অনলাইন
ইরান-ইসরাইল সংঘাত
ট্রাম্পের উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ হামলার কৌশল কি সফল হওয়ার পথে
মানবজমিন ডিজিটাল
(১০ ঘন্টা আগে) ২৪ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৩:৪৮ অপরাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ১২:১২ পূর্বাহ্ন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতে তার দেশকে সম্পৃক্ত করে কার্যত একটি জুয়া খেলেছেন। কিন্তু এর ফল হয়তো মিলতে চলেছে আপাতত দৃষ্টিতে সেটাই মনে হচ্ছে। সোমবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প ঘোষণা করেন, দুই দেশ একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে, যা তার মতে স্থায়ী শান্তির পথ প্রশস্ত করতে পারে। যদি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বাস্তবে ১২ দিনের যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারেন, তাহলে এটি এমন একটি সংঘাতের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসা হবে যা এই অঞ্চলকে গ্রাস করার পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলো।
শনিবার ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে বিমান হামলা চালায় আমেরিকা। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘যদি তেহরানের সময় ভোর ৪টার মধ্যে ইসরাইলি সরকার ইরানি জনগণের বিরুদ্ধে তাদের অবৈধ আগ্রাসন বন্ধ করে, তাহলে ইরানের ‘প্রতিক্রিয়া অব্যাহত রাখার কোনো ইচ্ছা নেই’’। একে যুদ্ধবিরতি বলা নাও যেতে পারে। কিন্তু তেহরানে ভোর ৪টা বাজার সাথে সাথে ইসরাইলি হামলা বন্ধ হয়ে যায় বলে জানা গেছে। দুই পক্ষই উত্তেজনা কমানোর দ্বারপ্রান্তে বলে মনে হচ্ছে।
শনিবারের মার্কিন হামলার প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিশ্রুতি পালনের পর এই অঞ্চলে এক অস্থির দিনের পর এই ঘটনা ঘটল। প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুসারে, কাতারে অবস্থিত বিশাল মার্কিন ঘাঁটিতে নিক্ষিপ্ত সমস্ত ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে এবং কোনও আমেরিকান হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
শনিবার রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে মার্কিন স্বার্থের ওপর ইরানের যেকোনো আক্রমণের কঠোর জবাব দেয়া হবে। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, প্রয়োজনে আমেরিকান বাহিনী আরও লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ইরান কী করে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করেছিল বিশ্ব। ইরান পদক্ষেপ নেয়ার পর মনোযোগ মার্কিন প্রেসিডেন্টের দিকে ঘুরে যায় এবং কয়েক ঘণ্টা পরে তিনিই প্রথম বক্তব্য রাখেন।
ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে পোস্ট করেন, ইরান তাদের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংসের প্রেক্ষিতে খুবই দুর্বল প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, যা আমরা আশা করেছিলাম এবং খুব কার্যকরভাবে এটি প্রতিহত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ট্রাম্প আশাপ্রকাশ করে বলেন, সম্ভবত ইরান এখন শান্তি ও সম্প্রীতির দিকে এগিয়ে যেতে পারে।
যদিও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সীমিত বলে জানা গেছে, তবুও ট্রাম্প তার ক্ষোভ ধরে রাখতে আগ্রহী ছিলেন এই আশায় যে, ইরানিরা আন্তরিকভাবে আলোচনায় আগ্রহী হবে। পর্দার আড়ালে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তিনি যুদ্ধবিরতির বিস্তারিত আলোচনার জন্য কাতারি মধ্যস্থতাকারী এবং ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলছিলেন। ইরানের ওপর ট্রাম্পের সপ্তাহান্তে আক্রমণ ছিল একটি উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ কৌশল। কিন্তু এটি এমন একটি পদক্ষেপ ছিল যার ফল ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান হচ্ছে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতেও একই রকম গতিশীলতা দেখা দেয়, যখন ট্রাম্প বাগদাদে ইরানি বিপ্লবী গার্ড নেতা কাসেম সোলাইমানিকে টার্গেট করার নির্দেশ দেন। ইরান ইরাকের সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যার ফলে ১০০ জনেরও বেশি আমেরিকান সৈন্য আহত হয়। কিন্তু আমেরিকা সংঘাত না বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ঠান্ডা মাথায় জয়ী হয়।
মার্কিন গণমাধ্যমের মতে, সোমবার তাদের সর্বশেষ আক্রমণে ইরান আমেরিকান ঘাঁটিতে এমন সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা সপ্তাহান্তে তাদের হামলায় মার্কিন যুদ্ধবিমান দ্বারা ফেলা মোট বোমার সংখ্যার সমান। এটি উৎক্ষেপণের আগে ইরান কাতারি সরকারকে যে আগাম নোটিশ দিয়েছিল, তার জন্য ট্রাম্প কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘এই পদক্ষেপ ইঙ্গিত দেয় যে ইরানিরা উত্তেজনা বৃদ্ধির পরিবর্তে সমানুপাতিকতা চাইছে।’ দিনের বেশিরভাগ সময় ট্রাম্প তেলের দাম, আমেরিকান মিডিয়া কভারেজ এবং রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের একটি পরামর্শের উপর বেশি মনোযোগী ছিলেন যে, বাইরের কোনও দেশ ইরানকে হয়তো পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ করবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, যদি ইরান আবারও আক্রমণ চালায় এবং আমেরিকানদের মৃত্যু বা উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়, তাহলে ট্রাম্পের ওপর প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য চাপ বাড়বে। তবে, আপাতত তিনি পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন। সূত্র: বিবিসি