বাংলারজমিন
পরিবারের অভিযোগ
মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে কুয়েট ছাত্র জাহিদুরকে
স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, বৃহস্পতিবার
আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে যেসব কথা বলা হচ্ছে তা সত্য নয়। আমার ভাইকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। ও কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত না। জাহিদুর এটা করেছে আমার বিশ্বাস হয় না। যদি করেও থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যাররা আছেন, হল প্রভোস্ট আছেন- তারা বিচার করবেন। এভাবে নির্মমভাবে পেটাবে কেন? এমন প্রশ্ন রেখে জাহিদুর রহমানের বড় ভাই নাঈম এসব অভিযোগ করেন। গত সোমবার খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) এর সিকিউরিটি অফিসার মো. সাদেক হোসেন প্রামাণিক বাদী হয়ে খুলনা মহানগরীর খানজাহান আলী থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ ওই মামলায় জাহিদুরকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে ভর্তি রয়েছেন। শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমান ভোলা তজুমদ্দিন সোনাপুর গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে। মামলার অপর আসামি রেজওয়ান শ্যাম (২১) ভোলার বোরহান উদ্দিন মুশির হাট গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ ও কুয়েট সূত্রে জানা গেছে, জাহিদুর কুয়েট আবাসিক হলে মাস দুই আগে ওঠেন। তবে কুয়েটে তার তেমন কোনো বন্ধু ছিল না। বেশির ভাগ সময় মোবাইল ফোন আর ল্যাপটপে সময় কাটাতেন। গত ১১ই সেপ্টেম্বর রাতে আপত্তিকর ও উস্কানিমূলক তথ্য প্রচারের অভিযোগে হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে মারধর করেন। রাতেই তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। পুলিশ জাহিদুরকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ঘটনার পরদিন সোমবার তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন কুয়েটের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদেক হোসেন প্রামাণিক। খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন খান বলেন, কুয়েট শিক্ষার্থী জাহিদুর রহমান (২২) ও অন্য জায়গার একজন শিক্ষার্থী রেজওয়ান শ্যামের (২১) বিরুদ্ধে গত সোমবার বিকালে কুয়েটের নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাদেক হোসেন মামলা করেন। জাহিদুরকে কুয়েট প্রশাসন খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে। ভর্তি অবস্থায় সোমবার ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বর্তমানে সে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান বলেন, ছেলেটি তাবলীগ জামাতের সঙ্গে জড়িত ছিল। কিন্তু উগ্রবাদী বক্তব্য দেয়ায় তাবলীগের লোকেরা ওদের সঙ্গে মিশতে নিষেধ করে দেয়। ঘটনার রাতে ওর মোবাইলে সরকার প্রধানের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য পাওয়ায় সাধারণ ছাত্ররা মারধর করেছে বলে শুনেছি। সেখানে ছাত্রলীগের দু’একজন থাকতে পারে। তবে আমি ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আর মারধর হয়নি। কুয়েটের ড. এম এ রশিদ হলের প্রভোস্ট এম ডি হামিদুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফর নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছে জাহিদুর। বিভিন্ন মাধ্যমে হলের ছাত্ররা জানতে পারেন ওই শিক্ষার্থী দেশবিরোধী বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে সংযুক্ত। গত রোববার রাতে আমরা তাকে হেফাজতে নিয়ে কিছু কথাবার্তা বলেছি। সে এসব বিষয় স্বীকার করেছে। আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার পর মনে করেছি যে বিষয়টা পুলিশ প্রশাসনকে জানানো উচিত। পরে পুলিশ এসে বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে তাকে নিয়ে গেছে। মারধরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার হাতে আসার পর কেউ মারধর করেনি। আগে কি হয়েছে জানি না। এ ব্যাপারে কুয়েট ভিসি অধ্যাপক ড. মিহির রঞ্জন হালদার বলেন, ১১ই সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে হল প্রভোস্ট আমাকে ফোন করে জানায়, এক ছাত্রকে জঙ্গি সন্দেহে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে অন্য ছাত্ররা অল্প মারধর করেছে। আমি বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেই এবং তাৎক্ষণিক ছাত্র নেতাদের সতর্ক করেছি, যাই ঘটুক ছাত্রদের গায়ে যেন কেউ হাত না তোলে। ভবিষ্যতে হাত তুললে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।