অনলাইন
সহায়তার ক্ষেত্রে পিছিয়ে প্যানাসনিক
মালয়েশিয়ায় বেতন বঞ্চিত বাংলাদেশি শ্রমিকদের পাশে জাপানের সনি
স্টাফ রিপোর্টার, কুয়ালালামপুর
(৫ ঘন্টা আগে) ১৭ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৯:৫০ পূর্বাহ্ন

গত বছর সাত মাস ধরে বেতন না পাওয়া ২৮৩ জন বাংলাদেশি শ্রমিকের পাশে দাঁড়িয়েছে জাপানের বহুজাতিক কোম্পানি সনি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রাইটস অ্যাডভোকেটস (আইআরএঅ্যাডভোকেটস) জানিয়েছে, সনি এই শ্রমিকদের আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
দেশটির ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে জানিয়েছে, আইআর এঅ্যাডভোকেটস-এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক টেরেন্স কলিংসওয়ার্থ এক বিবৃতিতে বলেন, “সনি এই পরিস্থিতিতে গঠনমূলক ভূমিকা নিয়েছে, আমরা এজন্য তাদের কৃতজ্ঞতা জানাই। বাংলাদেশি এই অভিবাসী শ্রমিকদের দুরবস্থার খবর সামনে আসার পর, সংস্থাটি বিষয়টি তাদের পূর্বতন নিয়োগকর্তা কাওয়াগুচি ম্যানুফ্যাকচারিং এসডিএন বিএইচডি -এর নজরে আনে। সেই সঙ্গে কাওয়াগুচির সঙ্গে যুক্ত কিছু পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির দিকেও আঙুল তোলে — যার মধ্যে সনি অন্যতম।
ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে আরো জানিয়েছে, কলিংসওয়ার্থ বলেছেন, “সনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাওয়াগুচির সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং দ্রুত সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিতে বলে। পরে তারা কাওয়াগুচির সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়। এই ঘটনা প্রমাণ করে, যখন কোম্পানিগুলো প্রকৃতভাবে জবাবদিহিতা মেনে চলে ও সহযোগিতা করে, তখন পরিবর্তন সম্ভব। সনির এই মানবিক ও গঠনমূলক পদক্ষেপ আমাদের আশা দেখায় — কিভাবে কোম্পানিগুলো শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, সত্যিকারের মানবাধিকার রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারে।”
ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে আরো জানিয়েছে, গত ১৮ ডিসেম্বর জানা যায়, কাওয়াগুচি কোম্পানি শেষ পর্যন্ত তাদের বিদেশি শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করতে রাজি হয়। সে সময় মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া শ্রম দফতর জেটিকে জানিয়েছিল, এই শ্রমিকদের অন্য কোম্পানিতে চাকরির ব্যবস্থাও করা হবে। এরপরে তারা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে, বকেয়া বেতনের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে পোর্ট ক্লাংয়ের কারখানার বাইরে বিক্ষোভ করেছিলো।
অন্যদিকে, অভিবাসী শ্রমিক অধিকারকর্মী অ্যান্ডি হল, যিনি গত বছর এই বিষয়টি কলিংসওয়ার্থের কাছে তুলে ধরে বলে দৈনিক মানবজমিনকে নিশ্চিত করে এ বিষয়ে তিনি বলেন, “সনির এই ভূমিকা প্রশংসনীয়। তারা ডাইকিন ইন্ডাস্ট্রিজের পথ অনুসরণ করেছে।” তবে অর্থের পরিমাণ কত তা তিনি কনফিডেন্সিয়াল বলে প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
তিনি আরো জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের শেষ দিকে এই মামলাটি টেরেন্স কলিংসওয়ার্থের কাছে পাঠিয়েছিলেন এবং ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে কাওয়াগুচির সাবেক শ্রমিকদের পক্ষে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ডাইকিন যেমন ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, ঠিক তেমনি সনিও এখন ২৮৩ জন সাবেক কাওয়াগুচি কর্মীকে উল্লেখযোগ্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে প্রশংসার দাবিদার। তবে এই বিষয়ে সবচেয়ে বড় ক্রেতা প্যানাসনিকের ব্যাপারে তা বলা যাচ্ছে না। কাওয়াগুচি থেকে সবচেয়ে বেশি পণ্য কিনলেও তারা এখনও শ্রমিকদের জন্য যথাযথ সহায়তা দেয়নি।”
একই প্রসঙ্গে তিনি মালয়েশিয়া সরকারের দিকে আঙুলে তুলে বলেছেন, "মালয়েশিয়া সরকার আবারও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কীভাবে তারা দায়মুক্তিকে প্রশ্রয় দেয় এবং তাদের দেশের আইনের শাসন কতটা দুর্বল। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মালয়েশিয়ার শ্রম আদালত (জেটিকে) রায় দেওয়ার পরও কাওগুচিকে ২৫০ জনের বেশি শ্রমিকের জন্য প্রাপ্য ৮ লাখ মার্কিন ডলারের বকেয়া বেতন পরিশোধে বাধ্য করতে পারেনি মালয়েশিয়া সরকার।”
আন্তর্জাতিক অভিবাসী শ্রমিক অধিকারকর্মী অ্যান্ডি হল আরো বলেছন, “গত বৃহস্পতিবার, এই ভুক্তভোগীরা মালয়েশিয়ান বার কাউন্সিলের কাছে আবেদন করেছে যেন সরকার ও কাওয়াগুচিকে আইনি কাঠামোর মধ্যে এনে পুরো বকেয়া মজুরি আদায় নিশ্চিত করা হয়।”
উল্লেখ্য, বিশ্বের সবচেয়ে বড় এয়ার কন্ডিশনার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ডাইকিন ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড গত ডিসেম্বরে এই ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য ১২ হাজার মার্কিন ডলারের জরুরি খাবার ও চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছিল। পাশাপাশি, প্রতিটি শ্রমিককে বাড়তি আর্থিক সহায়তাও দেয় তারা।