শেষের পাতা
সরজমিন
‘কমলা’ রাজ্যের দুর্দিন
ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে
২৫ নভেম্বর ২০২২, শুক্রবার
তবে কী ঐতিহ্য হারাচ্ছে জুড়ীর কমলার বাগান। এখন এমন আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তায় কমলা রাজ্যের অধিবাসীরা। এ বছর কমলা চাষিদের এমন উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রাতদিন একাকার। কমলা বাগানের সঙ্গে তাদের বসতভিটাও হারানোর ভয়। চাষিরা জানান, এ বছর তারা কমলা গাছের পরিচর্যা প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন। তাই অধিকাংশ বাগানে ফলনও নেই আশানুরূপ। চাষিরা জানান, তাদের বসত ভিটাই যেখানে থাকছে না সেখানে কমলা গাছের পরিচর্যা আর ফলন নিয়ে ভাবার সময় কোথায়। এখানে সাফারি পার্ক হবে। ইতিমধ্যে চালানো হয়েছে মাপজোখ। এমনটা জানার পর কোনো চাষিই আর কমলা গাছ পরিচর্যা বা নতুন করে বাগান সৃজনের আগ্রহ হারিয়েছেন।
বছরের এই সময়ে জেলার জুড়ী, বড়লেখা ও কুলাউড়াসহ পাহাড়ি টিলাগুলোর পরতে পরতে থাকে কমলার বিমোহীত মৌ মৌ ঘ্রাণ। আর ধুম পড়ে কমলা ক্রয় বিক্রয়ের। তাই চাষিরা রাতদিন ব্যস্ত থাকেন ফল আর গাছ পরিচর্যায়। এ বছর ব্যতিক্রম। ফলন আসার শুরুতে খরা ও অনাবৃষ্টিতে ফলন আসে কম। এ ছাড়া পরিচর্যা না থাকায় কমলার আকারও হয়েছে অনেকটাই ছোট। চাষীরা জানান, চেনা অচেনা নানা রোগবালাইর সঙ্গে যুদ্ধ করে কোনোরকম টিকিয়ে রেখেছিলেন এ অঞ্চলের কমলার বাগান। এখন তা নিয়ে অন্তহীন দুশ্চিন্তায়। পাহাড়ি টিলায় সম্ভাবনাময়ী ফসল ‘কমলা’। সুমিষ্ট রসের এ ফসলের চাহিদাও সর্বত্রই। জানা গেল আগে থেকেই এ অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে কমলা চাষ হলেও ২০০১ সালে কৃষি বিভাগের পরামর্শে জেলার জুড়ী উপজেলার পাহাড়ি টিলাগুলোতে বাণিজ্যিক সম্ভাবনায় সৃজন করা হয়েছিল বাগান। কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উদ্যোগে নেয়া হয় ‘বৃহত্তর সিলেট জেলা সমন্বিত কমলা ও আনারস চাষ উন্নয়ন প্রকল্প’। তখন চাষিদের ব্যাপক আগ্রহ আর কৃষি বিভাগের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে গড়ে ওঠে কমলার রাজত্ব। সম্প্রতি ওই এলাকায় সাফারি পার্ক গড়ে তোলার সিদ্ধান্তে সম্ভাবনাময়ী এ ফসলটির চাষাবাদ নিয়েও বাড়ছে চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। চাষিরা জানান এ বছর প্রতি কেজি (মাঝারি ও বড়) পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১৩০ টাকা।
জুড়ী উপজেলার অধিকাংশ পাহাড়ি টিলাগুলোয় কমবেশি চাষ হচ্ছে কমলা। লালছড়া, লাঠিটিলা, জরিছড়া, হায়াছড়া, জামকান্দি, কচুরগুল শুকনা ছড়া, রূপা ছড়া এলাকার কমলা চাষি মুর্শেদ মিয়া, ফখর উদ্দিন, জয়নুল ইসলাম, রাসেল আহমদ, লোকমান মিয়া, অজু মিয়াসহ অনেকেরই সঙ্গে কথা হলে তারা জানালেন রোগাবালাই, সেচ সুবিধা না থাকাসহ নানা সমস্যার মধ্যেই ভালো চলছিল কমলা চাষ। হঠাৎ করে এখানে সাফারি পার্ক হওয়ার ঘোষণায় উচ্ছেদ আতঙ্কে চাষিরা বাগানের পরিচর্যা যেমন করছেন না তেমনি নতুন চারাও লাগাচ্ছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের মাথাগোঁজার ঠাঁই আর জীবন জীবীকা নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। কারণ কমলা উৎপাদন ও বিক্রি তাদের একমাত্র উপার্জনের উৎস। চাষিরা জানান তাদের এলাকায় দেশীয় উন্নত প্রজাতির নাগপুরী ও খাসি কমলা চাষ হয় বেশি। তাদের তথ্য মতে চৈত্র ও বৈশাখ মাসে কমলা গাছে ফুল ও ফল আসে। আর আশ্বিন ও কার্তিক মাসে ফল পাকা শুরু হয়। একটি কমলা গাছে ৩শ’ থেকে ২ হাজার পর্যন্ত ফল দেয়।
কমলা গাছ রোপণের ৩-৪ বছরের মাথায় ফল আসতে শুরু করে। একটি কমলা গাছ রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত না হলে ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে এবং ফল দেয়। পাহাড় টিলাবেশষ্টিত এ অঞ্চলের অন্যতম অর্থকরী ফসল এটি। মৌসুমী এই ফসলটি বিক্রি করে পাহাড়ি এ জনপদের লোকজন বছরজুড়ে চালান তাদের জীবন জীবীকা। চাষিরা জানালেন মৌসুমের প্রতিদিনই ওখানকার কমলা পাইকারদের হাত হয়ে যাচ্ছে দেশের নানা প্রান্তে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় জেলাজুড়ে ১৮০ হেক্টর জমিতে কমলার চাষ হয়েছে। তার মধ্যে জুড়ী উপজেলায় ৯৪ হেক্টর, বড়লেখায় ৬০ হেক্টর, কুলাউড়ায় ২০ হেক্টর। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. শামসুদ্দিন আহমদ জানান আমরা জুড়ীর কমলা চাষিদের অভয় দিয়ে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পরামর্শ দিচ্ছি। ওখানে সাফারি পার্ক হলেও কমলা বাগান ও তাদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলেই সচেতন রয়েছেন।
মন্তব্য করুন
শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন
শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত
বিএনপি’র আন্দোলন/ সিলেটে মাঠ দখলে নিতে নেতারা মাঠে
অনলাইনে রোমান্স স্ক্যাম/ প্রতারণার টাকায় বাগানবাড়ি-ডুপ্লেক্স ভবন

জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]