বাংলারজমিন
সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়কের বেহাল দশা
মিলাদ জয়নুল, বিয়ানীবাজার (সিলেট) থেকে
২৯ আগস্ট ২০২২, সোমবার
মাঝে মাঝে পিচ খোয়া উঠে গিয়ে সৃষ্টি হওয়া ছোট-বড় গর্তে ক্ষত-বিক্ষত গুরুত্বপূর্ণ সিলেট-বিয়ানীবাজার সড়ক। গাড়ি এসব গর্তে হেলেদুলে উপরে নিচে ‘ঝাঁকাঝাঁকি’ করে অতিক্রম করছে অথবা গর্তে পড়ে আটকা পড়ছে। গর্তের কারণে ‘ঝাঁকাঝাঁকি’ ও অনেক সময় গাড়ি আটকা পড়ায় দুই দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ রাস্তায় চলাচলকারী চরম দুর্ভোগের শিকার যাত্রীরা এই বর্ষায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কা প্রকাশ করে দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সিলেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক সড়ক সিলেট-জকিগঞ্জ-বিয়ানবাজার-বড়লেখা সড়ক দিয়ে ৫টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ চলাচল করেন। যাত্রী পরিবহন ছাড়াও মালামাল পরিবহনের জন্য শত শত ট্রাক, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার গ্যাস ফিল্ডের ভারী লরি এই সড়ক দিয়ে চলাচল করে। সম্প্রতি বন্যা ও বৃষ্টিপাতের ফলে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে পিচ ও খোয়া উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কটির চারখাই থেকে জকিগঞ্জ অংশ কিছুটা ভালো থাকলেও গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার অংশ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সড়কটির গোলাপগঞ্জ অংশের হেতিমগঞ্জ বাজার, কিসমত মাইজভাগ, বড়মোকাম, চরকরিয়া তেরমাইল অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। রানাপিং চকরিয়া অংশে সড়কটি পিচ খোয়া সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কাদামাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। ফলে প্রতিদিন বাস-ট্রাক এই স্থানে আটকা পড়ছে। এতে দুই দিকে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ সময় দীর্ঘ ও সময় ক্ষেপণকারী যানজট এড়িয়ে যাওয়ার জন্য ছোট ও প্রাইভেট গাড়িগুলো আশপাশের গ্রামের রাস্তাগুলো ব্যবহার করায় গ্রামের সড়কগুলোর বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী। গ্রামের রাস্তাগুলোতে গাড়ির দীর্ঘ লাইন সৃষ্টি হওয়ায় গ্রামীণ রাস্তাগুলো চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে বলে জানান তারা।
এদিকে সড়কের বিয়ানীবাজার অংশের রামধা থেকে চারখাই এর গাছতলা অংশে খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্ত দ্রুত সংস্কার না করলে গর্ত আরও বড় হয়ে যানচলাচল কঠিন হয়ে যাবে বলে জানান স্থানীয়রা। এ ছাড়া দুবাগ থেকে বিয়ানীবাজার পর্যন্ত প্রায় সম্পূর্ণ সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে ছিল এবং সে সময় বড় বড় ট্রাক্টর দিয়ে মানুষ রাস্তায় চলাচল করেছেন। এখন পানি কমার পর পুরো সড়ক জুড়ে অসংখ্য গর্তে যাতায়াত দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে বলে জানান স্থানীয়রা। দুবাগ থেকে বিয়ানীবাজার পর্যন্ত পুরো সড়কই ক্ষতিগ্রস্ত তবে আঙ্গারজুরের পুল সংলগ্ন কুশিয়ারা ব্রিক ফিল্ড অংশ, দীঘিরপার, তেলাদল ৩৯ এর পুল, কাকরদি বাজার সংলগ্ন হেলাল মেম্বারের বাড়ি সংলগ্ন এবং থানাবাজার ও বারইগ্রামের মধ্যবর্তী এলাকায় সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে গাড়ি পড়ে হেলে দুলে যায়। অনেক সময় গাড়ি আটকা পড়ে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হোন বলে জানান স্থানীয়রা। এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সড়কের বড় গর্ত বা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলোতে কাজ করা হচ্ছে যাতে গাড়ি আটকে না যায়। তিনি জানান, বন্যায় রাস্তায় পানিতে তলিয়ে রাস্তার নিচের মাটি সরে যাওয়ায় এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সড়কের গভীর থেকে বালি দিয়ে ভরাট করতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে সম্পূর্ণ নতুন করে সংস্কার কাজ করা যাচ্ছে না তবে বড় গর্ত বা গাড়ি আটকে যায় এমন অবস্থা থাকবে না এবং তারা নিয়মিত মনিটরিং করবেন বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
এদিকে খানাখন্দের গর্তে বৃষ্টির পানি জমে কাদায় সিলেট-শেওলা স্থলবন্দর রাস্তার বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি। একই অবস্থা সিলেট-চন্দরপুর-বিয়ানীবাজার সড়কের। ছোট বড় গর্ত আর ভাঙা সড়কে মানুষের দুর্ভোগ কেবল বাড়ছেই।
বিভাগীয় শহর সিলেটের সঙ্গে বিয়ানীবাজার উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা সবদিক দিয়েই ঝুঁকিপূর্ণ। কবে এই উপজেলাবাসীর যোগাযোগ বিড়ম্বনার অবসান হবে, তা কেউ বলতে পারছে না।