ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শনিবার, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

তিন এমপিকে নিয়ে যে আলোচনা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবারmzamin

মনোনয়ন-প্রার্থিতা এসব নিয়ে সাধারণের মধ্যে আলোচনা কমই। সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিচরণও উল্লেখ করার মতো নয়। ফলে অনেকটাই নিরুত্তাপ ভোটের মাঠ। তবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারদলীয় প্রভাবশালী সংসদ সদস্যরা সেই নীরবতা ভেঙে জানান দিচ্ছেন তাদের প্রার্থিতার। চাইছেন ভোট। গণসংযোগ বাড়িয়েছেন এলাকায়। দলের নেতাকর্মীরাও নিশ্চিত আসছে নির্বাচনে মনোনয়ন তাদেরই থাকবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৬টি আসনের মধ্যে ৩টি আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট এই প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা সর্বত্র। এসব আসনে দলের মনোনয়ন পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখছেন না দলীয় নেতা-কর্মীরা। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪। কসবা ও আখাউড়া উপজেলা নিয়ে এই সংসদীয় আসনের বর্তমান এমপি এডভোকেট আনিসুল হক। তিনি আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতি সপ্তাহেই আসছেন এলাকায়। সপ্তাহে অন্তত ২ দিন এলাকা সফর করছেন। আগস্ট মাসে একাধারে ৩দিনও এলাকায় কাটিয়েছেন। এ সময় নানা কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ভোট চেয়েছেন তার জন্যে। গত ১৫ই আগস্ট কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনায় বক্তৃতা করতে গিয়ে আনিসুল হক বলেন- এলাকার মানুষের সঙ্গে আমি মন্ত্রী বা এমপি’র মতো ব্যবহার করিনি। তাদের সন্তানের মতোই ব্যবহার করেছি। আজকে সেই সন্তানের দাবি নিয়ে জিজ্ঞেস করতে চাই, আগামী নির্বাচনে আমি আপনাদের কাছে বঙ্গবন্ধু কন্যার আওয়ামী লীগের নৌকা নিয়ে প্রার্থী হবো। আপনারা আমাকে ভোট দেবেন কিনা। হাত উঁচিয়ে সবাই সম্মতি জানালে মন্ত্রী তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন- আজকের হিসাবে ১৫২৫ জনকে আমি সরকারি চাকরি দিয়েছি। সাড়ে ৭শ’ জনকে নকলনবিশ বানাইছি। এবং আরও কতো যে কাজ করেছি...। আমি আপনাদের সেবা করতে চাই, আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই। আমি আপনাদের সন্তান হিসেবে আপনাদের দেখভাল করতে চাই। আমি আশা করবো সেই অধিকারটুকু দেবেন।

কসবা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট রাশেদুল কাউসার ভূঁইয়া জীবন বলেন- এখানে এডভোকেট আনিসুল হক একক প্রার্থী। অন্য কেউ এখানে আসে না। ফলে তার মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমরা শতভাগ নিশ্চিত। তবে সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট মো. শাহ আলমের সমর্থকরা জানান- নির্বাচনের জন্যে শাহ আলমেরও প্রস্তুতি রয়েছে। তিনি সবার সঙ্গে  যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। ঢাকায় মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা-তদবির করছেন। এডভোকেট শাহ আলম ছাড়াও মনোনয়ন চান আওয়ামী লীগের বাণিজ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য একেএম বদিউল আলম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নারায়ণ সাহা মনি, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়।  

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর উপজেলা)। এটি সদর আসন হিসেবে পরিচিত। বর্তমান সংসদ সদস্য র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এলাকাতেই বেশী সময় পার করছেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মোক্তাদির চৌধুরী ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করে প্রশাসনের নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব এবং ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব হিসেবে ওই মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম থেকে শেষ দিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৫ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে আবারো সক্রিয় হন রাজনীতিতে। ২০১১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। এরপর দশম এবং একাদশ সংসদ নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং সরকারি হিসাব সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য। ২০১৪ সাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মোকতাদির চৌধুরী। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পদক মো. মনির হোসেন বলেন- সামগ্রিক বিবেচনায় তার মনোনয়ন পাওয়া নিশ্চিত। সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের কাছে তিনিই একক প্রার্থী। আগামী নির্বাচনে আবারো তাকে বিজয়ী করার জন্যেই আমাদের সকল কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে।  জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাবেক মেয়র মো. হেলাল উদ্দিন বলেন- মোকতাদির চৌধুরীর বিকল্প এখানে কেউ নেই। 

বাঞ্ছারামপুর আওয়ামী লীগের কিংবদন্তী নেতা ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম (অব.)। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসন এটি। এই আসনেও তাজের মনোনয়নই শেষ কথা বলে জানান দলের নেতাকর্মীরা। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবারো এমপি নির্বাচিত হন তিনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও  জয়ী হন তিনি। দলের নেতাকর্মীরা জানান- উন্নয়নে বাঞ্ছারামপুরের আদিগন্ত বদলে দিয়েছেন ক্যাপ্টেন তাজুল ইসলাম। যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন তিনি। ওয়াই সেতু নির্মাণ করে ৩ উপজেলার সংযোগ ঘটিয়েছেন। তার প্রচেষ্টায় নির্মিত হচ্ছে আড়াইহাজার-বাঞ্ছারামপুর-নবীনগর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া আঞ্চলিক মহাসড়ক। ১৫শ’ কোটি টাকার এই প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছে। এছাড়াও সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকায় কড়ুইকান্দি-বিশনন্দীর মধ্যে তৃতীয় মেঘনা সেতু নির্মিত হবে। ব্যক্তিগত ভাবে ৭টি স্কুল এবং ২টি কলেজ প্রতিষ্ঠা ছাড়াও সরকারি অর্থে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন তিনি। ক্যাপ্টেন  তাজ ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। উন্নয়নের পাশাপাশি সাংগঠনিক কর্মতৎপরতায় দলকেও অনেক শক্তিশালী করেছেন তিনি। ২৯ হাজার স্কয়ার ফিটের আওয়ামী লীগের দৃষ্টিনন্দন ৬তলা অফিস ভবনের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হচ্ছে তার উদ্যোগে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন- ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম বর্তমান এমপি। আগামী নির্বাচনে তার বিকল্প কাউকে আমরা দেখি না। কারণ বাঞ্ছারামপুরকে উন্নয়নে উন্নয়নে বদলে দিয়েছেন তিনি। তাকেই আমরা আবারো প্রার্থী হিসেবে পেতে চাই।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status