ঢাকা, ১১ মে ২০২৫, রবিবার, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

সিলেটে পাথর লুট, ক্ষুব্ধ রিজওয়ানা

স্টাফ রিপোর্টার
১১ মে ২০২৫, রবিবার
mzamin

৫ই আগস্টের পর থেকে সিলেটে ব্যাপকহারে পাথর লুট হচ্ছে এমন মন্তব্য করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ৪ বছর সিলেটের পাথর উত্তোলন বন্ধ রেখেছি। কিন্তু ৫ই আগস্টের পরে সেখানে ব্যাপক লুটপাট হচ্ছে। আমরা চিঠি দিলে স্থানীয় প্রশাসন বলে এগুলো ইজারার বাইরে। কিন্তু পাথর উত্তোলন বন্ধ করা যাচ্ছে না। গতকাল প্রবাসী কল্যাণ ভবনে সিলেটের বন্যা ও করণীয় শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জালালাবাদ অফিসার্স এসোসিয়েশন ওই সেমিনারের আয়োজন করে। 

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, আমরা বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় দেশের নদীগুলো পরিষ্কার করার উদ্যোগ নিয়েছি। নদীগুলো দখলমুক্ত করাসহ দূষণমুক্ত করতে আমরা কর্মপরিকল্পনা করে দিয়ে যাবো। পরবর্তী সরকার তা বাস্তবায়ন করবে। তিনি বলেন, আমি বৃহত্তর সিলেটের সন্তান। আমি হবিগঞ্জের মেয়ে। সিলেটের নদী ভাঙন, বন্যা- এসব সমস্যা আছে। কিন্তু এক্টিভ ডেল্টার কারণে আমাদের বন্যার সুবিধারও আছে। বাংলাদেশে ৫২ মিলিয়ন মানুষ বন্যার ঝুঁকির মধ্যে থাকে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকির মধ্যে ১০ নাম্বারে আছে। আর বন্যা সংক্রান্ত ঝুঁকির মধ্যে ৭ নাম্বার ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। সত্যিকার অর্থে আমরা যদি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে চাই আর আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের ক্ষমতায়নের দিক থেকে পিছিয়ে রাখি- তা হবে না।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য আমাদের পূর্বাভাসটা সহজে পাওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। আমরা ইউকে মেট অফিসের সঙ্গে পার্টনারশিপের চেষ্টা করছি। তারা যেন আমাদেরকে অঞ্চলভিত্তিক বন্যার তথ্য আগে থেকে দিয়ে সহায়তা করে। আমরা যাতে পূর্বাভাসটা সঠিক সময়ে পেয়ে যাই। তাদের যে উচ্চমানের তথ্য সংরক্ষণাগার আছে, সেখানে যেন তারা আমাদেরকে এক্সেস দেন। তাহলে আমাদের যে ঘাটতি রয়ে গেছে, সেটা অনেকাংশে কাটিয়ে উঠতে পারবো। এখনো পর্যন্ত আলোচনা চলছে। দ্রুতই আমরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে উপনীত হবো।

তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মধ্যে বন্যার ঝুঁকি আমাদের কর্মকাণ্ড দিয়ে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। বন্যাকে আমরা হয়তো আটকাতে পারবো না। কিন্তু জীবাশ্ম জ্বালানির এবং অন্যান্য যেসব উৎস থেকে আমাদের জলবায়ু পরিবর্তন করছে সেখানে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রাথমিকভাবে ১১টা নদী পরিষ্কার করার পরিকল্পনা করেছি। বিভিন্ন বিভাগ থেকে ১টা করে, ঢাকার ৪টা, এবং কক্সবাজারের বাঁশখালী নদী। আমরা বুড়িগঙ্গা নদী পরিষ্কার করার পরিকল্পনা করলেও তা থেকে আপাতত সরে এসেছি এ নদীতে ৩ থেকে ৫ ফিট প্লাস্টিক রয়েছে। এত বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক উত্তোলনের পর রাখবো কোথায়? এগুলো ম্যানেজম্যান্ট করতে হবে। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে আমরা তুরাগ নদীর কাজ প্রথমে শুরু করবো। দেখা যাক আমরা কতোটুকু আগাতে পারি। এ সময় তিনি বলেন, আমরা প্রকৃতির যতটুকু ক্ষতি করেছি তা থেকে বের হয়ে ভবিষতে যেন এগুলো না করা হয় সেজন্য নাগরিক সমাজসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে পরিকল্পনার অভাব। আমরা কোনো পরিকল্পনা গ্রহণের পূর্বেই লাভবান হওয়ার চিন্তা করলে কাজ হবে না। আবার, সৎ উদ্দেশ্য থাকলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে সফল হওয়া যায় না। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি দৈনিক মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আমাদের সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে। এটা দুঃখজনক যে, সিলেটের জন্য তেমন বরাদ্দই হয় না। আবার বরাদ্দ হলেও বাস্তবায়নের অভাবে তা ফেরত যায়। কারণ আমাদের সিলেটে শক্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেই। সিলেটের অনেক অধিবাসী দেশের বাইরে থাকলেও এখন তারা অনেকে সম্পত্তি বিক্রি করে দিচ্ছে। সিলেটের এ অবস্থার জন্য আমরাই দায়ী। কারণ সিলেটের মানুষ আমরা অতি আত্মকেন্দ্রিক। 

দেশের বিভিন্ন সেক্টরে সিলেটের মানুষের অনাগ্রহতার ব্যাপারেও তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। বলেন, এখন পত্রিকায় লোক নেয়ার জন্যও সিলেটের মানুষ পাওয়া যায় না। এ সময় উপদেষ্টাদ্বয়কে সিলেটের উন্নয়নে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণের অনুরোধ জানান দেশের বিশিষ্ট ওই গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

মানারাতের ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রব মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। সেখানে তিনি একটি গবেষণাকর্মের সারবক্তা তুলে ধরে বলেন, সিলেটের একটা বড়ো সমস্যা বন্যা ও ভূমিকম্প। আমাদের এদিকে মনোযোগী হতে হবে। এখানের বন্যার বিভিন্ন সমস্যা ও করণীয় সম্পর্কে আলোচনা তিনি করেন। এ কাজে তাকে সহায়তা করেছেন তার ছাত্রী মার্জিয়া আক্তার অপু। তিনি বলেন, সিলেটের উত্তরে ভারতের চেরাপুঞ্জি।  যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু হাওরগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এত পানি ধারণ করতে পারছে না। অতিরিক্ত পানির কারণেই এ বন্যা হচ্ছে। আমরা পরিকল্পনা না করে, রাজনৈতিক প্রভাব কিংবা অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের কারণে আমাদের সিলেট অঞ্চলের প্রকৃত সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এ ছাড়াও বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় তিনি বেশি করে গাছ লাগানো, নদীর শাখাগুলো পুনরুদ্ধারে গুরুত্বারোপ করেন। সেমিনারে প্যানেল আলোচক বুয়েটের প্রফেসর মুশফিকুস সালেহীন বলেন, কেন সিলেটের বন্যা অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। যখন ২০২২ সালে আকস্মিক বন্যা হয়, তখন কয়েকজন সমন্বয়ক আমার কাছে এসেছিল।  আমি বলেছি অতি বৃষ্টির কারণে বন্যা হয়। ৮৯ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলেই তাকে আমরা অতি বৃষ্টি বলি। এখন আমরা করবোটা কী। আমাদের ৪টা এলিমেন্ট নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার আমাদের ঝুঁকি নির্ধারণ করা, এর থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী অজন্তা শুক্লা তন্মার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জালালাবাদ অফিসার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাফর রাজা চৌধুরী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন কর কমিশনার মো. আব্দুর রকিব এবং গীতা পাঠ করেন ইঞ্জিনিয়ার শুক্লা।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status