ঢাকা, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, বুধবার, ১ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ রবিউস সানি ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

'বাংলাদেশে নির্বাচন ভোটারদের নয়, শাসকদের উৎসব'

মানবজমিন ডিজিটাল

(১০ মাস আগে) ৩০ নভেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ২:৪৯ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

mzamin

বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের  জন্য চাপ দিচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দাবি নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে বিরোধী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)- এর উপর "হিংসাত্মক স্বৈরাচারী দমনপীড়ন" বাড়ছে । ২৮ অক্টোবর থেকে কমপক্ষে ১০ হাজার  বিরোধী কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং অনেক তৃণমূলস্তরের কর্মী গ্রেপ্তার এড়াতে তাদের বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে  কখনো নৌকার মধ্যে আবার কখনোবা প্রত্যন্ত অঞ্চলে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধীদের বিরুদ্ধে সহিংসতায়  উসকানি দেয়ার অভিযোগ করছে। সাংবাদিকদের হাতে অনেকগুলি "ভৌতিক মামলা" এসেছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে বিএনপি নেতারা যারা ইতিমধ্যেই মৃত বা এখন বিদেশে বসবাস করছেন, তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় সহিংসতার অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না এই অভিযোগ তুলে নির্বাচন বয়কট করছে বিএনপি। দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামপন্থী বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীকে (জেআই) নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা দেয়া হয়েছে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। আ.লীগ সরকার যুক্তি দেয় যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার অসাংবিধানিক। সংসদের বর্তমান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জেপি),  যাকে স্থানীয়ভাবে ''ক্ষমতাসীন দলের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বিরোধী দল" বলে উপহাস করা হয় তারা নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত। আওয়ামী লীগ ও জাপা ছাড়াও আরও কয়েকটি রাষ্ট্র সমর্থিত ছোট দল নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। উপরন্তু, হাসিনা সম্প্রতি তার দলের লোকদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেন কেউ জয়ী হতে না পারে সেজন্য ডামি প্রার্থী দিতে।  প্রধান বিরোধী দলগুলির অনুপস্থিতি সত্ত্বেও আগামী নির্বাচনকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক করাই এর উদ্দেশ্য।

২০২৪ সালের নির্বাচন আরেকটি অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন হতে চলেছে । ২০১৪ সাল থেকে আ.লীগ শাসনামলে অনুষ্ঠিত প্রতিটি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটি ঘটেছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনগুলি যেগুলি আ.লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা ব্যাপকভাবে একতরফা, কারচুপি এবং ত্রুটিপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। ব্যালট বাক্স ভর্তি ছিল এবং হাজার হাজার ফ্যান্টম ভোটার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রিয়াজ ফরেন অ্যাফেয়ার্সে লিখেছেন, হাসিনার আমলে বাংলাদেশ স্বৈরাচারী শাসনে পরিণত হয়েছে। আরও একটি “ নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন”-এর পটভূমিতে, যেখানে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল বিশ্বাসযোগ্য বিরোধী দল ছাড়াই জয়ী হতে চলেছে এবং শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার পরিচালনা করবেন, এখানে একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন হলো- বাংলাদেশ সরকারের  নির্বাচন নিয়ে এতো মাথাব্যথা কেন ? নির্বাচন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে একটি সত্যিকারের প্রতিযোগিতার মতো। যেখানে লোকেরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে পছন্দের নেতা নির্বাচন করেন। তবে  বিশ্লেষক ও বিরোধীদলীয় নেতারা বলছেন, বাংলাদেশ আবারো একটি অস্বচ্ছ  নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ।

বিশ্বের অন্যত্র কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রে নির্বাচন নিয়ে গবেষণা করেছেন এমন গবেষকরা কেন কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলি নির্বাচন করে সে সম্পর্কে চমকপ্রদ ব্যাখ্যা  দিয়েছেন এবং এই উত্তরগুলি বাংলাদেশে কী ঘটছে তা বোঝার জন্য দরকারী। অস্ট্রেলিয়ান গবেষক লি মরজেনবেসার তার বই  “Behind the Façade:  Elections under Authoritarianism in Southeast Asia,”-তে যুক্তি দিয়েছেন যে, কর্তৃত্ববাদী শাসন দ্বারা পরিচালিত  নির্বাচনগুলি কর্তৃত্ববাদী শাসকদের শাসনব্যবস্থাকে বৈধতা প্রদান করে এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুপস্থিতির ফলে যে কোনো গণবিক্ষোভের বিরুদ্ধে তাদের পিছু হটতে সাহায্য করে ।বাংলাদেশে, হাসিনার আওয়ামী লীগের কিছু জনসমর্থন রয়েছে এবং নির্বাচনগুলি ত্রুটিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও, তাকে শাসন করার বৈধতা দিয়েছে। ভারত, চীন এবং রাশিয়ার শক্তিশালী কূটনৈতিক সমর্থনের জন্য হাসিনা দুটি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলি নির্বাচনে কারচুপি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কিন্তু এই ধরনের সমালোচনা পর্যাপ্ত ছিলো না  এবং সরকারগুলি অবশেষে হাসিনার সাথে কাজ করেছে। তাই নির্বাচন বাংলাদেশের সরকারকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বৈধতা প্রদান করেছে।

ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন স্থিতিশীলতার উদ্দেশ্যেও কাজ করে।  হাসিনা সরকারের প্রতি সমর্থনের ন্যায্যতা দিতে  ভারত এই পয়েন্টটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। এই প্রেক্ষাপটে স্থিতিশীলতা বলতে কী বোঝায় তা বিতর্কের বিষয় হতে পারে, তবে গবেষকরা বলছেন যে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে নির্বাচন সাধারণত শাসকদের নিরাপত্তা প্রদান করে। হেনরিখ বোল ফাউন্ডেশনের একজন রিসার্চ ফেলো আমরো আলি, যিনি কর্তৃত্ববাদী মধ্যপ্রাচ্যের সমাজে নির্বাচন নিয়ে গবেষণা করেন, দ্য ডিপ্লোম্যাটকে বলেছেন -'' যেহেতু স্বৈরাচারী শাসকরা অভিজাত ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তাদের সমর্থন লাভ করে, তাই একটি নির্বাচন শাসককে সুরক্ষিত করার জন্য কাজ করে এবং স্থিতিশীলতার শর্তে একটি পূর্বনির্ধারক হিসেবে কাজ করে। " তিনি বলেন, একটি নির্বাচন শাসকদের "নিজস্ব সরকারে রদবদল করার এবং ভেতর থেকে যেকোনো সম্ভাব্য হুমকি দূর করার সুযোগ দেয়"।

প্রকৃতপক্ষে, ২৯৮টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করার সময়, আওয়ামী লীগ তাদের বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে ৭১ জনকে পুনরায় মনোনয়ন দেয়নি। মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে আমরো বলেছিলেন যে ''এই ধরনের রদবদল একটি বিভ্রম তৈরি করে , যাতে জনসাধারণ মনে করে দেশটি একটি পুনঃস্থাপনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।"তাদের বই "স্পিন ডিক্টেটরস: দ্য চেঞ্জিং ফেস অফ টাইরানি ইন দ্য টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি" -তে লেখক সের্গেই গুরিভ এবং ড্যানিয়েল ট্রিসম্যান উল্লেখ করেছেন -''আধুনিক দিনের স্বৈরাচারী শাসকরা গণতান্ত্রিক হওয়ার ভান করে। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতি বৈশ্বিক সমর্থন  বেড়ে যাওয়ায়, এই 'স্পিন ডিক্টেটররা' গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকে আলিঙ্গন করার ভান করে। '' বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন " স্পিন ডিক্টেটরদের'' ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে । বাংলাদেশে নির্বাচন ভোটারদের নয়, শাসকদের উৎসব।

সূত্র : thediplomat
লেখক : মুবাশ্বের হাসান, একজন সিডনিভিত্তিক পণ্ডিত এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির বিশ্লেষক।

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

সম্পর্ক নষ্টের আশঙ্কা নাকচ পররাষ্ট্র উপদেষ্টার/ হাসিনার হাতে ভারতের ট্রাভেল পাস, অন্যত্র আশ্রয়ের ব্যর্থ চেষ্টা

সাবেক পুলিশ কর্মকতা মনিরুল/ আমি যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারি

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status