শেষের পাতা
বিরোধী জোটের ভোটে নজর বাবুল ও মাহমুদুলের
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
২৯ মে ২০২৩, সোমবার
সিলেট সিটিতে মাঠে নেই বিএনপি। এমনকি স্বতন্ত্র হিসেবে নেই কেউ। জামায়াত, খেলাফত মজলিস, জমিয়ত এবং বাম জোটেরও কোনো প্রার্থী নেই। অথচ বিএনপিসহ বিরোধী জোটের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। ওই ভোট ব্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে গত দু’বার সিলেট সিটিতে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। মেয়র আরিফ ভোট বর্জন করে মাঠ ছেড়ে দেয়ায় এই ভোট ব্যাংক নীরব। নড়াচড়া নেই। আর ওই ভোট ব্যাংক নজর দিয়েছেন জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা মাহমুদুল হাসান। আরিফ মাঠ থেকে সরে যাওয়ার পর তারা ওই ভোট নিজেদের পক্ষে কাড়তে নানা কৌশল ব্যবহার করছেন।
এ দু’প্রার্থী এখন মাঠে সাড়া পাচ্ছেন ব্যাপক। নানা তরফের ভোট তাদের পক্ষে কথা বলা শুরু করেছে। সিলেট সিটিতে এবার প্রথমবারের প্রার্থী দিয়েছে জাতীয় পার্টি। এর আগের চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় কিংবা স্বতন্ত্র ভাবে দলটি কাউকে প্রার্থী দেয়নি। এবার প্রার্থী দেয়া হয়েছে দলের সিলেট মহানগর আহ্বায়ক ও শিল্পপতি নজরুল ইসলাম বাবুল। প্রথম দিকে দলের ভেতরে বাবুল কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে থাকলেও এখন তার পক্ষে সিলেট জাতীয় পার্টির বিবদমান দু’টি গ্রুপই মাঠে নামছে। রওশন এরশাদপন্থি নেতারা শিগগিরই এ ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে নামতে পারেন। এমন আভাসও কেন্দ্রের কাছ থেকে পাওয়া গেছে।
এ ছাড়া মান অভিমান ভুলে নেতারাও এক হতে চাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘আমরা মাঠের সাড়া পাচ্ছি। খুব ভালোভাবেই পাচ্ছি। সেখানেই যাচ্ছি মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসছেন। এমনকি প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।’ তিনি জানান- ‘সিলেট সিটিতে এখন জাতীয় পার্টিরই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী। এ কারণে বিরোধী জোটের ব্যাংক জাতীয় পার্টির সঙ্গেই আছে। এতে করে জয়ের ব্যাপারে মনোবল আরও তীব্র হচ্ছে।’
আরিফ মাঠ থেকে সরে যাওয়ার পর বাবুলও নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছেন। বাবুলের পক্ষে আব্দুল্লাহ সিদ্দিকী ছাড়া দলের কয়েকজন নেতা সক্রিয়। তারা ভোটের মাঠে জোয়ার তুলতে ইতিমধ্যে দফায় দফায় ঘরোয়া বৈঠকও চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারণা শুরু হলে প্রার্থীর পক্ষে নেতারা ঐক্যবদ্ধ ভাবে মাঠে নামবেন। আর বাবুলও গতকাল থেকে তার বক্তব্যে পরিবর্তন এনেছেন। তিনি এবার ‘আঘাত’ করছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে।
গতকাল নগরের জিন্দাবাজার ও বারুতখানা এলাকায় প্রচারণাকালে তিনি বলেছেন- ‘আমি রিটার্ন টিকিট নিয়ে আসি নাই আমি নগরবাসীর সেবা করতে এসেছি। আমার দল পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে গড়া জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ শীর্ষ নেতৃবৃন্দের আশীর্বাদ নিয়ে এবং জনগণের ভালোবাসার ওপর ভরসা করে কাজ করে যাচ্ছি।’ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গেল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সিলেটে মনোনয়ন দিয়েছিল পেশাজীবী এক নেতাকে।
এবার নগরের স্থানীয় বাসিন্দা ও সামাজিকভাবে পরিচিত মাওলানা মাহমুদুল হাসানকে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে। তরুণ এ প্রার্থী ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে নজর কাড়তে শুরু করেছেন। বিএনপি’র ভোট ছাড়াও জামায়াত সমমনা ইসলামী দলের ভোটের দিকে সবচেয়ে বেশি নজর চরমোনাইর পীরের সমর্থিত ওই প্রার্থীর। গত কয়েকদিন ধরে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে শক্তি পাচ্ছেন মাহমুদুল হাসান। বিশেষ করে উলামা সমাজসহ বিরোধী জোটের ভোটাররা তার পক্ষে সক্রিয় হচ্ছেন।
গত শনিবার সিলেটের রেজিস্টারী মাঠে সিলেটে খতমে নব্যুয়াত সমাবেশে আলেম সমাজের বড় একটি অংশকে নিয়ে মিছিল সহকারে যোগ দেন মাওলানা মাহমুদুল হাসান। তিনি সিলেটের এই বড় সমাবেশে বক্তৃতাও করেন। তার বক্তৃতা সিলেটের আলেম সমাজের নজর কেড়েছে। তবে- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেটের নেতারা জানিয়েছেন- বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর ভোটের দিকে তাদের নজর নয়। তারা সবার ভোট চান। এবং দিনে দিনে তাদের প্রার্থী সিলেট নগরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। এবং ভোট ব্যাংকও বাড়ছে। তবে- ভোটের মাঠে সুষ্ঠু পরিবেশের আশঙ্কা, ইভিএম নিয়ে সন্দেহ পোষন করে চলেছেন মাওলানা মাহমুদুল হাসান। তিনি জানিয়েছেন- সিলেটের মানুষ এখনো ইভিএমে ভোট দিতে অভ্যস্ত নয়। পাশাপাশি পরিবেশ এমন ভাবে তৈরি করা হচ্ছে। কোনো একজন বিশেষ প্রার্থীর সুবিধা হয়- সেদিকে নজর রেখে তাকেই বেশি সুবিধা দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এজন্য নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ মাঠ প্রস্তুত রাখার কথা জানান তিনি। নতুবা ভোটের মাঠে ভোটারের মতামতের প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে দাবি তার।