ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শেষের পাতা

বিএনপি কার্যালয়ে সংঘর্ষ ঘিরে আটক, ৪ জন বাদে সব নেতাকর্মীই কারাগারে

রাশিম মোল্লা
১৪ জানুয়ারি ২০২৩, শনিবার
mzamin

ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র প্রায় ১৫০০ নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে বলে বিএনপি’র দাবি। এরমধ্যে গত ৭ই ডিসেম্বর বিএনপি অফিসের সামনে থেকে শীর্ষ নেতাকর্মীসহ ৪৭৩ জনকে আটক করে পুলিশ। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শ্রমিক নেতা এডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস , শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, ফজলুল হক মিলন, সেলিম রেজা হাবিব, যুবদলের  সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা জেলা বিএনপি’র সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকসহ অন্য নেতারা কারাগারে রয়েছেন। তবে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বিচারিক আদালতে চতুর্থবারের মতো ব্যর্থ হয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে জামিন পান।

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট জয়নুল আবেদীন মেসবাহ মানবজমিনকে বলেন, ঢাকার মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র প্রায় ১৫০০ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র চারজনের জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি আমানুল্লাহ আমান ও বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলকে শুরুতেই জামিন দেয়া হয়। প্রায় এক মাস পর বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের জামিন মঞ্জুর করেন। এ ছাড়া আর কারও জামিন দেয়নি আদালত। আগামী ২৬শে জানুয়ারি রুহুল কবির রিজভী, শিমুল বিশ্বাস, সেলিম রেজা হাবিবের মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। 

বিএনপি নেতাদের দাবি গায়েবি মামলায় কারাবন্দি বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের কারাবন্দি করায় তাদের চিকিৎসায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। কারাগারে তারা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা।

বিজ্ঞাপন
হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাবন্দি করায় বর্তমানে কারাগারে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।  গত বৃহস্পতিবার ভোরে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শ্রমিক নেতা এডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের মা মৃত্যুবরণ করেন। প্যারোলে মুক্তি নিয়ে জানাজায় অংশ নেন তিনি। গতকাল সকালে ফের কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীকে কারাগারে বসেই এলএল এম পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স মানবজমিনকে বলেন, ১০ই ডিসেম্বরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে তাদের প্রায় ১৫০০ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ।

 বার বার জামিন আবেদন করেও চারজন ছাড়া এখন পর্যন্ত আমাদের অন্য নেতাকর্মীর জামিন মেলেনি। তিনি বলেন, কারাবন্দি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ শীর্ষ নেতারা দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস, হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে-বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। অনেকে একাধিকবার ভয়াবহ করোনা রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। বর্তমানে গায়েবি মামলায় কারাবন্দি বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের কারাবন্দি করায় তাদের চিকিৎসায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়েছে। কারাগারে তারা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে করায় বর্তমানে কারাগারে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। কারাবিধি অনুযায়ী অনেক নেতা ডিভিশন পাওয়ার অধিকারী হলেও প্রথম দিকে দেয়া হয়নি। অনেক কারাবন্দি নেতাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। তাদেরকে ২৪ ঘণ্টা লক-আপে রাখা হচ্ছে। জামিন পাওয়ার অধিকারী হলেও বার বার জামিন নামঞ্জুর করা হচ্ছে। তারা গুরুতর অসুস্থ ও বয়োজ্যেষ্ঠ হলেও সরকারের নির্দেশেই তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না। এমনকি বিচারিক আদালত তাদেরকে কারাগারে ডিভিশন দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ আইনজীবীদের। পরবর্তীতে হাইকোর্টে ডিভিশন পেতে তাদের পরিবারকে রিট আবেদন করতে হয়।

বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল মানবজমিনকে বলেন,  দেশে যদি আইনের শাসন থাকতো তাহলে বিএনপি’র আটক সকল নেতাকর্মীদেরই অন্তত জামিন পেতেন। আসলে নিম্ন আদালত সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে বলে আমরা মনে করছি। আমরা যে বলে আসছি বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়, এই মামলা তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাদের জামিন না হওয়া প্রমাণ করে দেশে কোনো আইনের শাসন নেই। তিনি আরও বলেন, মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের জামিনের জন্য আবেদন করা হয়।  প্রায় দেড় মাস পরে জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। মূলত বিষয়টি রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘ সময় পরে শুনানির দিন ধার্য করেছে আদালত। ওদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশে কখনও আদালতকে ব্যবহার করেনি সরকার। এখনও করছে না। মির্জা ফখরুলের জামিন তারই প্রমাণ।
সূত্র জানায়, গত ৭ই ডিসেম্বর বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আহত হন অনেকে। এ সময় বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে চাল-ডাল, পানি, নগদ টাকা ও বিস্ফোরক দ্রব্য পাওয়া যায় বলে দাবি করে পুলিশ।

 এ ঘটনায় ডিসেম্বরে মতিঝিল, পল্টন ও শাহজাহানপুর থানায় প্রায় ৪৭১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় প্রায় দুই হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়। ৮ই ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে মির্জা ফখরুল ও আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ। পরদিন ৯ই ডিসেম্বর পুলিশ তাদের আদালতে হাজির করে। এ সময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত বিএনপি নেতাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি আমানুল্লাহ আমান ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের জামিন মঞ্জুর করে বাকিদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

   

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status