শেষের পাতা
যেভাবে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন হ্যারি
মানবজমিন ডেস্ক
৩১ জানুয়ারি ২০২৩, মঙ্গলবার
প্রিন্স হ্যারির প্রকাশিত স্পেয়ার বইতে তিনি সব থেকে বেশি অগ্রাধিকার দিয়েছেন তার সামরিক জীবনের উপরে। বইয়ের একটি বড় অংশেই ছিল আফগানিস্তানে তার জীবন কেমন ছিল তা নিয়ে। তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বৃটিশ বাহিনীর অংশ হয়ে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন হ্যারি। তবে কীভাবে তার আফগানিস্তানে যাওয়া হলো সেটি তিনি তুলে ধরেছেন বইতে।
বইতে তিনি লেখেন যে, তার কমান্ডিং অফিসার ছিলেন এড স্মিথ-ওসবোর্ন। তিনি স্মিথকে পছন্দ করতেন। একদিন হ্যারি তার কমান্ডিং অফিসারের সঙ্গে দেখা করেন এবং কোনো একটি অপারেশনে যোগ দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হ্যারি হুমকি দেন, যদি তাকে কোথাও না পাঠানো হয় তাহলে তিনি আর্মি থেকে বেরিয়ে যাবেন। যদিও হ্যারি নিজেও নিশ্চিত ছিলেন না যে তিনি আর্মি থেকে বেরিয়ে যেতে চান কিনা, তবে হুমকি দেয়ার জন্য এই কথা বলেন তিনি।
হ্যারি লিখেছেন, আমি জানতাম রাজনৈতিকভাবে, কূটনৈতিকভাবে এবং কৌশলগতভাবে চিন্তা করলে তার আর্মি ছাড়ার সিদ্ধান্ত মানতে পারবেন না স্মিথ। কারণ, একজন প্রিন্স আর্মিতে থাকলে তাকে জনসংযোগ এবং নতুন নিয়োগের যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া আমি যদি আর্মি ছেড়ে দেই তাহলে তাকে হয়তো তার ঊর্ধ্বতনরা দোষারোপ করতে পারে।
যদিও হ্যারি বইতে লিখেছেন, তিনি নিজে মোটেও বিশ্বাস করতেন না আফগানিস্তান নিরাপদ কোনো অপশন হতে পারে। তিনি আফগানিস্তানকে ইরাকের থেকেও বেশি ভয়ঙ্কর বলেছেন। কারণ ওই সময় আফগানিস্তানে বৃটেনের সাত হাজার সেনা ছিল এবং প্রতিদিনই তাদেরকে ভয়াবহ সব লড়াইয়ে অংশ নিতে হচ্ছিল। কিন্তু কমান্ডিং অফিসারের নির্দেশ মেনে নেয়া ছাড়া তার হাতে উপায় ছিল না। হ্যারি তাকে প্রশ্ন করলেন, আমি আফগানিস্তানে গিয়ে কি করবো, কর্নেল? উত্তর পেলেন, ফ্যাক বা ফরওয়ার্ড এয়ার কন্ট্রোলার। ফ্যাকদের সাধারণত আকাশ থেকে ভূমিতে হামলা চালাতে হয়।
হ্যারি জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে কেন এমন দায়িত্ব দেয়া হলো? উত্তরে কর্নেল স্মিথ বলেন, কারণ তালেবানরা এখন সব জায়গায় রয়েছে। কিন্তু তাদেরকে সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। যেন ভূত খুঁজে বেড়াচ্ছি আমরা। তোমাকে (হ্যারিকে) আকাশ থেকে নিচে নজর রাখতে হবে। আর তালেবানের কোনো বিমান বাহিনী নেই, কোনো বিমান নেই, তাই তোমার জন্য এটাই সবথেকে সহজ। আমরা বৃটিশরা আফগানিস্তানের আকাশে রাজত্ব করছি।
বইতে হ্যারি জানান, ওই সময় আফগানিস্তানে বৃটিশ সেনাবাহিনীর কাছে ছিল এপাচে হেলিকপ্টার, টর্নেডো, মিরেজ, এফ-১৫, এফ-১৬ এবং এ-১০ যুদ্ধবিমান। তাদের কাছে থেকে সেরা অপশনটাই তারা আফগানিস্তানে ব্যবহার করেছে। তবে হ্যারিকে এ জন্য কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ সবাই-ই এই দায়িত্ব চাইতো। তাছাড়া আফগানিস্তানে পাঠানোর আগে তাকে দীর্ঘ প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়েও যেতে হবে।
প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর ছাড়পত্র পেতে হ্যারিকে নানা পরীক্ষা দিতে হয়েছে। হ্যারি লিখেছেন, এমন ২৮টি পরীক্ষা দিয়েছেন তিনি। এসব পরীক্ষায় তার সামনে ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্যপট তৈরি করা হয় এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী হ্যারিকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। হ্যারি বলেন, দুঃখজনকভাবে আমি অন্য সবার মতো সাধারণ কোনো এলাকায় প্রশিক্ষণ নিতে পারিনি। সালিসবারি প্লেন, যেখানে সবাই প্রশিক্ষণ নেয় তা খুবই খোলামেলা এলাকা। যে কেউ আমাকে দেখে ফেলতে পারে। ফলে গণমাধ্যমের কাছে সেই খবর পৌঁছে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল। এতে আমার গোপনীয়তা শেষ হয়ে যেত এবং আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই ফিরতে হতো। তাই আমি ও কর্নেল স্মিথ ঠিক করলাম, নির্জন কোনো স্থানে আমাকে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। শেষে ঠিক করা হলো স্যান্ড্রিংহামকে। সে সময় হ্যারির পিতা রাজা চার্লস স্যান্ড্রিংহামে গিয়েছিলেন তাকে দেখতে। পিতার উপস্থিতি কীভাবে তাকে অনুপ্রাণিত করেছে তা বইতে উল্লেখ করেছেন হ্যারি।
মন্তব্য করুন
শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]