শেষের পাতা
যে কারণে তুরস্ক সিরিয়ায় ভূমিকম্পে এত প্রাণহানি
মানবজমিন ডেস্ক
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবারতুরস্ক, সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্প। সিরিয়া যখন দীর্ঘস্থায়ী গৃহযুদ্ধের ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত, তুরস্কের অর্থনীতি বেঁচে আছে মুমূর্ষু অবস্থায়- তখন এই ভূমিকম্প তাদের ভিতকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে মৃতের সংখ্যা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি হিসেবে নিহতের যে সংখ্যা বলা হচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা তারচেয়ে ৮/১০ গুণ বেশি হতে পারে। কারণ, আস্ত ভবন গলে পড়েছে। এমন ভবন প্রায় ১২ হাজার। এর মধ্যে কি পরিমাণ মানুষ আটকে আছেন, তার সঠিক হিসাব কেউ বলতে পারেন না। কিন্তু কেন এত ভয়াবহ ভূমিকম্প! এর নেপথ্যে কারণ কী! আলোচনায় এসেছে এক ব্যতিক্রমধর্মী তরঙ্গের কথা। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম বলছে, সোমবার ভোরে কেঁপে ওঠে তুরস্ক। সেই কম্পন ধাবিত হয় সিরিয়ায় ও আশপাশের দেশগুলোতে। আনন্দবাজার লিখেছে, আমাদের পৃথিবীটা কয়েকটি প্লেটের উপর ভাসছে।
এই প্লেটগুলোর একটির সঙ্গে অন্যটির ধাক্কার জেরেই সৃষ্টি হয় ভূমিকম্প। কখনো এই সংঘর্ষ এতটাই জোরে হয় যে, কোনো একটি প্লেটের কোণা মুচড়ে যায়। অতিরিক্ত চাপ পড়লে কোনো প্লেট ভেঙেও যায়। এই সংঘর্ষে সৃষ্টি হয় বিপুল পরিমাণ শক্তি। সেই শক্তি বেরিয়ে আসার পথ খোঁজে। এর প্রভাবে সৃষ্টি হয় এক রকম ঢেউ বা কম্পন, যা ভূমিকম্প। তুরস্কের ক্ষেত্রে কী হয়েছে! কেন এত ধ্বংসাত্মক হলো এই ভূমিকম্প? ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে, টেকটনিক প্লেটের সঞ্চালন ছাড়াও ভূমিকম্পের আরও একটি কারণ আছে। তা হলো তরঙ্গের প্রকৃতি। তুরস্কের বেশির ভাগ অংশ অ্যানাটোলিয়ান প্লেটের উপর রয়েছে। এই প্লেটকে ঘিরে রেখেছে আফ্রিকা, ইউরেশীয় এবং আরবীয় প্লেট। আফ্রিকা এবং আরবীয় প্লেটের মধ্যে যখন সংঘর্ষ হয়, তখনই কেঁপে ওঠে তুরস্ক। তাই তুরস্কে মাঝেমধ্যেই ভূমিকম্প হয়। তবে এবারের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির পেছনে বেশি ভূমিকা হয়েছে কম্পনে সৃষ্ট তরঙ্গের প্রকৃতি। যখন টেকটনিক প্লেট নড়েচড়ে ওঠে তার থেকে সৃষ্ট শক্তি দু’টি ধাপে চারটি তরঙ্গের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে তাণ্ডবলীলা চালায়। প্রথম ধাপটিকে বলা হয় ‘গ্রাউন্ড ওয়েভস’। গ্রাউন্ড ওয়েভস: এই ধাপে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে দু’ধরনের তরঙ্গ ভূপৃষ্ঠে পৌঁছে ধ্বংসলীলা চালায়। একটি হলো পি ওয়েভ, অন্যটি হলো এস ওয়েভ।
পি ওয়েভ অনেকটা স্প্রিংয়ের মতো হয়। এই তরঙ্গে পেছনের দিকে রিংগুলো সামনের দিকের রিংগুলোর উপর চাপ দিতে দিতে এগোয়। এর তরঙ্গের দৈর্ঘ্য এবং গতি অত্যন্ত বেশি। ফলে ভূপৃষ্ঠে দ্রুত পৌঁছায় এই তরঙ্গ। এস ওয়েভ অনেকটা ইংরেজি হরফ এস-এর মতো এগোতে থাকে। তবে এই তরঙ্গের গতি পি ওয়েভের তুলনায় কম। সারফেস ওয়েভস: দ্বিতীয় ধাপের মধ্যে রয়েছে ‘সারফেস ওয়েভ’। এটি আবার দু’ধরনের। একটি হলো- রেলি ওয়েভ, অন্যটি লাভ ওয়েভ। রেলি ওয়েভ সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো এগোতে থাকে। কোনো স্থির পানিতে যখন ঢিল মারা হয়, তার ফলে যে ধরনের তরঙ্গ সৃষ্টি হয়, রেলি ওয়েভ ঠিক সেই ধরনের। আর এই তরঙ্গ অত্যন্ত শক্তিশালী। ভয়ানক ধ্বংসলীলা চালায় এই তরঙ্গ। আর এই তরঙ্গই আছড়ে পড়ছে তুরস্কে। যে কারণে মৃত্যুর সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বহু গুণ বেড়ে গিয়েছে। ফিলিপাইনের ভূ-বিজ্ঞানী রেনাটো সালিডমের মতে, ৭ মাত্রার তীব্রতার কম্পন থেকে সৃষ্ট শক্তি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিরোশিমায় আঘাত হানা পরমাণু বোমা থেকে সৃষ্ট শক্তির প্রায় ৩২ গুণ। তবে এই ধরনের কম্পনে কতোটা ক্ষয়ক্ষতি হবে, তা নির্ভর করে ওই অঞ্চলের জনঘনত্ব এবং কম্পনের উৎসস্থল ভূপৃষ্ঠের কতোটা গভীরে তার উপর। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ভূ-কম্পন বিশেষজ্ঞ জানুকা আট্টানায়কের মতে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্প অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক। ৫.৯ তীব্রতার চেয়ে তা প্রায় ৭০৮ গুণ বেশি শক্তিশালী। এই মাপের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে টেকটনিক প্লেটের সংঘর্ষের ফলে যে শক্তি নির্গত হয় তার পরিমাণ ৩২ পেটাজুল। যে শক্তি দিয়ে নিউ ইয়র্কের মতো বড় শহরে চার দিন বিদ্যুৎ মিলতে পারে।
মন্তব্য করুন
শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]