বাংলারজমিন
‘ছাওয়াল ম্যাইয়্যেগো তিন বেলা প্যাট পুরে ভাত খাওয়াতি পারিনে তার মাঝে রোজা’
রিয়াছাদ আলী, কয়রা (খুলনা) থেকে
২৫ মার্চ ২০২৩, শনিবার‘গরুর গোশত খাতি পারিনে। কেনবো কেমনি? দাম মেলা বেশি। আয় রোজগার কুমলিও সব জিনিসের দাম বাড়িছে। ছাওয়াল ম্যাইয়্যেগো তিন বেলা প্যাট পুরে ভাত খাওয়াতি পারি নে। আবার তার মাঝেই আইছে রোজা। কোনো মতে শুধু কয়ডা ভাত খেয়ে সেহরি করিছি। ইফতারি করিছি পানি-মুড়ি দে।’ দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে এভাবেই প্রথম দিনের রোজা শেষে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন উপকূলীয় জনপদ কয়রা উপজেলার হালিমা বেগম (৪৮)। তিনি ৫নং কয়রা গ্রামের বিধবা নারী। বসবাস করেন সুন্দরবন সংলগ্ন চরে। অসুস্থতায় মারা যান তার স্বামী মোকছেদ সরদার।
বিজ্ঞাপন
গতকাল ৪নং কয়রা লঞ্চঘাট, গড়িয়াবাড়ী হাট, দেউলিয়া বাজার, কাছারীবাড়ীসহ আরও অনেক বাজারে সরজমিন গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চাল, ডাল, তেল, গ্যাস, আটা, চিনি, মাছ, ডিম থেকে শুরু করে শাক-সবজি এমন কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই, যার দাম বাড়েনি। সাধারণ মানুষের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মিলছে না। নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ হতাশ। হতাশায় নিমজ্জিত খেটে খাওয়া মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও। কয়রা বাজারের রিয়া স্টোরের মালিক আ. ছালাম বৈদ্য বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা যেমন ক্ষীপ্ত, তেমনি আমরাও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। সাধারণ মানুষ বাজারে এসে দাম শুনে প্রয়োজনীয় অনেক কিছু না কিনে চলে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। কয়রার গড়িয়াবাড়ী লঞ্চঘাটের সাপ্তাহিক হাটে দোকান নিয়ে এসেছেন আ. ছাত্তার সরদার। রোজার শুরুতেই বেচাকেনা বেশি হবে বলেই অন্য হাটের চেয়ে একটু মালামাল বেশি নিয়ে এসেছেন। তবে তার সেই স্বপ্ন পূরুণ হয়নি। মানুষের কাছে টাকা না থাকায় এমন দৈন্যদশা বলে তিনি মনে করেন। কয়রা উন্নয়ন সমন্বয় সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, অনান্য বছর পবিত্র রমজান উপলক্ষে অনেক সংগঠন অসহায় মানুষের সহযোগিতা করে থাকে। তবে এ বছর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নের অনেক লোক আছে যারা অতি মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এ সকল অসহায় মানুষের সাহায্য-সহানুভূতি প্রয়োজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মমিনুর রহমান বলেন, অসহায় মানুষের জন্য সরকারিভাবে এখনো রোজা উপলক্ষে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেলে অসহায় মানুষের মাঝে তা বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা কয়রায় দব্যমূল্যর দাম যাতে বেশি না নিতে পারে তার জন্য সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।