শেষের পাতা
তিন মিনিটেই ৩৫ লাখ টাকা চুরি
স্টাফ রিপোর্টার
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বুধবার
চোর চক্রের সদস্য ৮ বন্ধু। চুরি করে জেলে গিয়ে পরিচয়। এরপর জামিনে বেরিয়ে পুনরায় সংঘবদ্ধভাবে চুরির কাজে জড়িয়ে পড়েন তারা। দেখতে সুদর্শন। পোশাকে কেতাদুরস্ত। ফ্রেন্সকাট দাড়ি, পরনে দামি টি-শার্ট-প্যান্ট। পিঠে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের ব্যাগ। প্রথম দেখায় যে কারও মনে হবে তারা প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। রাজধানীর ফাঁকা এবং অপেক্ষাকৃত কম নিরাপত্তাসম্পন্ন বাড়িগুলো টার্গেট করতো চোর চক্রটি। এরপর সুযোগ বুঝে সর্বোচ্চ দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে চুরি করে সটকে পড়তো তারা।
৮ বন্ধুর এই চক্রটি চুরি করতে এতটাই পারদর্শী যে ২-৩ মিনিটের মধ্যে টার্গেটকৃত বাসায় দিনে-রাতের যেকোনো সময় চুরি করে মুহূর্তেই সটকে পড়তে পারেন। চুরির আগে তারা সাধারণ মানুষদের মতো জীবনযাপন করে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। আর চলতি পথে হাঁটতে কিংবা গল্পের ছলে চুরির টার্গেট ঠিক করে তারা। আর এই চুরির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় সোর্সকে টার্গেটকৃত বাড়ির সমস্ত তথ্য পেতে ব্যবহার করে। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, চক্রের অন্যতম সদস্য মামুন কারাগার থেকে গত দুই মাস আগে বের হয়ে আবার চুরি করা শুরু করে। মামুন পেশায় নাপিত। আর আলী রেন্ট- এ কারের চালক। তার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে। কোনো অপারেশনে বের হওয়ার আগেই কে কোন দায়িত্ব পালন করবেন তা ঠিক করা থাকে। তাদের টার্গেটে পরিণত হয়েছিলেন পল্লবীর গৃহবধূ হোসনা আক্তার। ভাড়া বাসায় দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে তার সংসার। ছোট ছেলে হাসিন ইশরাক জিসান ও স্বামী আবদুর রশিদ ভূঁইয়াকে নিয়ে ঘটনার আগে গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা বেড়াতে যান হোসনা। এ সময় বড় ছেলে হাসনাত হিমেল রাঙ্গামাটি বেড়াতে যান। সম্প্রতি গ্রামের বাড়ি থেকে জমি বিক্রির ১০ লাখ টাকা ঢাকার বাসায় রাখেন। আর ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা তুলেছিলেন। সবমিলিয়ে বাসায় নগদ ১৮ লাখ টাকা রাখা ছিল। আর ছেলের বিয়ে উপলক্ষে ১৭-১৮ ভরি স্বর্ণালংকার ক্রয় করেন। সবকিছুই চুরি করে নিয়ে যায় চোর চক্রটি।
রাজধানীর গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের অতিরিক্ত উপ- পুলিশ কমিশনার রাশেদ হাসান মানবজমিনকে বলেন, মিরপুরের ৬ নম্বর সেকশনের ২ নম্বর রোডের ১৭ নম্বর বাড়ির তৃতীয়তলার ফ্ল্যাট থেকে ১৮ লাখ টাকা ও ১৭ ভরি গহনা লুট হয় গত জানুয়ারি মাসে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ৮ বন্ধুর একটি চোরের দলের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। পল্লবীর ওই বাসার চুরি হওয়া স্বর্ণালংকার এখনো উদ্ধার করা যায়নি। চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার শেষে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তারা চুরির বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। এ ঘটনায় সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তাদেরকে শনাক্ত করা হয়েছে। চুরির মালপত্র তারা এক চোরের ‘গুরুর’ কাছে জমা রেখেছে বলে দাবি করছে। গোয়েন্দা মিরপুর এর উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মানস কুমার পোদ্দার বলেন, ওই বাসা থেকে চুরি যাওয়া একটি মোবাইল ফোন ও তালা ভাঙার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। একই চক্রের আরও ২-৩ জনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। চক্রের মূলহোতা মামুনের বিরুদ্ধে ঢাকা, নোয়াখালী এবং গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় তিনটি চুরির মামলা রয়েছে। চক্রের অন্য সদস্যরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গাঢাকা দিয়ে আছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন
শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]