শেষের পাতা
দ্রুত বাড়ছে ডেঙ্গু ও করোনা রোগী
স্টাফ রিপোর্টার
৩০ মে ২০২৩, মঙ্গলবার
দেশে ডেঙ্গু ও করোনার রোগী দ্রুত বাড়ছে। গত বছরের চেয়ে এবছর ডেঙ্গু রোগী পাঁচগুণ বেশি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে করোনা সংক্রমণ বাড়লেও ছড়ানোর আশঙ্কা নেই। গত জানুয়ারি থেকে ২৯শে মে পর্যন্ত মোট এক হাজার ৮৪৩ জন ডেঙ্গু রোগী আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন ১৩ জন। আর গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে ১৫৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।
গতকাল সচিবালয়ে করোনা টিকা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে এবং আশপাশের দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের অধিদপ্তর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জানুয়ারি থেকে ২৮শে মে পর্যন্ত ১ হাজার ৭০৪ জন ডেঙ্গু রোগী পেয়েছি। এ সময়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমরা যদি গত বছরের তুলনা করি, এবছর রোগীর সংখ্যা প্রায় পাঁচগুণ। অর্থাৎ অনেক রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। ডেঙ্গু রোধে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের হাসপাতালের পরিচালকদের সঙ্গে ডিজির (স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক) বৈঠক হয়েছে, হাসপাতালে যেন প্রস্তুতি থাকে। আমাদের ডাক্তার-নার্সদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে ডেঙ্গু সার্ভে, সেটি চলমান। রিপোর্ট দুই সিটি করপোরেশনকে দিয়েছি। মন্ত্রী বলেন, হাসপাতালে যেহেতু রোগী বাড়ছে, সেহেতু এ বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।
ডেঙ্গু রোগীদের জন্য হাসপাতালে আলাদা ওয়ার্ড এবং আলাদা কর্নার তৈরি করা হয়েছে। বছরখানেকের মধ্যে আমরা আড়াই হাজার ডাক্তার এবং নার্সকে ট্রেনিং দিয়েছি। তিনি বলেন, জনগণকে সচেতন করার জন্য আমরা বিভিন্ন মহলকে যুক্ত করেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক আছেন, ছাত্রছাত্রী আছেন, তাদের মাধ্যমে এটা প্রচার করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও যুক্ত করা হয়েছে, যারা জনগণকে সতর্ক করতে পারে, কীভাবে ডেঙ্গু রোগ থেকে বাঁচা যায়, মশার কামড় থেকে বাঁচা যায় এবং ডেঙ্গু হলে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নেয়াÑ এ বিষয়েও বলা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রচার-প্রচারণার জন্য পোস্টার, ব্যানার এবং টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান জাহিদ মালেক। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মিটিং আহ্বান করেছিল। সেখানে আমাদের প্রতিনিধি গেছে। জরুরি কোনো ব্যবস্থা যদি নিতে হয়, সেজন্য প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আপনাদের মাধ্যমে আমরা জনগণকে অবহিত করতে চাই যে, আপনারা ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিন। মানে বাসার আশপাশের আঙিনা পরিষ্কার রাখুন, নিজের ঘর স্প্রে করুন, আশপাশে যদি জঙ্গল থাকে সেখানে স্প্রে করুন এবং পানি বা যদি অন্যকিছু জমে থাকে সেগুলো সরিয়ে ফেলুন। এ কাজগুলো আমাদের নিজেদেরই করতে হবে। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে এসে তাড়াতাড়ি চিকিৎসা নেবেন। সময় মতো চিকিৎসা নিলে প্রায় সবাই ভালো হয়ে যাচ্ছেন।
করোনা সংক্রমণ বাড়লেও ছড়ানোর আশঙ্কা নেই: এদিকে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্প্রতি বাড়লেও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন। দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। অন্যদিকে সব বিধিনিষেধও উঠে গেছে, নতুন করে বিধিনিষেধ দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আমি জেনেভা থেকে এসেছি। সেখানে দেখলাম একটি লোকও মাস্ক পরেনি। সেখানে যে রোগী হচ্ছে না দু-একটা করে তা নয়। আমাদের এখানেও দু-একটি করে রোগী পাচ্ছি। ইদানিং কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু হাসপাতালে তেমন কোনো রোগী নেই। যেহেতু সবাই টিকা নিয়েছে সেজন্য মারাত্মক আকার ধারণ করছে না করোনা। তিনি আরও বলেন, আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলবো, করোনা যেহেতু আছে আমাদের সতর্ক থাকাটা ভালো। যেখানে বেশি লোকের সমাগম হয় সেখানে মাস্ক পরতে পারলে ভালো। করোনা মোকাবিলার জন্য যে অভিজ্ঞতা আমরা সঞ্চয় করেছি, সেগুলো আমাদের মনে রাখা উচিত। কারণ যে কোনো সময় বাড়তেও পারে অতিরিক্ত, এখন সেরকম কোনো আশঙ্কা আমরা পাচ্ছি না।
২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত বেড়ে ১৫৯ জন: দেশে আবার ধীরে ধীরে করোনা শনাক্ত বাড়ছে। ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ৫ শতাংশের বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে ১৫৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৭৩ জন। ১৫৯ জনের মধ্যে রাজধানীতে ১৩৯ জন শনাক্ত হয়েছেন। নতুন শনাক্ত নিয়ে সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ২০ লাখ ৩৯ হাজার ১৩০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কেউ মারা যায়নি। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা ২৯ হাজার ৪৪৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১ জন এবং এখন পর্যন্ত ২০ লাখ ৬ হাজার ২৩৩ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, দেশে ৮৮৫টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৯৯টি নমুনা সংগ্রহ এবং ৩ হাজার ৯৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৫৪ লাখ ২১ হাজার ৯১৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৪ শতাংশ। দেশে মোট পুরুষ মারা গেছেন ১৮ হাজার ৭৯০ জন এবং নারী ১০ হাজার ৬৫৬ জন।
ভিসিভি ভ্যাকসিনের ৩য় ও ৪র্থ ডোজ প্রদান শুরু এ সপ্তাহেই: মন্ত্রী জানান, কোভ্যাকস ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে ৩০ লাখ ডোজ ভিসিভি (ভ্যারিয়েন্ট কন্টেয়নিং ভ্যাকসিন) হাতে পাওয়া গেছে। এই ভ্যাকসিন ৩য় ও ৪র্থ ডোজ হিসেবে উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য এ সপ্তাহ থেকেই দেশের সিটি করপোরেশন, জেলা/ উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে স্থায়ী কোভিড-১৯ টিকাদান কেন্দ্র থেকে দেয়া শুরু হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, চলমান কোভিড মোকাবিলায় বিশে^র ন্যায় বাংলাদেশেও সফলভাবে ভ্যাকসিন প্রদান করেছে। গোটা বিশ্বে যত ভ্যাকসিন পেয়েছে তার ১১ ভাগ ভ্যাকসিন বাংলাদেশ পেয়েছে। সেই ভ্যাকসিন থেকে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৮৮.৫১ ভাগ মানুষকে ১ম ডোজ, ৮২.১৮ ভাগ মানুষকে ২য় ডোজ, ৩৯.৬২ ভাগ মানুষকে ৩য় ডোজ এবং ১.৮৫ ভাগ মানুষকে ৪র্থ ডোজ টিকা ইতিমধ্যেই দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ভিসিভি ভ্যাকসিন ব্যবহারে কোনো পাশর্^প্রতিক্রিয়া নেই এবং এটির ব্যবহারে বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য সংস্থার ইতিবাচক মতামত রয়েছে। উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠী সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৩য় ডোজ পাবে ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব ব্যক্তি, ৪র্থ ডোজ পাবে ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠী বা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ১৮ বছর বা তদূর্ধ্ব ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা এবং সম্মুখসারির যোদ্ধাগণ। ৩য় ডোজ দেয়া হবে ২য় ডোজ টিকা প্রাপ্তির ৪ মাস পর, ৪র্থ ডোজ পাবেন ৩য় ডোজ প্রাপ্তির ৪ মাস পর।