ঢাকা, ১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

খামেনি নিহত হলে ইরান শাসন করবে কে? পর্দার আড়ালে সর্বোচ্চ নেতার উত্তরাধিকারের লড়াই

মানবজমিন ডিজিটাল

(৬ ঘন্টা আগে) ১৮ জুন ২০২৫, বুধবার, ৬:০৬ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৫ পূর্বাহ্ন

mzamin

তেহরানে ইসরাইলি বোমা হামলা এবং শীর্ষ ইরানি কমান্ডারদের নিহত হওয়ার পর, ৮৬ বছর বয়সী সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি আগের চেয়ে আরও বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এর ফলে তিনি মারা গেলে কে তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে একাধিক মহলে। সাম্প্রতিক ইসরাইলি বিমান হামলায় খামেনি তার বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সামরিক ও গোয়েন্দা উপদেষ্টাকে হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার-ইন-চিফ হোসেইন সালামি, দেশের  ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির প্রধান আমির আলী হাজিজাদেহ এবং গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি। এই ব্যক্তিরা কেবল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাই ছিলেন না, খামেনির উপদেষ্টা মহলের কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্বও ছিলেন। শীর্ষ নেতাদের মৃত্যু ইরানের নেতৃত্বকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে এবং পরবর্তীতে শাসনব্যবস্থার কী হতে পারে তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। আপাতত, খামেনি ক্ষমতায় রয়েছেন। যুদ্ধ থেকে শুরু করে বিচার বিভাগীয় নিয়োগ পর্যন্ত ইরানের সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তিনিই নিয়ে থাকেন । তার নেতৃত্বের সাথে পরিচিত ব্যক্তিরা তাকে "অত্যন্ত একগুঁয়ে কিন্তু অত্যন্ত সতর্ক" একজন ব্যক্তি হিসেবে বর্ণনা করেছেন , এই মানসিকতার কারণেই ১৯৮৯ সাল থেকে তিনি দেশের শীর্ষপদে আসীন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প যখন সতর্ক করে দিয়েছেন যে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি “ সহজ টার্গেট ” এবং  বলেছেন যে , আমেরিকা জানে  তিনি কোথায় আছেন, তখন স্বভাবতই খামেনিকে নির্মূল করা হলে পরবর্তীতে কে ইরানের ক্ষমতা দখল করতে পারে তা নিয়ে জল্পনা চলছে। যদিও ট্রাম্প বলেছেন যে খামেনিকে হত্যা করার “বর্তমানে কোনও পরিকল্পনা নেই”, তবে একইসঙ্গে  তাঁকে বলতে শোনা গেছে - 'আমাদের ধৈর্যর  বাঁধ ক্রমশ ভেঙে পড়ছে। 'খামেনি ক্রমবর্ধমানভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এবং ইরান আক্রমণের মুখে পড়ার পর, যদি অকল্পনীয় কিছু ঘটে, তাহলে তার উত্তরসূরি হতে পারেন এমন শীর্ষ প্রতিযোগীদের তালিকা এখানে দেওয়া হল।

মোজতবা খামেনি
সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির  ৫৫ বছর বয়সী ছেলে মোজতাবা একজন মধ্যম স্তরের ধর্মযাজক যিনি মূলত জনসাধারণের দৃষ্টির বাইরে থেকেই কাজ করেন । নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিষয় সমন্বয়ের ক্ষেত্রে তিনি পর্দার অন্তরালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বলে মনে করা হয় এবং বিশেষ করে তিনি বিপ্লবী গার্ডের ঘনিষ্ঠ।অনেক পর্যবেক্ষক বিশ্বাস করেন যে খামেনি নীরবে তাকে উত্তরাধিকারের জন্য প্রস্তুত করছেন। তবে, ক্ষমতার একটি বংশীয় হস্তান্তর ইরানের মতো রক্ষণশীল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে  প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে পারে।

আলী আসগর হেজাজি
সর্বোচ্চ নেতার কার্যালয়ে রাজনৈতিক-নিরাপত্তা বিষয়ক উপ-পরিচালক হিসেবে পরিচিত  হেজাজির  পর্দার আড়ালে বিশাল প্রভাব রয়েছে । রয়টার্স তাকে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে বর্ণনা করেছে।  তিনি  নিরাপত্তা কার্যক্রম সরাসরি তত্ত্বাবধান করে থাকেন।   গার্ড ও ধর্মীয় অভিজাত উভয়ের সাথেই তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি একজন ধর্মীয় নেতা নন, তবে খামেনির সাথে তার সান্নিধ্য তাকে যথেষ্ট গুরুত্বওয়ার্ন করে তুলেছে।

মোহাম্মদ গোলপায়েগানি
মোহাম্মদ গোলপায়েগানি খামেনির অফিসের দীর্ঘদিনের প্রধান কর্মী এবং তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোগীদের একজন। তিনি অনুগত এবং গোপনে থাকার জন্য পরিচিত। জনসাধারণের কাছে সুপরিচিত না হলেও, সিস্টেম  কীভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান এবং পর্দার আড়ালে তার কেন্দ্রীয় ভূমিকা তাকে পরবর্তী নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য  প্রার্থী বা মূল খেলোয়াড় করে তুলেছে।

আলী আকবর বেলায়াতি
আলী আকবর বেলায়াতি, একজন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং খামেনির পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রবীণ  উপদেষ্টা। ধর্মীয় জ্ঞানের সাথে বছরের পর বছর ধরে সরকারি অভিজ্ঞতার  মিশ্রণ তাঁকে পুষ্ট করেছে । তিনি এক্সপিডিয়েন্সি কাউন্সিলে বসেন এবং ইরানের আঞ্চলিক জোটগুলোকে  দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেন। যদিও তিনি  বিশ্বস্ত এবং শ্রদ্ধার পাত্র তবে  তার বার্ধক্য এবং দুর্বল স্বাস্থ্য তার বিরুদ্ধে যেতে পারে।

কামাল খারাজী
সাবেক  পররাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল খারাজি এখন ইরানের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কৌশলগত কাউন্সিলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তিনি কট্টরপন্থীদের তুলনায় বেশি মধ্যপন্থী বলে মনে হলেও সর্বদা শাসকগোষ্ঠীর সীমার মধ্যে থেকেছেন। ইংরেজিতে সাবলীল এবং জাতিসংঘে অভিজ্ঞ, খারাজী পারমাণবিক চুক্তির পর ইরানের কূটনীতি গঠনে সহায়তা করেছিলেন। সরকারের কেউ কেউ তাকে একজন দক্ষ, প্রযুক্তিবিদ হিসেবে দেখেন।

আলী লারিজানি
ইরানের পার্লামেন্টের সাবেক  স্পিকার এবং রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমের সাবেক  প্রধান আলী লারিজানি কোমের এক সুপরিচিত ধর্মীয় পরিবারের সন্তান। বাস্তবমুখী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী একজন রক্ষণশীল ব্যক্তিত্ব হিসেবে তিনি খামেনি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ঘনিষ্ঠ, তবে কিছুটা স্বাধীনচেতা  হিসেবেও দেখা হয় তাঁকে । তার অভিজ্ঞতা এবং শাসনব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য তাকে সম্ভাব্য  প্রার্থী করে তোলে।

বিশেষজ্ঞ পরিষদ
ইরানের সংবিধান বিশেষজ্ঞ পরিষদকে উত্তরাধিকারের ক্ষমতা দেয়, যা প্রতি আট বছর অন্তর নির্বাচিত সিনিয়র ধর্মগুরুদের নিয়ে গঠিত ৮৮ সদস্যের একটি সংস্থা।এই দলটি গোপনে আলোচনা চালাতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে এবং এমনকি একক সর্বোচ্চ নেতার পরিবর্তে একটি নেতৃত্ব পরিষদও নিয়োগ করতে পারে। অনেকেই বিশ্বাস করেন যে মোজতবার ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নির্ভর করবে পরিষদের সদস্যরা ঐক্যবদ্ধ নাকি  বিভক্ত হয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তার উপর।

সূত্র : টাইমস অফ ইন্ডিয়া

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status