ঢাকা, ২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিঃ

বাংলারজমিন

ঝিনাইদহের মাটিতে কমছে নাইট্রোজেন ফসফরাস ও পটাশিয়াম

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে
২৫ মার্চ ২০২৩, শনিবার

ঝিনাইদহ অঞ্চলের মাটি পুষ্টিগুণ হারাতে বসেছে। আবাদি জমির মাটির ওপর যে অত্যাচার চালানো হচ্ছে তাতে ফসল উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কৃষি জমিতে এখন সার না দিলে ফসল হচ্ছে না। সার প্রয়োগে কৃষকদের মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জমিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার ও জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রি করার কারণে মাটির পুষ্টিগুণ হারানোর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন ঝিনাইদহ মৃত্তিকা গবেষণাগারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে তারা বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি কৃষি জমির মাটি পরীক্ষা করে সার ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাটি ল্যাব টেস্টে কম মাত্রার পুষ্টি উপাদান পাওয়া গেছে। ফসল উৎপাদনের জন্য ১৭টি পুষ্টি উপাদান জরুরি হলে মাটিতে সেই পুষ্টি নেই। ঝিনাইদহ অঞ্চলে প্রতি ১০০ গ্রাম মাটিতে নাইট্রোজেন দশমিক ২৭ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে রয়েছে দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম, যা অতি নিম্নমাত্রার। ফসফরাস ২৩-৩০ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে আছে ১৫ থেকে ২২।

বিজ্ঞাপন
পটাশিয়াম দশমিক ২৭ এর পরিবর্তে আছে ১৮ মিলি তুল্যাংক। সালফার ২৭ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে মধ্যম ২২ থেকে ৩০। জিংক ১ দশমিক ৩৫ এর স্থলে নিম্নমাত্রায় দশমিক ৪৫ থেকে দশমিক ৯০ মাইক্রোগ্রাম রয়েছে। পাশাপাশি বোরন দশমিক ৪৫ মাইক্রোগ্রামের পরিবর্তে উচ্চমাত্রায় দশমিক ৬১, অম্লান ৬ দশমিক ৬০ থেকে ৮ দশমিক ৪০ যা নিরপেক্ষ মাত্রার এবং বেশি দরকারি জৈব পদার্থ রয়েছে ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১ থেকে ১ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা অতি নিম্নমাত্রায় রয়েছে। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের কৃষক মো. শাহীন ভুট্টা চাষের জন্য এলাকার ভাগাড়ের মাঠের জমির মাটি পরীক্ষা করতে দিয়েছিলেন মৃত্তিকা গবেষণা ইনস্টিটিউটে। এতে ফসফরাস, পটাশিয়াম, জৈব পদার্থ নিম্ন, নাইট্রোজেন অতিনিম্ন, সালফার ও জিঙ্ক মধ্যম এবং বোরন অতি উচ্চ মাত্রার রয়েছে। 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অপরিকল্পিত বাসস্থান বাড়ছে। যত্রতত্র কৃষিজমিতে বাসস্থান নির্মাণ করছে মানুষ। যে কৃষিজমি অবশিষ্ট থাকছে, সেখানে বছরে ৩ থেকে ৪টি, কোথাও ৫টি ফসলের আবাদ হচ্ছে। ফলে মাটির নির্ধারিত প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ ক্রমাগত কমছে। এ চাহিদা পূরণে রাসায়নিক সার ব্যবহার করেন কৃষকরা। হরিনাকুণ্ডু উপজেলার কিসমতপুর গ্রামের কৃষক লিয়াকত হোসেন বলেন, ধানের পাশাপাশি পাট ও গমের চাষ করেন তিনি। তবে কয়েক বছর ধরে অতিরিক্ত সার না দিলে জমিতে ভালো ফলন আসে না, উৎপাদন কমে যায়। আমন মৌসুমে এক বিঘা জমিতে ৩০ কেজি ইউরিয়া সার দিলে বোরো মৌসুমে ৪৫ কেজি প্রয়োজন হয়। অন্য সারও বেশি লাগছে। এতে খরচ বেড়ে যায়। সার কম দিলে ফসল অপরিণত থাকে, ফলন কমে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর ভাটা মালিকরা নানা প্রলোভন দেখিয়ে কৃষকের জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইট তৈরি করা হয়। না বুঝে নানা অজুহাতে কৃষকও বিক্রি করছেন মাটি। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, পাঁচ বছরে জেলায় আবাদযোগ্য কৃষিজমি কমেছে ৪ হাজার ৬৫৩ হেক্টর। চাষযোগ্য জমি রয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৫ হেক্টর। বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, ঝিনাইদহ অঞ্চলের মাটিতে প্রাকৃতিক পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি রয়েছে। এজন্য একই জমিতে বছরে তিনের অধিক ফসল চাষ ও সারের অতিরিক্ত ব্যবহার বিশেষভাবে দায়ী। নাইট্রোজেন মাটিতে স্থায়ীভাবে থাকে না। ঝিনাইদহ মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের আঞ্চলিক গবেষণাগারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিখা নাসরিন বলেন, মাটির পুষ্টি উপাদান বজায় রেখে উৎপাদন বাড়াতে কৃষক সচেতনতা জরুরি হয়ে পড়েছে। রাসায়নিক সার কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এতে ফসলের দরকারি প্রায় সব উপাদান থাকে। জমি থেকে ফসল কাটার সময় নিচের কিছু অংশ রেখে দেয়ার পাশাপাশি সবুজ সার চাষ করে মাটিতে মিশিয়ে দিয়ে জৈব সারের চাহিদা পূরণ করা যায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, বাড়তি রাসায়নিক সার ফসল উৎপাদনে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করছে। সংসারে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরাও উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কৃষকদের খেয়াল রাখতে হবে, এ পরিস্থিতিতে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে সঠিক মাত্রায় সার ব্যবহার করতে হবে। জৈব সারে সব পুষ্টি উপাদান থাকলেও নাইট্রোজেন ও ফসফরাস কম থাকে। ফলে এগুলো বাইরে থেকে দিতে হয়।
 

বাংলারজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বাংলারজমিন সর্বাধিক পঠিত

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক/ এবারো ভোগাতে পারে ১৩ কিলোমিটার

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status