ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্বজমিন

কোটি ডলারের বিলাসিতার বদলে সন্ন্যাসজীবন

মানবজমিন ডেস্ক

(১ বছর আগে) ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার, ৪:৩১ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:০৫ অপরাহ্ন

mzamin

আট বছর বয়সী দেবাংশী সিংভি। সে পারতো শত কোটি ডলারের ডায়মন্ড ব্যবসা পরিচালনা করতে। কিন্তু ভারতের এক ধনী ডায়মন্ড ব্যবসায়ীর এই মেয়ে বেছে নিয়েছে সন্ন্যাসীর জীবন। ভারি শাড়ি, খালি পায়ে দরজা থেকে দরজায় ভোটে ভিক্ষা চেয়ে। ধনেশ এবং অমি সিংভির দুই মেয়ের মধ্যে বড় দেবাংশী। গত সপ্তাহে সে বিশ্বে পরিচিত হয়েছে। পরিণত হয়েছে সন্ন্যাসীতে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। 
ভারতে জৈনবাদ অনুসরণ করেন প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ। কমপক্ষে ২৫০০ বছর আগে ভারতে এই ধর্মের আবির্ভাব। ধর্মীয় বোদ্ধারা বলছেন, দিন দিন জৈন সম্প্রদায়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
তবে দেবাংশীর মতো এত কম বয়সী বাচ্চার এই সন্ন্যাসব্রত গ্রহণের বিষয়টি অস্বাভাবিক। পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের সুরাট শহরে গত সপ্তাহের বুধবার দীক্ষা গ্রহণ করে দেবাংশী। এতে উপস্থিত ছিলেন জৈন সম্প্রদায়ের সিনিয়র সব ভিক্ষু। উপস্থিত ছিলেন হাজার হাজার মানুষ। পিতামাতার সঙ্গে সে ওই শহরের ভেসু এলাকায় ভেন্যুতে উপস্থিত হয়। এ সময় সে ছিল রত্নখচিত। চমৎকার সিল্পের পোশাক পরা ছিল। তার মাত্রায় ছিল ডায়মন্ডখচিত ক্রাউন। অনুষ্ঠান শেষে সে অন্য নান বা সন্ন্যাসীদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় তার পরণে ছিল সাদা শাড়ি। মাথার চুল ছিল ফেলে দেয়া। তবে তা ছিল ঢাকা। ছবিতে তাকে দেখা গেছে একটি ঝাড়ু হাতে। তার পথে যেসব অশুভ আসবে তাকে সে ঝাড়ু দিয়ে দূরে সরিয়ে দিতে ব্যবহার করবে এটি। 
ওই সময় থেকেই দেবাংশী অবস্থান করছে একটি ‘উপাশ্রয়ে’। এখানে জৈন সম্প্রদায়ের ভিক্ষু এবং নান’রা অবস্থান করেন। তার পরিবারের বন্ধু এবং স্থানীয় ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনীতিক সুরাট ভিত্তিক ডায়মন্ড ব্যবসায়ী কীর্তি শাহ বলেছেন, দেবাংশী এখন আর বাড়ি থাকতে পারবে না। তার পিতামাতা এখন আর তার পিতামামা নন। দেবাংশী এখন একজন ‘স্বাধ্বী’। একজন জৈন সন্ন্যাসীর জীবন বাস্তবেই কঠিন। এখন সে যেকোনো স্থানে যেতে পারবে হেঁটে। কোনো পরিবহনে চড়বে না কখনো। ঘুমাবে একটি সাদা কাপড়ে মেঝেতে। সূর্যাস্তের পর কিছু খেতে পারবে না। 
দেবাংশী সাংভি জৈন সম্প্রদায়ের ওই অংশের, যারা এখনও শিশুদেরকে মঙ্ক বা ভিক্ষু হিসেবে গ্রহণ করে। অন্য তিনটি গোষ্ঠী আছে এ সম্প্রদায়ে। তারা শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের ভিক্ষু হিসেবে গ্রহণ করে। দেবাংশীর পিতামামা খুব বেশি ধার্মিক বলে পরিচিতি আছে। পরিবারটির বন্ধুরা বলেছেন, বালিকাটি একেবারে ছোট্ট থাকার সময় থেকেই আধ্যাত্মিক জীবনের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। টাইমস অব ইন্ডিয়া রিপোর্টে বলেছে, কখনো টেলিভিশন বা সিনেমা দেখেনি দেবাংশী। এমনকি সে কোনো মল বা রেস্তোরাঁয় যায়নি। খুব ছ্ট্টো সময় থেকেই সে দিনে তিনবার প্রার্থনা করে। দুই বছর বয়স থেকে ফাস্ট বা অনাহারে থাকা শুরু করে। 
সন্ন্যাসব্রত গ্রহণের আগেরদিন তার পরিবার সুরাটে বিশাল এক সেলিব্রেশন র‌্যালি বের করে। এতে অংশ নেয় উট, ঘোড়া, ষাঁড়ের গাড়ি। ছিল ড্রামার। আর সঙ্গে ছিল জৈন সম্প্রদায়ের বিশেষভাবে মাথায় বাঁধা টারবান বা পাগড়ি। তারা সড়কে র‌্যালি করার সময় হাজার হাজার মানুষ তা প্রত্যক্ষ করে। এতে বিনোদন দিতে উপস্থিত ছিল ড্যান্সার। তারা নানা রকম নাচ পরিবেশন করে। দেবাংশী ও তার পরিবারের সদস্যরা বসেছিল হাতিতে টানা একটি রথে। এ সময় জনতা তাদের ওপর গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছুড়ে মারে। র‌্যালি আয়োজন করা হয় মুম্বই এবং বেলজিয়ামের অন্তরীপ শহরে। এসব স্থানে ব্যবসা আছে সিংভির। 
এই আয়োজনে সমর্থন ছিল জৈন সম্প্রদায়ের। তবে দেবাংশীর সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। তার্কিকরা বলছেন, মেয়েটি নিজের ভালমন্দ বুঝে নেয়া পর্যন্ত প্রাপ্ত বয়সে না পৌঁছা পর্যন্ত কেন পরিবারটি অপেক্ষা করতে পারল না। এ জন্য দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন শাহ। একটি শিশুকে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করানোর ফলে অস্বস্তি থেকে তিনি দূরে থাকতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, কোনো ধর্মেই শিশুদেরকে মঙ্ক বা ভিক্ষু বানানোর অনুমতি দেয়া উচিত নয়। আরও বলেন, সে এখনও শিশু। এসব বিষয়ে সে এখন কি বোঝে? বাচ্চাদের বয়স ১৬ বছর না হলে কলেজে পড়াশোনা না করা পর্যন্ত শিশুরা তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। যা তাদের পুরো জীবনের ওপর প্রভাব ফেলবে সে সম্পর্কে কি করে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে? 
মুম্বইয়ের শিশু সুরক্ষা বিষয়ক কনসালট্যান্ট প্রফেসর নীলিমা মেহতা বলেন, জৈন সম্প্রদায়ের নান বা সন্ন্যাসব্রত অত্যন্ত কঠিন জীবন। এত অল্প বয়সী একটি শিশুকে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া সম্প্রদায়ের অন্য সদস্যরা অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। দেবাংশীর সন্ন্যাসব্রতের খবর প্রকাশ হওয়ার পর অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিবারটির সমালোচনা করা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে তার পিতামাতা শিশু অধিকার লঙ্ঘন করেছেন। এ বিষয়ে সরকারের যুক্ত হয়ে এই চর্চা বন্ধ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন শাহ। 
 

বিশ্বজমিন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

বিশ্বজমিন সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status