ঢাকা, ২৫ জুন ২০২৫, বুধবার, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২৭ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে পারেনি মার্কিন হামলা

মানবজমিন ডেস্ক

(৮ ঘন্টা আগে) ২৫ জুন ২০২৫, বুধবার, ১০:০০ পূর্বাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৫:৫৩ অপরাহ্ন

mzamin

একটি প্রাথমিক গোপন মার্কিন রিপোর্ট অনুযায়ী, ইরানে তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলা দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাস পিছিয়েছে। এই রিপোর্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, হামলায় দুটি স্থাপনার প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া গেলেও ভূগর্ভস্থ ভবনগুলো ধসে পড়েনি। এসব কথা বলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে। তাতে আরও বলা হয়, হামলার আগে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলেছিল, ইরান যদি দ্রুততার সঙ্গে পারমাণবিক বোমা তৈরির চেষ্টা করে, তবে তাতে প্রায় তিন মাস সময় লাগবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা এবং ইসরাইলি বিমানবাহিনীর টানা কয়েকদিনের আক্রমণের পর, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) রিপোর্টে বলা হয়েছে, কর্মসূচিটি কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে, তবে তা ছয় মাসের কম সময়ের জন্য। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের একটি বড় অংশ হামলার আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ফলে পারমাণবিক উপাদানের খুব কমই ধ্বংস হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই উপাদানগুলোর কিছু গোপন স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। কিছু ইসরাইলি কর্মকর্তা মনে করে, ইরান হয়তো ছোট আকারের গোপন সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্র চালু রেখেছে, যাতে বৃহৎ কেন্দ্রগুলো আক্রমণের শিকার হলেও তারা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। অন্য কিছু কর্মকর্তারা বলেন, রিপোর্টে দেখা গেছে ফরদো, নাতানজ ও ইসফাহান- এই তিনটি পারমাণবিক স্থাপনাই মাঝারি থেকে গুরুতর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে নাতানজ ছিল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। তবে ইরান এসব স্থাপনা পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

সাবেক কর্মকর্তারা বলেন, যদি ইরান দ্রুত পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চায়, তবে তা হবে অপেক্ষাকৃত ছোট ও অপরিপক্ব একটি বোমা। একটি ক্ষুদ্রায়িত ওয়ারহেড তৈরি করা আরও জটিল এবং সেই গবেষণার উপর কতটুকু প্রভাব পড়েছে তা এখনও অজানা। বর্তমান ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা আগেই সতর্ক করেছিলেন, ফরদো স্থাপনাটি যা একটি পাহাড়ের নিচে ২৫০ ফুট গভীরে অবস্থিত, তা ধ্বংস করতে একাধিক দিনের বিমান হামলার প্রয়োজন হবে। শনিবার মার্কিন যুদ্ধবিমান অন্তত দু’বার একই লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। বি-২ বোমারু বিমান ফরদোতে ১২টি জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি) বোমা ফেলে। এগুলোকে ‘বাংকার বাস্টার’ বলা হয়। আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক ব্যবস্থাপক ব্রায়ান কার্টার বলেন, বর্তমানে ছয়টি বড় আকারের গর্ত ফরদোর ওপরে দেখা যাচ্ছে। তবে সামরিক বোমা বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কাজ সম্পূর্ণ করতে এক দিনের চেয়েও বেশি সময়ের হামলা দরকার ছিল।

প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়নে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি যে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ হয়েছে- তা অতিরঞ্জিত। কংগ্রেসে মঙ্গলবার হামলার বিষয়ে ব্রিফিং হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। সিনেটররা বৃহস্পতিবার এবং হাউজ সদস্যরা শুক্রবার ব্রিফিং পাবেন। হামলার পর থেকে ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে উপদেষ্টাদের কাছে অভিযোগ করে যাচ্ছেন যে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টগুলো হামলার সফলতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি করছে। তিনি বিভিন্ন কর্মকর্তার প্রকাশ্য বক্তব্যও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।

মঙ্গলবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ট্রাম্পের দাবি পুনরায় সমর্থন করে বলেন, আমরা যা দেখেছি এবং আমি সবই দেখেছি- তাতে স্পষ্ট, আমাদের বোমাবর্ষণ ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছে। আমাদের বিশাল বোমাগুলো প্রতিটি লক্ষ্যে নিখুঁতভাবে আঘাত করেছে এবং পুরোপুরি কাজ করেছে।
কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলেন, পাঁচ পাতার এই গোপন রিপোর্টটি ছিল কেবল প্রাথমিক মূল্যায়ন এবং আরও বিশ্লেষণ আসবে যখন ইরান নিজে ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণ করবে ও আরও তথ্য সংগ্রহ করা হবে। একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনের ভেতরে যে রিপোর্ট দেখানো হয়েছে তা ‘মিশ্র’, অর্থাৎ চূড়ান্ত মূল্যায়ন এখনও বাকি। তবে ডিআইএ’র রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, এই সাইটগুলো প্রত্যাশার চেয়ে কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ইরান এখনো তাদের অধিকাংশ পারমাণবিক উপাদান নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। অর্থাৎ তারা চাইলে খুব অল্প সময়েই আবার কর্মসূচি শুরু করতে পারে। রিপোর্টের তথ্য গোপন থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
হোয়াইট হাউজ এই মূল্যায়নের তীব্র বিরোধিতা করেছে। প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট বলেন, এই তথাকথিত মূল্যায়নের ফাঁস একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার, যার উদ্দেশ্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হেয় করা এবং আমাদের সাহসী ফাইটার পাইলটদের সম্মানহানি করা। সবাই জানে, যদি ১৪টি ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের বোমা নিখুঁতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে ফেলা হয়, তাহলে সেটা সম্পূর্ণ ধ্বংস ঘটায়।

ওদিকে সিএনএন আগে থেকেই গোয়েন্দা রিপোর্টের কিছু অংশ প্রকাশ করেছিল। কর্মকর্তারা বলেন, হামলায় ফরদোর বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোতে ইরান কবে নাগাদ পুনরায় প্রবেশ করতে পারবে, বা পুনঃস্থাপন শুরু করতে পারবে- তা এখনো অনিশ্চিত। মিস্টার কার্টার বলেন, এই বোমা হামলায় তিনটি সাইটই ‘গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ইসরাইলের প্রাথমিক মূল্যায়নেও হামলার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা বলেন, ভূগর্ভস্থ ফরদো সাইট পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি- এমন প্রমাণ তারা পেয়েছেন। হামলার আগেই মার্কিন সেনাবাহিনী বিভিন্ন সম্ভাবনার মাত্রা দিয়েছিল- সর্বনিম্নে কয়েক মাস, সর্বোচ্চ কয়েক বছর বিলম্ব হতে পারে বলে ধারণা ছিল। কিছু কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, এই ধরনের অনুমান কখনোই নিখুঁত হয় না এবং ইরান যদি চায়, তাহলে তারা কতদিনে পুনর্গঠন করতে পারবে তা বলা কঠিন।

ট্রাম্প ও হেগসেথ যদিও সাইটগুলো ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি করেছেন, তবে জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন ছিলেন তুলনামূলকভাবে সংযত। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই অভিযানের লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করা। তিনি আরও বলেন, চূড়ান্ত ব্যাটল ড্যামেজ অ্যাসেসমেন্ট অর্থাৎ যুদ্ধের পর চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এখনো বাকি। সেন্ট্রাল কমান্ডের সাবেক কমান্ডার জেনারেল জোসেফ ভোটেল বলেন, ব্যবহৃত অস্ত্র নিয়ে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল যথেষ্ট। তবে কিছু উপাদান টিকে থাকবে, এটা অপ্রত্যাশিত নয়। এজন্যই আমরা ব্যাটল ড্যামেজ অ্যাসেসমেন্ট করি। কারণ সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী গেলেও বাস্তবতার ভিন্নতা থাকতে পারে।

সিনেটে মঙ্গলবারের শুনানিতে ডেমোক্রেটরা আরও সংযত মন্তব্য করেন। সিনেটর জ্যাক রিড বলেন, চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি আমরা। সামরিক কর্মকর্তারা আগেই বলেছিলেন, ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলোতে বেশি ক্ষতি করতে হলে একাধিক দফায় আঘাত করা প্রয়োজন। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথম দফার হামলার পরপরই তা বন্ধের ঘোষণা দেন। হামলার আগে মার্কিন গোয়েন্দারা বলেছিলেন, ইরান এখনো পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে তাদের কাছে যথেষ্ট সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আছে- অর্থাৎ তারা চাইলে দ্রুত বোমা তৈরি করতে পারে।
যদিও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, এই ধরনের হামলা ইরানকে পারমাণবিক বোমা তৈরিতে প্ররোচিত করতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো নিশ্চিত নয় যে ইরান সে পথে এগোচ্ছে কি না। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিআইএ) পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
 

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status