার হস্তগত করার উদ্দেশ্যে এবং ২-৫ নং আসামিগণ ১নং আসামি থেকে অবৈধ লাভের উদ্দেশ্যে উপরিউল্লিখিত শেয়ার হস্তান্তর কাগজাদি জাল-জালিয়াতি করে আরজজেএসসি-তে জমা প্রদান করেন। আসামিগণের এমন অসৎ ও অসাধু উপায় অবলম্বন করে আমাকে এবং আমার ভাইকে আমার পিতার ন্যায্য শেয়ার থেকে বঞ্চিত করার জন্য জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আমাদের স্বাক্ষর জাল করে আপরাধ সংগঠন করিয়াছেন।
উপরোক্ত জাল-জালিয়াতি উল্লেখ করে আমার নিয়োজিত আইনজীবীর মাধ্যমে আসামিগণকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানোর পরও আসামিগণ কর্ণপাত করেনি। যেহেতু, আসামিগণ অত্র থানার আওতাধীন ১নং আসামির বর্তমান ঠিকানায় অবস্থান করে অপরাধ সংগঠন করেছেন তাই উপরোক্ত বিষয়ালীর প্রেক্ষিতে অত্র থানার শরণাপন্ন হয়েছি। অতএব, অভিযোগকারী হিসেবে আসামিদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে প্রচলিত সংশ্লিষ্ট আইনের আওতায় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় অত্র অভিযোগ দায়ের করলাম এবং উপরোক্ত বিষয়ে অত্র থানায় আসামিদের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থা নিতে সদয় মর্জি হয়।