অনলাইন
মধ্যরাতে ভাঙচুর
মদের বারেও ডিসকাউন্ট পেতো তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগ!
স্টাফ রিপোর্টার
(১ বছর আগে) ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

সরকারি তিতুমীর কলেজের পাশেই অবস্থিত জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনাল বার। কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে মাঝেমধ্যে যেতেন। তাদের জন্য ছিল বিশেষ ডিসকাউন্ট! অ্যালকোহল নিলেও এই ডিসকাউন্ট দিতো বার কর্তৃপক্ষ। ছাড় পেয়ে খুশিও হতেন নেতাকর্মীরা। তারপরও গত রোববার মধ্যরাতে বারে ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বারের জেনারেল ম্যানেজার খোকন চৌধুরী জানান, বারে একটি টেবিলে স্থানীয় ৩ থেকে ৪ জন অতিথি ও অন্য টেবিলে তিতুমীর কলেজের কিছু অতিথি ছিল। তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে তিতুমীর কলেজের অতিথিরা হলের ছেলেদের ফোন করে আনে। তারা এসে বার ভাঙচুর করে মদের বোতল ও ক্যাশ টাকা নিয়ে যায়। তিনি বলেন, বারে ছাত্রলীগ কখনো কোনো মাসোয়ারা চায় না। তবে তারা এখানে এসে ডিসকাউন্ট চায়। আমরা তাদের ১০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দেই। তারা এতে খুশি থাকে।
বার কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত শনিবার রাত ১১টার দিকে বারে মদপান করতে যায় তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের কয়েক নেতাকর্মী। মদ্যপান শেষে পাশের টেবিলে বসা স্থানীয়দের সঙ্গে গালাগাল হয় ছাত্রলীগের। পরে ছাত্রলীগ ছাত্রাবাস থেকে অন্য ছাত্রলীগ নেতাদের কল করে বারে নিয়ে আসে। তখন ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী সেখানে গিয়ে বারের ফটক তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে ভাঙচুর করে। ছাত্রলীগ নেতারা ৭৫ ইঞ্চি একটি টিভি, ২০ থেকে ২৫টি চেয়ার ভাঙচুর করে। বারে থাকা প্রায় চার লাখ টাকার ৪০ বোতল ফরেন হুইস্কি লুট করে নিয়ে যায় এবং প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকার ৮০ বোতল কেরুর মদ লুট করে। এ ছাড়া বারে থাকা ক্যাশ থেকে কয়েক লাখ টাকাও নিয়ে যায়। এতে সর্বমোট বারের ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই ঘটনায় বনানী থানায় ৫ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ জনকে আসামি করা হয়।
এই ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানান বনানী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, মদ্যপ অবস্থায় বারের ভেতর দুই টেবিলে বসা গেস্টদের সঙ্গে গালাগালি হয়। একপর্যায়ে তিতুমীর কলেজের হলের ছেলেদের ফোন দিয়ে বারে আনে এক গ্রুপ। তারা এসে বার ভাঙচুর করে। এতে বার কর্তৃপক্ষের ৮-১০ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আমরা ১০-১২ জনকে শনাক্ত করেছি। তারা সবাই তিতুমীর কলেজের হলের ছাত্র। তারা ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে যেতো।
সূত্র বলছে, ওইদিন রাতে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান সাগরের নেতৃত্বে, সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন রাহুল, সুলতান ও শাওন, সহ-সম্পাদক শাওন ও সাব্বির, উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নিলয় কুমার সেন, উপ-গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক বিজয় আহমেদ খালিদ, উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাসেল, উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক রিয়াদ মুন্সি, উপ-যোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক বাদশা সাব্বির, উপ-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মামুন এবং কর্মী কাউসার ও শাহিন মাতব্বর হামলায় অংশ নেন। তারা শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রিপন মিয়ার সমর্থক। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে কলেজটির আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসে। ইতিমধ্যে অভিযুক্তসহ অনেকেই ছাত্রাবাস ছেড়ে অন্যত্র গিয়েছেন বলে ছাত্রলীগ সূত্র জানিয়েছে। তারা জানান, অজ্ঞাতনামা ৫০ জনকে আসামি করায় ভীতি কাজ করছে ছাত্রাবাসের অনেকের মধ্যে। তাই তারা ছাত্রাবাস ছেড়েছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি রিপন মিয়া মানবজমিনকে বলেন, ওই বারে কি হয়েছে সেটা আমি দেখিনি। ঘটনা রাতের। পরে আমরা শুনেছি। রাতে আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুমে থেকে স্বপ্নে যদি কাউকে বলে থাকি তাহলে তো কিছু করার নাই। তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক জুয়েল মানবজমিনকে বলেন, এসব ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। সেখানে অভিযুক্তদের নাম দেয়া আছে। যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক। কারণ ব্যক্তির দায় ছাত্রলীগ নেবে না। তাছাড়া আমরা এই ঘটনা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে জানিয়েছি। ঘটনা প্রমাণিত হলে তারা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবে।