বাংলারজমিন
ধলেশ্বরী থেকে বালু বিক্রির মহোৎসব
সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
২৫ মার্চ ২০২৩, শনিবার
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার ধলেশ্বরী নদী থেকে একটি প্রভাবশালী মহল অবাধে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করলেও দেখার কেউ নেই। এ নদী থেকে স্থানীয় মেম্বার ও সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রতিদিন কয়েক লক্ষাধিক টাকার বালু বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর তীরবর্তী রাস্তাঘাট ও বসতবাড়ি। কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধুলোবালি মিশে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা সর্দি-ঠাণ্ডায় ভুগছে। এদিকে নিষিদ্ধ যানবাহন হাইড্রোলিক ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে এ বালু বহন করায় বরাইদ ইউনিয়ন ও দিঘলিয়া ইউনিয়নের প্রায় ২০ কিলোমিটার গ্রামীণ পাকা সড়ক ও ৩০ কিলোমিটার আধাপাকা এবং কাঁচা সড়ক চলাচল করার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, দিঘলিয়া ইউনিয়নের জালশুকা, হামজা ও বরাইদ ইউনিয়নের গোপালপুরের প্রায় ৩ কিলোমিটার নদীর দু’পাড়ের বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে দিয়েছে। ধলেশ্বরী নদীতে ১ মাস ধরে দিনে-রাতে বালু কেটে নিচ্ছে বরাইদ ইউনিয়নের মাহেন্দ্র ট্রাক্টরচালক যুবলীগের নেতা মো. দেলোয়ার হোসেন ও যুবলীগ নেতা রেজাউল করিম ডি এম হোসেন, ইমরান হোসেন, মজনু মিয়া, মো. নজরুল ইসলাম, সুমন হোসেন ও আ. রহিম মিয়া। নদীর তীরবর্তী থেকে ব্যালচা দিয়ে বালি তুলে প্রতিদিন ১০০ থেকে দেড়শ’ গাড়ি বালু বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন তারা ধলেশ্বরী নদী থেকে প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার বালু বিক্রি করছেন। এই বালু বিক্রি থেকে গাড়িপ্রতি সপ্তাহে ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিশন নেন ইউপি সদস্য মো. রমজান আলী। এ কমিশনের টাকা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে দেয়ার কথা বলেন তিনি।
এদিকে বরাইদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. জমির উদ্দিন, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. রমজান আলী ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক হোসেন ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে লাখ লাখ টাকার বালু বিক্রি করছে। মানুষজন জানায়, এলাকার বাড়ি ও ছোট ছোট ডোবা ভরাট করে লাখ লাখ টাকা নিচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
এ বিষয়ে ইউপি সদস্য মো. রমজান আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ভাই পত্রিকায় নিউজ না করে কিছু টাকা নিয়ে যান। গাড়িপ্রতি কমিশন নেন জানতে চাইলে বলেন, ওই টাকা প্রশাসনের সবাইকে ভাগ দিয়ে থাকি ভাই। এজন্য সড়কে গাড়ি চলতে পারে বলে তিনি জানান।
বরাইদ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ধলেশ্বরী নদী থেকে একাধিক মেম্বারসহ স্থানীয় কিছু নেতা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। এ ইউনিয়নের বাড়িঘর পাকা রাস্তাঘাট ভেঙে ফেলছে। এ বিষয়ে আমি নিজে উপজেলা ইউএনও’র কাছে বালু তোলার ভিডিও পাঠানোসহ ও থানার ওসিকে নিজে জানিয়েছি।
বরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হাই বলেন, কারা বালু বিক্রি করে এ বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। তবে তার ইউনিয়ন পরিষদের সামনে দিয়ে কেন এত বালুভর্তি ট্রাক্টর চলছে জানতে চাইলে বলেন, কে বালু নিচ্ছে এটা আমার দেখার বিষয় না।
সাটুরিয়ার ইউএনও শারমিন আরা বলেন, ধলেশ্বরী নদীতে একাধিকবার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। জরিমানা করা হচ্ছে। আমরা যাওয়ার আগেই তারা খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। ফলে মোবাইল কোর্টের আওতায় আনা সম্ভব হয় না।