ঢাকা, ৯ মে ২০২৫, শুক্রবার, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

আশুলিয়ায় তিন খুন

কবিরাজ সেজে বাসায় প্রবেশ করে সিরিয়াল কিলার

স্টাফ রিপোর্টার

(১ বছর আগে) ৩ অক্টোবর ২০২৩, মঙ্গলবার, ৫:১৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৩:৩৩ অপরাহ্ন

mzamin

ঢাকার আশুলিয়ায় কবিরাজ সেজে বাসায় প্রবেশ করে একই পরিবারের তিনজনকে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- কথিত কবিরাজ ও সিরিয়াল কিলার সাগর আলী (৩১) ও তার স্ত্রী ইশিতা বেগম (২৫)। সোমবার দিবাগত রাতে গাজীপুরের শফিপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৪ এর একটি দল। গ্রেপ্তার সাগর টাঙ্গাইলের মোবারক ওরফে মোগবর আলীর ছেলে। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যাকাণ্ডের সময় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে লুট করা আংটি।

র‌্যাব বলছে, ভুক্তভোগী গৃহকর্তা ও তার পরিবারের সদস্যদের ৯০ হাজার টাকা চুক্তিতে শারীরিক চিকিৎসার কথা বলে কবিরাজ সেজে বাসায় প্রবেশ করে ইসবগুলের শরবতের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। তারপর বাসায় তল্লাশি চালিয়ে চাহিদামত কিছু না পেয়ে একে একে তিনজনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, নিহত মোক্তার হোসেন ও তার স্ত্রী সাহিদা বেগম আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তাদের সন্তান মেহেদী হাসান জয় স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শিক্ষার্থী। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সাভারের আশুলিয়া জামগড়া এলাকায় বহুতল ভবনের ৪র্থ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে ভবনের অন্য ভাড়াটিয়ারা বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানায়। পরে ফ্ল্যাট থেকে মোক্তার, তার স্ত্রী সাহিদা ও তাদের ১২ বছরের শিশু সন্তান মেহেদীর অর্ধগলিত গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের পর রোববার আশুলিয়া থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা হয়। 

কমান্ডার মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দম্পতি র‌্যাবকে জানিয়েছে, গত ২৮ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার সাগর সাভার বারইপাড়া এলাকার একটা চায়ের দোকানে চা খাওয়ার সময় মোক্তারকে পাশের একটি কবিরাজি ও ভেষজ ওষুধের দোকানে তার শারীরিক সমস্যার বিষয়ে চিকিৎসা নিয়ে কথা বলতে দেখে। সাগর জানতে পারে, মোক্তার ওই দোকানে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসা বাবদ ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ করেও কোনো ফলাফল পাননি। সাগর কৌশলে মোক্তারকে ডেকে নিয়ে আলাপচারিতায় ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার প্রতি তার আগ্রহ ও আস্থার কথা জানতে পারে। মোক্তার ও তার পরিবারের বেশ কিছু শারীরিক সমস্যার কথাও সাগরকে জানান। 

সাগর জানায়, তার স্ত্রী একজন ভালো কবিরাজ এবং সে তার সমস্যার সমাধান করে দেবে। এমন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কথাবার্তার এক পর্যায়ে ৯০ হাজার টাকার চুক্তি করেন। সাগর ও তার স্ত্রী পরদিন (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ওষুধসহ তার বাসায় গিয়ে চিকিৎসা করবে বলে জানায়। যোগাযোগের জন্য মোক্তারকে সাগর নিজের নম্বর না দিয়ে এক আত্মীয়ের মোবাইল নম্বর দেয়। বাসায় গিয়ে সাগর স্ত্রী ঈশিতাকে পুরো ঘটনা ও পরিকল্পনার কথা জানায়। বিপুল অঙ্কের অর্থ পাওয়ার আশায় রাজি হয় সাগরের স্ত্রী। তারা পরিকল্পনা করে, ভুক্তভোগী মোক্তারের বাসায় গিয়ে ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার কথা বলে তার পরিবারের সবাইকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাদের অর্থসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট করবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাগর গাজীপুরের মৌচাক এলাকার একটি ফার্মেসি থেকে এক বক্স ঘুমের ওষুধ ক্রয় করে।

মঈন বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে গ্রেপ্তার সাগর ও তার স্ত্রী গাজীপুরের মৌচাক থেকে মোক্তারের সঙ্গে জামগড়া মোড়ে সাক্ষাৎ শেষে বাসায় যান। সেখানে প্রাথমিক পরিচয়ের পর গ্রেপ্তার সাগরের স্ত্রী ঈশিতা তাদের সমস্যার কথা শুনে এবং ইসবগুলের শরবতের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ মিশিয়ে তাদের ভেষজ ও কবিরাজি চিকিৎসার ওষুধ বলে খাওয়ায়। মোক্তার, তার স্ত্রী ও ছেলে ঘুমের ওষুধের প্রভাবে ঘুমিয়ে পড়লে সাগর ও তার স্ত্রী মিলে প্রথমে মোক্তারের কক্ষে গিয়ে মোক্তারের হাত ও পা বাঁধে, পরে মোক্তারের স্ত্রীর হাত-পা বাঁধে। পরে তারা মোক্তারের মানিব্যাগ, তার স্ত্রীর পার্স ও বাসার অন্য স্থানে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রীর জন্য তল্লাশি করে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বটি দিয়ে প্রথমে মোক্তারের গলায় উপর্যুপরি কোপ দিয়ে হত্যা করে সাগর। পরে অন্য কক্ষে গিয়ে ছেলে ও স্ত্রীকে একই বটি দিয়ে পর্যায়ক্রমে কুপিয়ে হত্যা করে। পালানোর আগে তারা মোক্তারের হাতে থাকা আংটি খুলে নিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের পর  তারা ভিন্ন পথে রিকশাযোগে গাজীপুরের মৌচাকে তার শ্বশুরবাড়ি যায় এবং সেখানেই অবস্থান করতে থাকে। ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচারের পর তারা আত্মগোপনে চলে যায়। পরে আত্মগোপনে থাকাকালেই গাজীপুরের শফিপুর এলাকা থেকে তাদের গত রাতে গ্রেপ্তার হন। 

২০২০ সালে একই কায়দায় টাঙ্গাইলে চার হত্যা করেছে সাগর: গ্রেপ্তার সাগর সম্পর্কে কমান্ডার মঈন বলেন, সে মাদকাসক্ত এবং বিভিন্ন পেশার আড়ালে চুরি ও ছিনতাই করতো। ২০২০ সালে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২০০ টাকার জন্য একই পরিবারের চার জনকে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে একই কায়দায় গলা কেটে হত্যায় অভিযুক্ত সাগর। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাগর র‌্যাব-১২ কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়ে সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করে। ২০২৩ সালের জুন মাসে জামিন পেয়ে গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় তার শ্বশুরের ভাড়া বাসায় কিছুদিন অবস্থান করে। দীর্ঘদিন জেলহাজতে থাকায় তার আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় সে রাজমিস্ত্রি, কৃষি শ্রমিকসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে ঢাকা, সিলেট ও টাঙ্গাইলে অবস্থান করে সুযোগ বুঝে চুরি ও ছিনতাই করতো। একটি জেলায় বেশ কিছুদিন অবস্থানের পর স্থান পরিবর্তন করে অন্য জেলায় আশ্রয় নিত সাগর। এছাড়াও সে অবৈধ পথে পার্শ্ববর্তী দেশে জুলাই মাসে গিয়ে ২০-২৫ দিন অবস্থান করে এবং আগস্ট মাসে দেশে ফিরে কুমিল্লায় কিছুদিন অবস্থান করে। গ্রেপ্তার দম্পতির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের এ কর্মকর্তা।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মঈন বলেন, গ্রেপ্তার সাগর কিন্তু চিহ্নিত সন্ত্রাসী না বা শীর্ষ সন্ত্রাসীও না। তবে সাগর আমাদের জানিয়েছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল তাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে।  
 

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status