বাংলারজমিন
মণিপুরীদের ব্যতিক্রমী উৎসব ‘থাবল চুম্বা’
ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
২৪ মার্চ ২০২৩, শুক্রবারনতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রতি বছরই মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের লোকজন বর্ণিল সাজে আয়োজন করেন ঐতিহ্যবাহী ‘থাবল চুম্বা’ উৎসব। এ বছর অনুষ্ঠিত হলো মণিপুরী সম্প্রদায়ের ৩ হাজার ৪২১তম বর্ষবরণ। খোলা আকাশের নিচে যুবক-যুবতীদের একসঙ্গে হাতে হাত রেখে চোখ ধাঁধানো নৃত্য। ব্যতিক্রমী আয়োজনে চলে বিশেষ গান। সেই তালে দল বেঁধে অবিবাহিত ছেলেমেয়েরা একে অন্যের হাত ধরেই চালায় উন্মাতাল নৃত্য। মনোমুগ্ধকর ব্যতিক্রমী এই উৎসবটি মুণিপুরীদের ধর্মীয় রীতিনীতির ঐতিহ্য। গান ও নৃত্য উৎসর্গ করা হয় ঈশ্বরের সন্তুষ্টির জন্য। বিশেষ ওই গান ও নৃত্যে প্রার্থনা করা হয় কল্যাণের। বিশাল এলাকাজুড়ে চোখ ধাঁধানো গোলাকৃতির খোলা প্যান্ডেল। প্যান্ডেলজুড়ে সামিয়ানার মতো টানানো রঙ-বেরঙের মরিচ বাতি। বর্ণিল সাজের ওই পরিপাটি আলো আঁধারের প্যান্ডেলটি তৈরি অন্যরকম মাধুর্যময়ী শৈল্পীকথায়। দু’টি প্রবেশ পথের একটি ছেলেদের। আর অন্যটি মেয়েদের। দর্শকদের জন্যও আছে নির্দিষ্ট সীমানা। প্যান্ডেলের মধ্যখানের গোল বৃত্তে বসা কয়েকজন শিল্পী ও তার বাদক দল। রাত ১০টার দিকে শুরু হয় ওই বিশেষ গান। নিজস্ব রীতি-নীতি মেনে কয়েকটি পর্বে অনুষ্ঠান চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। বুধবার রাত ১০টায় জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামের উন্মুক্ত মাঠে মঞ্চ করে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও আয়োজন করা হয় ‘থাবল চুম্বা’ অনুষ্ঠান। পূর্ণিমার চাঁদের সঙ্গে মিল রেখে ‘থাবল চুম্বা’ নামের মিলনমেলায় প্রায় ৩ শতাধিক যুবক-যুবতী একসঙ্গে নৃত্য করে। থাবল চুম্বা অনুষ্ঠানের গান গাইতে আসা শিল্পী মাঙাং লৈমা, থোঙাম, বিজয় সিংহ বলেন, তারা সিলেট ও ভারতের মণিপুরের এ রকম অনুষ্ঠানে গান পরিবেশ করেন। এখানকার আয়োজন নানা কারণেই ব্যতিক্রম। কমলগঞ্জের আদমপুরের ভানুবিল মাঝেরগাঁও কমিউনিটি বেইজ টুরিজমের পরিচালক ও উৎসব উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক নিরঞ্জন সিংহ রাজু, কলেজ শিক্ষার্থী লহিমায়ুম জয়ী, সঞ্জিতা সিংহা ও আকাশ সিংহ মানবজমিনকে জানান, কমলগঞ্জ উপজেলার ১৪টি গ্রামের মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের লোকজনের উদ্যোগে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর বর্ষবরণ ও ‘থাবল চুম্বা’ উৎসবের আয়োজন করা হয়। এখানে সিলেট ও ভারতের মণিপুরসহ দেশের নানা প্রান্তে থাকা মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজন এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেছেন। থাবল চুম্বা ছাড়াও এখানে দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল গুণীজন সংবর্ধনা, মণিপুরীদের গবেষণামূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন, বিভিন্ন ভাষার কবিদের অংশগ্রহণে কবিতা পাঠ, খেলাধুলা, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সব শেষে অনুষ্ঠিত হয় মনিপুরীদের ঐতিহ্যবাহী ‘থাবল চুম্বা’। ‘যুবক-যুবতীরা বছরে একবার তাদের চিরাচারিত কাঙ্ক্ষিত ধর্মীয় উৎসবে যোগ দিতে পেরে উৎফুল্ল এমনটিই অভিমত প্রকাশ করেন অংশগ্রহণকারী, অভিভাবক ও দর্শনার্থীরা।