ঢাকা, ১৬ জুন ২০২৫, সোমবার, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

ইউনূস-তারেক বৈঠক ইতিবাচক, কিন্তু...

স্টাফ রিপোর্টার

(৮ ঘন্টা আগে) ১৬ জুন ২০২৫, সোমবার, ৩:১৫ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৪:৫৩ অপরাহ্ন

mzamin

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। সেটার পর মনে হচ্ছে, যে অস্থির পরিস্থিতি আমরা দেখছিলাম, আপাতত সেটা শান্ত। এটি রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সেরকম কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘প্রথম কথা হলো-সামগ্রিকভাবে এই বৈঠকটি ইতিবাচক হয়েছে বলে অনেকেই বলবেন। যারা এটাতে খুঁত ধরছেন, তারা দ্বিতীয় পর্যায়ে গিয়ে খুঁত ধরছেন। যতখানি না বৈঠক তার চেয়ে বৈঠকের স্থান ইত্যাদি এবং প্রকাশটা নিয়ে তাদের মনঃক্ষুণ্ণটা থাকতে পারে। কিন্তু জিনিসটা বোঝার ব্যাপার।’

রোববার রাতে  যমুনা টেলিভিশন চ্যানেলে ‘কেমন চলছে বাংলাদেশ?’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘যে বৃহৎ উত্তোরণের কথাটা বলছি, গণতান্ত্রিক, প্রশাসনিক বা অন্যান্য সামাজিক উত্তোরণের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ সেইক্ষেত্রে এই সভাটি কতখানিক স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিতে পেরেছে। আসলেই কি সেই স্বাচ্ছন্দ্যটা সকলেই জোর দিয়ে অনুভব করছি কিনা। কারণ স্বাচ্ছন্দ্যটা অনুভব করতে হলে, ওই বিশ্বাসটা আসতে হলে আরও অনেকগুলো বিষয় এটার সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। কারণ নির্বাচনটা শুধু একদিন ভোট দেয়ার ব্যাপার না। এটা একটা প্রক্রিয়ার ভেতরে আছে। এটাতে অংশগ্রহণের বিষয় আছে। অংশগ্রহণের মধ্যে রাজনৈতিক দলের বিষয় আছে। ভোটারদের ব্যাপার আছে। একইরকমভাবে কীভাবে এটাকে আমরা নিশ্চিত করি। সেই ভোটে কোনো ধরনের কারচুপি হয় কিনা। পেছনে কোনো আঁতাত থাকে কিনা। এসব বিষয় তো মানুষের মনের ভেতরে থাকবে। সুতরাং কেউ যদি মনে করেন যে, জুন না এপ্রিল, এপ্রিল না ফেব্রুয়ারি, ডিসেম্বরের পরে, এটার ব্যাপারে একটা ঐকমত্য হয়েছে, এটাতে আশ্বস্ত হওয়ার সুযোগ আছে। আমার কাছে পুরোটা নেই। কারণ হলো-এটা একটি অংশ মাত্র। এটার সঙ্গে আরও অন্তত দু’টি মৌলিক প্রশ্ন সবার মনের ভেতরে আসবে। সেটা হলো-এবারও এই সভা হওয়ার পরে আবার নতুন করে উঠেছে-অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য বর্তমান সরকার কতখানি নিরপেক্ষ। যদি বর্তমান সরকারের নিরপেক্ষ নিয়ে, অর্থাৎ একবার বামদিক একবার ডানদিক থেকে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে এটা খুব উপকারী না। সেহেতু সরকারের নিরপেক্ষতা একটি দৃশ্যমান ও বিশ্বাসযোগ্য এবং সর্বজনীন হতে হবে। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পূর্বশর্ত। আর দ্বিতীয় পূর্বশর্ত সেটা অনেকে জিজ্ঞাসা করবেন-সরকার চাইলেও সুষ্ঠু নির্বাচন করার কোনো প্রশাসনিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক সক্ষমতা রাখে কিনা। প্রথমত ওনার নিয়্যত ঠিক আছে কিনা, নিয়্যতের সঙ্গে ওনার কার্যক্রমের ক্ষমতা মেলানো আছে কিনা। দ্বিতীয়ত, সমস্যা যেটা হবে, সেটা হলো-প্রশাসনিক পরিস্থিতি যেটা আছে, বিশেষ করে অভ্যুত্থানোত্তর পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যারা আছে, বিশেষ করে পুলিশ ও আনসার র‌্যাব ইত্যাদি। এটার সঙ্গে একটা বড় ভূমিকা অবশ্য আসবে, সেটা হলো আমাদের সেনাবাহিনী। কারণ সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ এবং সোচ্চার উপস্থিতি ব্যতিরেকে সুষ্ঠু নির্বাচন করা বর্তমান বেসামরিক প্রশাসনের পক্ষে কষ্টকর হবে। তাহলে তখন প্রশ্নটা আসবে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বর্তমান সরকারের যে রাজনৈতিক অংশ আছে, তাদের সঙ্গে সম্পর্কটা কতখানি। সেই অর্থে কতটা সহযোগিতাপূর্ণ, যেটা আমাকে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে (পাতানো নির্বাচন না, সিট ভাগাভাগির নির্বাচন না) নিয়ে যাবে। মানুষ ভোট দিয়ে পরের দিন সুস্থিরভাবে থাকতে পারবে, সে নির্বাচনোত্তর সন্ত্রাসের শিকার হবে না, সেটার জন্য সেনাবাহিনীর ভূমিকা থাকবে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হবে। সেনাবাহিনী কতদিন আগে মাঠে এসে দায়িত্ব নেবে। সেনাবাহিনী এসে দায়িত্ব নিয়ে সর্বোপরি প্রথম যে কাজটা হবে, অর্থাৎ সবসময় যেটা দেখি, সেটা হলো অস্ত্র উদ্ধার। অস্ত্র উদ্ধার যদি না হয়, শান্তি-শৃঙ্খলা যদি সেই অর্থে নিশ্চিত করা না যায়, এই ধরনের অস্ত্র উদ্ধারের মাধ্যমে। একঅর্থে তথাকথিত ডেভিল হ্যান্টের ফলাফল সম্পর্কে আমি তির্যক মূল্যয়ন করলাম এবং সেটার মাধ্যমে বিশেষ করে অভ্যুত্থানোত্তর পর্বে সমস্ত লুটপাট হয়েছে। পুলিশ ফাঁড়ি লুট হয়েছে, সেই অস্ত্রগুলো আমার ফেরত পাইনি। এই রকম একটা বড় কাজে এটা দরকার পড়বে। তখন প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের সেনাবাহিনীর যৌথ সম্পর্ক কীভাবে মাঠ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হবে বা কার্যকর হবে সেটাও দেখার বিষয়। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের বিভিন্ন ধরেন ব্যাখ্যা আসছে, কেউ মনে করছেন আগের শাসক দলের অংশগ্রহণের ব্যাপারে, আবার যারা দুর্বল জনগোষ্ঠী আছে, আদিবাসী বলেন, দলিত শ্রেণি বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু বলেন বা অন্য দলের সমর্থকরা বলেন, তারা সবাই নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে কিনা? সেটাও অর্ন্তভুক্তিমূলক একটা ব্যাপার আছে।

ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক প্রসঙ্গে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘ডরচেস্টার হোটেলেরও দুই ঘণ্টার ওই বৈঠক নিঃসন্দেহ একটি বড় অগ্রগতি। বৈঠকে কী হয়েছে তার চেয়ে বড় কথা-বৈঠকে যে দুজন মিলিত হয়েছেন এটি একটি অগ্রগতি। এটা সফল রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিকাশের সোপান হিসেবে আমি দেখতে পারি।  কিন্তু একই রকমভাবে এটার মাধ্যমে আরও দশ রকমের বিষয় রয়ে গেছে সুষ্ঠু নির্বাচন করার ব্যাপারে, সেটা থেকে কিন্তু মনোযোগ নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’  

দেবপ্রিয় বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন-সংস্কার ও বিচারের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাপেক্ষে। তাহলে দুইভাবে আমি দেখতে পারি। একভাবে দেখতে পরি যে, নির্বাচনটি ফেব্রুয়ারি মাসে করার জন্য সংস্কার ও বিচারকে তরান্বিত করতে হবে। আরেকভাবে দেখতে পারি সংস্কার ও বিচার যদি আমার মনঃপূতভাবে না এগোয় তাহলে নির্বাচনকে পেছাতে পারি। এটার ভেতরে আমি বিজ্ঞানের মানুষ বলবেন, এটার ভেতর নন নেগুশিয়েবল অ্যাবসুলেট ক্রাইটেরিয়া কোনটা। আমাকে ধরতে হবে কোনটা আমার চরম প্রতিবন্ধক। এটা আমি নাড়াতে পারবো না। কোনটা আমি নাড়াতে পারবো না সেটা তো আমি বুঝে উঠতে পারিনি। কে কোনটা নাড়াবে ক্ষমতা রেখে সেটাও পরিষ্কার না।’

অর্থনীতি ও রাজনীতি সব মিলিয়ে আজকের এইদিনে বাংলাদেশ কেমন আছে-এমন প্রশ্নের জবাবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘জীবন এমন যে, সেখানে অবিমিশ্র ভালো, আর অবিমিশ্র খারাপ হয় না। ভালো-মন্দ মিলিয়েই থাকে। অবশ্য কোনো সময় ভালোটা একটু বেশি থাকে, আবার কোনো কোনো সময় মন্দটা একটু বেশি থাকে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের দেশে এটা একটা মৌসুমী ব্যাপার। তবে আপনি যদি সামগ্রিকভাবে বলেন, তাহলে জাতি একটি উত্তেজনাকর অভূতপূর্ব সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। অভূতপূর্ব নিঃসন্দেহ, কারণ এই ধরনের গণতান্ত্রিক এবং একইসঙ্গে বিভিন্ন প্রশাসনিক ও শাসনতান্ত্রিক উত্তোরণকালীন সময় আমরা  খুব একটা অতিবাহিত করিনি। যেগুলো আগে করেছি, সেগুলো ভিন্ন মাত্রার ছিল। অপর দিকে যেটা হলো-বাংলাদেশের এই উত্তোরণকালীন পরিস্থিতি সদা পরিবর্তনশীল। যেহেতু সদা পরিবর্তনশীল, সেহেতু সকলের মনের ভেতরেই একটা আস্থা বা সম্ভাবনা সম্বন্ধে প্রত্যয় বা বিশ্বাস। অর্থাৎ সেই জায়গাটা একটু নড়বড়ে আছে। বড় ব্যাপার হলো-একটা উত্তোরণের ভেতরে আছি, কিন্তু ওই উত্তোরণের বিভিন্ন ধাপের ভেতরে আমরা অনেক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আরকি। এই দু’টি মাঝখানে অনেক সময় খেই হারিয়ে ফেলে বলে আমার ভয় হয়।’

সিট ভাগাভাগির নির্বাচন যদি হয়, সেটা একটা আশঙ্কার কথা। অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ থাকবে কিনা এবং ফেব্রুয়ারিতে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা। অর্থাৎ অনেকগুলো টেনশন যদিও এখনো আছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, ‘এই টেনশনগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা, এগুলোকে আমার বাঞ্ছিত অভিপ্রায়ে পরিচালিত করার ক্ষমতা এবং আমার সেই সমস্ত চিন্তা আছে কিনা, আমি মনে করি সেগুলো আছে। নীতিকাঠামো ও তার ধারাবাহিকতার প্রশ্নে ফিরে যাই। সেটা হলো-এই সভা হওয়া মানে এই না যে, আগামী দিনে যে সরকার আসবে তারা এই চলমান সরকারের সব নীতিকে গ্রহণ করলো। আমি মনে করি না। এজন্যইতো আমি আগেই বললাম যে, শুধু তারিখতো তারিখ না। এরসঙ্গে আরো দশ রকমের জিনিস যুক্ত থাকে এবং ওই তারিখটাতে পৌঁছানোর পথরেখাটাও একটা বড় জিনিস। এটা কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। কারণ ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচনের জন্য যদি ডিসেম্বর পর্যন্ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হয়, এর ভেতর অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে। এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এই মুহূর্তে এটা একটা ঘটমান বর্তমানের দেশ। আর যে রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তার ঘোষিত নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থাকবে। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে, অর্থাৎ আগে ২৬ ছিল, বর্তমানে তারা ৩১ দফা করেছে। আগামীতে হয়তো নির্বাচনী মেনিফেস্টোও তৈরি করবে তারা। সেটা হবে তাদের ধারাবাহিকতার ধারক ও বাহক। এই সরকারের কত অংশ তারা নেবে তা আমরা জানি না। এটা সম্বন্ধে কারো অন্য সংশয় আছে, কারণ হলো বর্তমান সরকার যখন সংস্কারের কথা বলেন, উনারা কিন্তু বেশিরভাগই উপরি কাঠামো নিয়ে সংস্কারের কথা বলেছেন। উনারা সংসদ নিয়ে বলেন, স্থানীয় সরকার বলেন, নির্বাচনী কাঠামো নিয়ে বলেন, প্রশাসনের ভেতর অথবা পুলিশ ইত্যাদির বিষয়ে কথা বলেন। কিন্তু উনারা একবারো বলেননি কৃষক ন্যায্যমূল্য কীভাবে পাবে। এত বড় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ভেতরে দিয়ে এই সরকারকে এনেছি, উনারা একবারো বলেননাই যে, ছাত্র সমাজের কর্মসংস্থান কীভাবে হবে। উনারা একবারও বলেননাই যে, নারীদের প্রতি যে আচরণ হচ্ছে সেটায় বৈষম্য কীভাবে দূর হবে। দূরাঞ্চলে যারা বসবাস করে তাদের সাথে কী আচরণ আমরা করবো, এখানে আদিবাসী জনগণের প্রতি যে অন্যায় আচরণ আমরা করি অনেক সময়, সেটা কীভাবে করব? অর্থনীতির ক্ষেত্রে কিন্তু এই সরকারের সেই অর্থে কোনো মেনিফেস্টো নেই। এটা একটা বড় ধরনের ঘাটতি। এই ঘাটতির কারণে এই মুহূর্তে যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার কথা বলছেন-এটা আনার জন্য সরকারের কোনো মধ্যমেয়াদী কাঠামো নেই। সরকার গত সরকারের বাজেট নিয়ে চলেছে। বিগত সরকারের মধ্যমেয়াদী কাঠামো অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাতিল করে দিয়েছে, ঠিকভাবেই করেছে কিন্তু তারা দুই বছরের ভেতরে কী নীতি কাঠামোর ভেতরে থাকবে সেটা কিন্তু বলেনি। আমি সরকারকে যেটুকু কাছে থেকে দেখেছি সেটা হলো, সরকার সমন্বিতভাবে কোনো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বা কাঠামো দেয়নি। এটা তার ভেতরের সমন্বয়, সহযোগিতা ও স্বচ্ছতার অভাব। এইবারের বাজেটের ভেতর দিয়ে পরিষ্কার হয়েছে। অর্থাৎ আমরা যারা সরকারের অনেক কাছে থেকে বিভিন্ন ধরনের কমিশন-কমিটি ইত্যাদি টাস্কফোর্সে কাজ করেছি, তারা সকলে একমত হয়েছে যে, এই সরকারের বাজেট গতানুগতিকভাবে হয়েছে। নতুন কাঠামোর ভেতরে হয়নি। সেহেতু আমরা প্রত্যাশা করবো নতুন সরকার যদি আসে, সেখানে অবশ্যই একটা নতুন কাঠামোর চিন্তা আসবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’

আপনি বাজেটের আগে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থানে ভীষণ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে অন্তর্বর্তী সময়কালে আরও ২৭ লাখ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে সেটা বলেছেন। যার বড় অংশ নারী সেটাও বলেছেন। জাতীয় বাজেট প্রণয়ন, করব্যবস্থা সংস্কার, পুজিবাজার পুনরুদ্ধারসহ নানা ক্ষেত্রে যথাযথ আলাপ-আলোচনার ঘাটতি এবং স্বচ্ছতার অভাব নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এই ক্ষোভ কেন? আপনি বলেছেন একটা দুই বছর মেয়াদী মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনার কথা, যেটা করা হয়নি। আর কি কোনো কারণ আছে এই ক্ষোভের এমন সব প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, ‘আমি মনে করি এই সরকার প্রথমতো যতখানি মনোযোগ দিয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের দিকে, যতখানি মনোযোগ দিয়েছে বিগত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বিচার ও ধরপাকড় ইত্যাদির বিষয়ে… অর্থনীতির যে সমস্ত দুর্বলতা আছে সেগুলো উন্মোচনের জন্য যতখানি তারা উদগ্রীব ছিলেন, এগুলোকে নিরসন করার জন্য একটি সংঘবদ্ধ চিন্তাশীল, প্রতিশ্রুতিশীল প্রয়াসের ব্যাপারে তারা ততখানি মনযোগী ছিলেন না। অর্থাৎ যেই দলিলটি আমি ও আমার সহকর্মীরা রচনা করেছি, এটা একমাত্র দলিল যেটা প্রধান উপদেষ্টার অধীনে হয়েছে। সেটা আমরা যখন করি, এটা দিয়েই আগের সরকার যে ধরনের তছরুপ এবং অন্যায় ও অর্থনৈতিক অত্যাচার করেছে সেটা তুলে ধরলাম। কিন্তু সেগুলোকে ধরে নিরসন করার জন্য যে কাঠামোগত পদক্ষেপ নেয়া দরকার, সেটা কিন্তু নিলো না।’

আপনারা যেদিন এটা (শ্বেতপত্র) হাতে তুলে দিলেন, সেদিন প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন-চূড়ান্ত হওয়ার পর জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা উচিত। একইসঙ্গে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে শিক্ষার্থীদের পড়ানো উচিত। তাহলে সেটাকে সরকার গুরুত্ব দিয়েছে অথবা দেয়নি? কোনটা বলছেন? জবাবে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘এটাতো প্রধান উপদেষ্টা বলছেন। তিনি নিঃসন্দেহে, ইংরেজিতে যেটাকে বলে ওনারশীপ বা মালিকানা নিয়েছেন, আমরা যেটা প্রকাশ করেছি। এখনো এটা থাকবে। ইতিহাসে একটি অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে, ইংরেজিতে যাকে বলি রেফারেন্স পয়েন্ট। এটা এক ধরনের স্মারক হিসেবে থেকে যাবে। কিন্তু এটাকে নিয়ে দৌড়াতে হবে তো। দৌড়ানোর জন্য যাদের দায়িত্ব সেখানেও প্রচুর মানুষ, বিজ্ঞ মানুষেরা আছেন। তারা কেন পারলেন না এটা একটা বড় বিষয়। যেখানে উনারা চেষ্টা করলেন কিছুটা, যেমন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ভাগ করার ক্ষেত্রে। এটা আমাদেরও মতামত ছিল। সেখানে যেহেতু উনারা যথেষ্ট নিষ্ঠার সাথে এগুলোকে পরিপালন করেননি। যথেষ্ট উন্মুক্ততার সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অংশীজনদের যুক্ত করেননি। সেজন্য জিতে গিয়েও হেরে গেলেন। এখন পর্যন্ত যেটা ঝুলে রয়েছে, তো সঠিক কাজও বেঠিকভাবে করলে হয় না। দু’টিই রইলো। এক হলো সঠিক কাজ করলেন না। আর যেটুকু করতে গেলেন সেটুকু বেঠিকভাবে করলেন। যার ফলে এই অর্থে বর্তমান সরকারের উত্তরাধিকারটা কী হবে? অর্থনৈতিক উত্তারাধিকারটা কী হবে? একটা অর্থনৈতিক উত্তরাধিকারটা হল তারা লুটপাটতন্ত্রের চরিত্র উন্মোচন করতে পেরেছেন কিনা। হ্যাঁ, এটা আমার শ্বেতপত্র করেছে এবং অন্যান্যরা মিলে এটা করেছে। দুই নম্বর হলো, এখান থেকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হবে। একটা নিম্নমধ্য আয়ের দেশ থেকে উচ্চমধ্য আয়ের দেশে যাবে এবং বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচি এসডিজি বাস্তবায়ন করবে ভালো করে। পৃথিবীর বুকে সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে দাঁড়াবে। তার জন্য কী কী সংস্কার দরকার পড়ে সেগুলো শুরু করলো কিনা। এটা হলো তার দুই নম্বর একটা ব্যাপার ছিল। সেটা শুরু করার জন্য অনেকগুলো কমিটি হয়েছে। কিন্তু সেগুলোকে যথাযথভাবে কার্যকর করার ক্ষেত্রে সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। আর তৃতীয় যেটা ছিল, সেটা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ফিরিয়ে আনা। সেখানে সরকারের কিছু সাফল্য আছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে, টাকার মূল্যমান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে, সুদের হারের ক্ষেত্রে, ইত্যাদি ক্ষেত্রে। সেহেতু সে পেছনটা দেখতে পেরেছে। বর্তমানকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা এখনো সে করতে পারেনি।’

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status