ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

‘ছাওয়াল ম্যাইয়্যেগো তিন বেলা প্যাট পুরে ভাত খাওয়াতি পারিনে তার মাঝে রোজা’

রিয়াছাদ আলী, কয়রা (খুলনা) থেকে
২৫ মার্চ ২০২৩, শনিবার

‘গরুর গোশত খাতি পারিনে। কেনবো কেমনি? দাম মেলা বেশি। আয় রোজগার কুমলিও সব জিনিসের দাম বাড়িছে। ছাওয়াল ম্যাইয়্যেগো তিন বেলা প্যাট পুরে ভাত খাওয়াতি পারি নে। আবার তার মাঝেই আইছে রোজা। কোনো মতে শুধু কয়ডা ভাত খেয়ে সেহরি করিছি। ইফতারি করিছি পানি-মুড়ি দে।’ দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধিতে এভাবেই প্রথম দিনের রোজা শেষে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন উপকূলীয় জনপদ কয়রা উপজেলার হালিমা বেগম (৪৮)। তিনি ৫নং কয়রা গ্রামের বিধবা নারী। বসবাস করেন সুন্দরবন সংলগ্ন চরে। অসুস্থতায় মারা যান তার স্বামী মোকছেদ সরদার।

বিজ্ঞাপন
হালিমা হলো তার দ্বিতীয় স্ত্রী। তিন ছেলে দুই মেয়ে নিয়ে সংসার জীবন চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের পাথরখালী গ্রামের শহিদুল ইসলাম সানা বলেন, বর্তমানে নদীতে আগের মতো মাছ নেই। সুন্দরবনে মাছ ধরা ছাড়া বিকল্প কোনো আয়ের পথ নেই। রোজা এসে গেছে- সবাই চায় ছেলেমেয়ে নিয়ে একটু ভালো খেতে। তবে কি দিয়ে কিনবে জিনিসপত্র? আয় রোজগার কম কোনো রকম দু’মুঠো ডাল-ভাত খেয়ে সেহরি করা যাবে। ইফতার করতে হবে পানি ও মুড়ি দিয়ে। যার কারণে আজ বাড়ি কোনো ইফতারের ব্যবস্থা হয়নি। মসজিদে গিয়ে ইফতার করে এসেছি। বাড়ি ফিরে দেখি পরিবারের সদস্যরা মুড়ি দিয়ে ইফতার করেছে। জোড়শিং গ্রামের মিজানুর গাজী বলেন, চাল-তেল থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম শুধু বাড়ছে আর বাড়ছে। মঠবাড়ী গ্রামের ভ্যানচালক আফজাল শেখ বলেন, খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের চড়া মূল্যের বিরূপ প্রভাব পড়েছে অতিদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর। আলু ছাড়া সব পণ্যের দাম বেশি। যে কারণে নিম্ন আয়ের লোকজন রোজার দিনে আালুর তরকারি খেয়ে রোজা রাখতে হবে। 
গতকাল ৪নং কয়রা লঞ্চঘাট, গড়িয়াবাড়ী হাট, দেউলিয়া বাজার, কাছারীবাড়ীসহ আরও অনেক বাজারে সরজমিন গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চাল, ডাল, তেল, গ্যাস, আটা, চিনি, মাছ, ডিম থেকে শুরু করে শাক-সবজি এমন কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই, যার দাম বাড়েনি। সাধারণ মানুষের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাব মিলছে না। নিত্যপণ্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ হতাশ। হতাশায় নিমজ্জিত খেটে খাওয়া মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও। কয়রা বাজারের রিয়া স্টোরের মালিক আ. ছালাম বৈদ্য বলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা যেমন ক্ষীপ্ত, তেমনি আমরাও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। সাধারণ মানুষ বাজারে এসে দাম শুনে প্রয়োজনীয় অনেক কিছু না কিনে চলে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। কয়রার গড়িয়াবাড়ী লঞ্চঘাটের সাপ্তাহিক হাটে দোকান নিয়ে এসেছেন আ. ছাত্তার সরদার। রোজার শুরুতেই বেচাকেনা বেশি হবে বলেই অন্য হাটের চেয়ে একটু মালামাল বেশি নিয়ে এসেছেন। তবে তার সেই স্বপ্ন পূরুণ হয়নি। মানুষের কাছে টাকা না থাকায় এমন দৈন্যদশা বলে তিনি মনে করেন। কয়রা উন্নয়ন সমন্বয় সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, অনান্য বছর পবিত্র রমজান উপলক্ষে অনেক সংগঠন অসহায় মানুষের সহযোগিতা করে থাকে। তবে এ বছর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নের অনেক লোক আছে যারা অতি মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে এ সকল অসহায় মানুষের সাহায্য-সহানুভূতি প্রয়োজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মমিনুর রহমান বলেন, অসহায় মানুষের জন্য সরকারিভাবে এখনো রোজা উপলক্ষে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেলে অসহায় মানুষের মাঝে তা বিতরণ করা হবে। এ ছাড়া পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা কয়রায় দব্যমূল্যর দাম যাতে বেশি না নিতে পারে তার জন্য সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।

 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status