ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক কাউন্সিলর রাজীব ও মিজান

প্রভাবশালী ব্যক্তির সরাসরি ইন্ধনে আমাদের গ্রেপ্তার করা হয়

স্টাফ রিপোর্টার
২৯ মে ২০২৩, সোমবার
mzamin

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার সাবেক দুই কাউন্সিলর বিশেষ এক পরিবারের নৃশংসতার শিকার হয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন তারা হলেন-এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত তোফায়েল আহমেদ জোসেফ, হারিস আহমেদ ও আনিস আহমেদ। ভুক্তভোগী সাবেক ওই দুই কাউন্সিলর হলেন- ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান। গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তারা ন্যায়বিচার চেয়েছেন এবং এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে দুজনেই লিখিত বক্তব্য দিয়ে বলেন, ২০১৯ সালে এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সরাসরি ইন্ধনে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারমধ্যে তাদের ভাতিজাকে কাউন্সিলর বানানো উদ্দেশ্য ছিল।  

সাবেক কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব বলেন, আমি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সাবেক কাউন্সিলর এবং ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন নিবেদিত কর্মী। খুব অল্প বয়সেই আমি সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি দেখে ঈর্ষান্বিত হয় ঢাকার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তোফায়েল আহমেদ জোসেফ-হারিস আহমেদ-আনিস আহমেদ গং। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ২০১৯ সালের অক্টোবরে আমাকে গ্রেপ্তার করানো হয়।

বিজ্ঞাপন
এসব কিছু করা হয়েছে, একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তার সন্ত্রাসী ভাইদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য।

তিনি বলেন, আমাকে গ্রেপ্তারের পর রাতভর বাসা ও অফিসে তল্লাশি অভিযান চলেছিল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের মতো করে সন্ধান করেছে। তবে অভিযান শেষে অভিযান পরিচালনাকারী দল গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, আমার ক্যাসিনো সম্পৃক্ততা নেই। অথচ সেই অভিযান ছিল ‘ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান’। আমার বিরুদ্ধে অঢেল সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এমনকি বিদেশে আমার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য-প্রমাণও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের তদন্তে পায়নি।

রাজীব বলেন, নব্বই দশক থেকে জোসেফ-হারিস পরিবার ঢাকা শহরের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত। তারা রাজনৈতিকভাবে আত্মপ্রকাশ করতে চায়। মোহাম্মদপুর তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পুরনো অভয়ারণ্য। সেই এলাকার একজন কাউন্সিলর ছিলাম আমি। আমার জায়গায় তাদের ভাতিজা আসিফ আহমেদকে কাউন্সিলর বানাতে পরিকল্পিতভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করানো হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত একটা মামলা কিংবা জিডি পর্যন্ত ছিল না। তিনি বলেন, কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না হয়েও শুধুমাত্র ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর প্রভাবে আমাকে নৃশংসভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বিনা অপরাধে তিন বছরের বেশি সময় জেলে থাকতে হয়েছে। বর্তমানে আমি এবং আমার পরিবার ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হুমকির মুখে আছি। 

৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমি মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন অনুগত কর্মী। আমি ফ্রিডম মিজান নই। ফ্রিডম মিজান সাজাপ্রাপ্ত আসামি। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ। ১৯৯৬ সালের ৭ই মে মোহাম্মদপুরে আমার ভাই মোস্তাফিজুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই হত্যা মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফকে মৃত্যুদণ্ড দেন ঢাকার জজ আদালত। সেই রায়ের বিরুদ্ধে জোসেফ আপিল করলেও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন হাইকোর্ট। পরে আপিল বিভাগ এ সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সেই মামলায় আরও আসামি ছিলেন জোসেফের ভাই হারিস আহমদ ও আনিস আহমদ। তারাও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। হারিস ও আনিস রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা পেয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান। এমনকি সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও তাদের কারাগারে যেতে হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে এখনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আছে।

মিজান বলেন, আমার ভাই খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী তোফায়েল আহমেদ জোসেফও রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার পর কারাগার থেকে মুক্তি পান ২০১৮ সালের মে মাসে। বড় ভাই হারিস আহমেদের হাত ধরে রাজনীতির মাঠে আসেন জোসেফ। এক সময় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতেন হারিস। নব্বই দশকে জাতীয় পার্টি ছেড়ে হারিস দলবদল করেন। বড় ভাইয়ের ক্যাডার বাহিনীর প্রধানের দায়িত্বপালন করতেন জোসেফ। ওই সময় মোহাম্মদপুর-হাজারীবাগসহ আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন জোসেফ। যোগ দেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আলোচিত সেভেন স্টার গ্রুপে। জোসেফের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখনো চলছে। ২০১৯ সালে পরিবর্তিত এক পরিস্থিতিতে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানের সময় আমাকে আটক করা হয়। যদিও এর আগে আমার নামে কোনো থানায় কখনো কোনো মামলা ছিল না। ওই সময় আমার বিরুদ্ধে সাজানো সব অভিযোগ আনা হয়। এমনকি আমার নামও বদলে দেয়া হয়। আমার নাম দেয়া হয় মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান। অথচ আমার নাম হাবিবুর রহমান মিজান। সরকারের ওই অভিযান ছিল ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান। অথচ এ ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে আমি সম্পৃক্ত না থাকলেও সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আমার বাসায় থাকা মূল্যবান দলিলপত্র, টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যাওয়া হয়। যা মামলার জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। আজও তা আমি ফেরত পাইনি। 

একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সরাসরি ইন্ধনে ও শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ-হারিস- আনিসের মদতে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। যে মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক আছে, তার নামে আমার পরিচয় দেয়া হয়। ওই সময়ের বিভীষিকা আমি কখনো ভুলতে পারবো না। আমাকে গ্রেপ্তারের মূল কারণ ছিল-সন্ত্রাসী জোসেফ গংরা মোহাম্মদপুর এলাকায় আবারো তাদের পুরনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু করা। অথচ আমার ভাই হত্যায় তার ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনায় জোসেফ অঙ্গীকার করেছিল সে ভালো হয়ে গেছে, আর কোনোদিন কোনো খারাপ কাজ করবে না। বাস্তবে তার প্রমাণ পাওয়া যায় না। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা তার এক আপনজনের সরাসরি সহযোগিতায় আমার ওপর এ ধরনের নৃশংসতা চালায় তারা। আমাকে গ্রেপ্তারের পর সাজানো ও মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। অত্যন্ত দুঃখ আর পরিতাপের বিষয় যে, সে সময় ২০২০ সালে আমার স্ত্রী মনি রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। আমি তার মরা মুখটাও দেখতে পারিনি। আমার মা মারা যান। বড় বোনের জামাই ও অনেক আপনজন মারা গেলেও তাদের ধর্মীয় বিদায়ে অংশ নিতে পারি নাই। যা এক ভয়ঙ্কর দুঃসময় ছিল আমার জন্য। যে ভয়ঙ্কর সময় আমি এখনো বয়ে বেড়াচ্ছি। আমার মাথার ওপর এখনো ঝুলছে কথিত অর্থ পাচার এবং অবৈধ অস্ত্র মামলা। যার সঙ্গে আমি কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নই।

তিনি বলেন, তিন বছরের বেশি সময় ধরে কারাভোগের পর অবশেষে আমি মুক্তি পাই  ২০২২ সালের ৮ই নভেম্বর। আমাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিকার চাই। শেখ হাসিনার কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছি। মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে সব সময় মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছি। এটাই আমার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী জোসেফ ও তার প্রভাবশালী শক্তি আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে।

গ্রেপ্তারের সময় কাউন্সিলর রাজীবের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছিল ওই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ আমি আপনাদের সামনে কথা বলতে এসেছি। কারও সৎ সাহস না থাকলে কোনো ব্যক্তি আত্মপক্ষ সমর্থন করতে পারে না। কে সেই প্রভাবশালী ব্যক্তি?  জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা বিজ্ঞ মানুষ, আপনারা কথাগুলো বুঝে নেয়ার চেষ্টা করবেন। আমরা দুজন কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় তারা আমাদের জীবনের গতি পাল্টে দিয়েছে। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তার নাম প্রকাশ করতে পারছি না। আমার এবং আমার পরিবারের নিরাপত্তা শঙ্কা রয়েছে। আমরা আপনাদের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মোহাম্মদপুর এলাকায় আরও কাউন্সিলর রয়েছে, তাহলে শুধুমাত্র আপনাদেরই কেন টার্গেট করা হয়েছিল জানতে চাইলে রাজীব বলেন, আপনারা জানেন তাদের ভাতিজা আসিফ, যিনি ইতিপূর্বে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। আমার নির্বাচিত এলাকায় তাকে কাউন্সিলর বানাতেই আমাকে টার্গেট করা হয়। ৯০ দশক থেকেই তাদের ওই এলাকায় বেশি জমিজমা, যেখানে তাদের পুরনো আবাস রয়েছে। মূলত আমাকে নির্মূল করতেই মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করানো হয়।
 

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে ভোগান্তি / ঈদের ছুটি শেষে ভারত থেকে দেশে ফিরছেন যাত্রীরা

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status