ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

বিল না নদী

রাজারহাটে চাকিরপশা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে

স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম ও রাজারহাট প্রতিনিধি
৩০ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার
mzamin

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার অভ্যন্তরে অবস্থিত চাকিরপশার বিলকে ঘিরে শুরু হয়েছে নানান গুঞ্জন। এর বিপুল পরিমাণ জমি এখন প্রভাবশালীদের দখলে। বিলের সুবিধা থেকে বঞ্চিত প্রকৃত মৎস্যজীবীরা। এটি নদী না বিল এ নিয়ে চলছে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্কের ঝড়। পরিবেশবাদী সংগঠন রিভারনাইন পিপলস ও চাকিরপশার সুরক্ষা কমিটি এটিকে নদী ঘোষণার জন্য আন্দোলন চালিয়ে আসছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের টেকনিক্যাল কমিটি।  সরজমিন চাকিরপশার বিলে গেলে স্থানীয়রা জানান, চাকিরপশা রাজারহাট উপজেলা শহরের এক কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত একটি অশ্বখুড়ের মতো গোলাকার বিল বা ছড়া। মাঝখানে কৈলাশকুটি নামে একটি গ্রাম রয়েছে। এই বিল বা ছড়ার সঙ্গে নদীর কোনো সংযোগ নেই। আশির দশকে তৎকালীন জিয়া সরকার খাল খনন কর্মসূচির মাধ্যমে বিলের পানি সহজে নদীতে স্থানান্তর করতে একটি সংযোগ খাল তৈরি করেন।

বিজ্ঞাপন
যা উলিপুরের বুড়ি তিস্তা খাল হয়ে ব্রহ্মপূত্র নদে গিয়ে পড়তো। পরবর্তীতে পানি উন্নয়ন বোর্ড পানি নিষ্কাশন ও খাল খনন প্রকল্পের আওতায় জমি অধিগ্রহণ করে। তারা সেচ কার্যক্রম ও পানির প্রবাহ ধরে রাখার জন্য পার্শ্ববর্তী উলিপুর উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াইপিয়ার নামক স্থানে একটি রেগুলেটর স্থাপন করে। পরবর্তীতে অধিগ্রহনকৃত খাল বা নালার সংস্কার কাজ না করায় এখন সেটি স্বাভাবিক জমিতে পরিণত হয়েছে। কোথাও নালার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। চাকিরপশার বিল থেকে রেগুলেটরের দূরত্ব প্রায় ১৬ কিলোমিটার। মাঝখানে কোন খাল বা নালার অস্তিত্ব না থাকায় চাকিরপশারকে কীভাবে নদ বা নদী বলা হচ্ছে এ নিয়ে হতবাক এলাকার মানুষ।  তথাকথিত চাকিরপশার নদের উৎপত্তিস্থল বলা হচ্ছে ৩ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ইটাকুড়ি বিল থেকে। ইটাকুড়িও একটি বদ্ধ জলাশয়, বিল বা নালা। এর সঙ্গে তিস্তা নদীর কোনো সংযোগ নেই। এসব নিয়েই চলছে ব্যাপক আলোচনা ও যুক্তি পাল্টা যুক্তি। রাজারহাট ভূমি অফিসের রেকর্ড অনুসারে দেখা যাচ্ছে, রাজারহাট ও চাকিরপশার ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত চাকিরপশার বিলটি বদ্ধ জলাশয় হিসেবে তৎকালীন ১৯৪০ সালে ভারত সম্রাটের নামে ‘বিল শ্রেণি’ হিসেবে সিএস রেকর্ডে নথিভুক্ত হয়। ৫টি মৌজায় ৬টি খতিয়ানে মোট ২৫৯ দশমিক ৪৫ একর জমি নথিভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে পাকিস্তান সরকারের পক্ষে রংপুর কালেক্টরের নামে ১নং খাস খতিয়ানে ৫টি মৌজায় ৫টি খতিয়ানে ১৮৪ দশমিক ০৮ একর জমি বিল শ্রেণি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত করা হয় ১৯৬২ সালে। এরপর নব্বই দশকের সময় ভূমিখোরদের আগ্রাসনে কমতে থাকে সরকারি নথিভুক্ত জমি। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী সিএসএ জমি রেকর্ড করা হয় ২৬৫ দশমিক ৩১ একর, এসএ রেকর্ডে ১৮৪ দশমিক ৮ একর এবং আরএস রেকর্ডে ৩৬ দশমিক ২৮ একর।  জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন কর্তৃক গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরে তাসনিম জানান, ‘আমাদের সংগৃহীত রেকর্ডকৃত কাগজপত্র কখনোই বলছে না চাকিরপশার একটি নদ বা নদী। ফলে কমিটির সঙ্গে আমি দ্বিমত পোষণ করি। বিলের অধিকাংশ জমি বন্দোবস্ত ও ব্যক্তি মালিকানায় রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। তাদেরকে আমি বৈধ কাগজপত্র নিয়ে ডেকেছিলাম। তারা কাগজপত্র দেখিয়েছে। এখন তাদের দাবিকৃত কাগজপত্র যে সঠিক নয় এটি প্রমাণ করতে আমাকে আইনগতভাবে এগুতে হচ্ছে। উচ্ছেদ করতে গেলে আমাকে আইন মেনেই এগুতে হবে। ভুলগুলো সংশোধন করতে হবে। যে প্রক্রিয়াটা চলমান রয়েছে।’ এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ জানান, সবগুলো অভিযোগ পেয়েছি। পর্যালোচনা করছি। এটি জটিল আকার ধারণ করেছে। সমন্বিতভাবে সমাধান করতে হবে। ইতিমধ্যে চাকিরপশার বিলের ইজারা স্থগিত করা হয়েছে। বিলগুলো অন্যায়ভাবে ব্যক্তি মালিকানা বলে রেকর্ড করা হয়েছে। গেজেট হয়ে থাকলে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে আপিল করা হবে। মামলা করা হবে। যদি না হয়ে থাকে তাহলে জোনাল সেটেলমেন্ট রংপুর জোনে আপত্তি জানানো হবে। যে কাজগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

সিন্ডিকেট চক্রের ঈদ বাণিজ্য/ ট্রেনের ১০৫৩ টাকার এসি চেয়ার ২৫০০

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status