ঢাকা, ১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ মহরম ১৪৪৭ হিঃ

অনলাইন

ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে ইরান কেন রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছে?

মানবজমিন ডিজিটাল

(১ মাস আগে) ১৬ জুন ২০২৫, সোমবার, ৫:৪৩ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ৭:৪৫ অপরাহ্ন

mzamin

রাতের অন্ধকারে সাইরেন বাজানোর সাথে সাথে ইসরাইলি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যখন আগত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে প্রতিহত করছে, তখন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কৌশলেও একটি ধরণ দেখা দিয়েছে। তারা বেছে নিয়েছে ‘অন্ধকার’। রাতের বেলায় ইরান থেকে বারবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়- এগুলো সামরিক ও প্রযুক্তিগত কৌশলেরই অংশ, যাতে আক্রমণ চালিয়ে শত্রুপক্ষকে অপ্রস্তুত করা যায় এবং ভয় ধরানো যায়। রাতের বেলা স্পষ্টতই গোপনীয়তা বজায় রাখা যায়, কিন্তু অন্ধকারের আড়ালে আক্রমণ করা দৃশ্যমানতার চেয়ে অনেক বেশি কিছুর উপর নির্ভর করে। প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা, অপারেশনাল প্রয়োজনীয়তা এবং মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের সংমিশ্রণের ওপর সবটা নির্ভর করে। বিমান যেমন বায়ুমণ্ডলীয় অক্সিজেন ব্যবহার করে চলে, ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে তা হয় না। কারণ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এত উচ্চতায় ওঠে, যেখানে অক্সিজেন থাকে না। তাই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে নিজের সঙ্গে জ্বালানির পাশাপাশি অক্সিডাইজার—অর্থাৎ দহন প্রক্রিয়ার (কম্বাস্টন) জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বহন করতে হয়। এই মৌলিক প্রয়োজনীয়তা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে দুটি বিভাগে বিভক্ত করে: তরল জ্বালানি দ্বারা চালিত এবং কঠিন জ্বালানিচালিত। প্রতিটিরই কৌশলগত তাৎপর্য  রয়েছে।

তরল জ্বালানি

শাহাব সিরিজ সহ ইরানের দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলোতে সাধারণত তরল জ্বালানি প্রয়োগ করা হয়। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো উৎক্ষেপণের আগে জ্বালানি ভর্তি করার একটি জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে ব্যবহৃত হয় দুটি আলাদা ট্যাংক—একটি জ্বালানির জন্য, অন্যটি অক্সিডাইজারের জন্য। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ, বিপজ্জনক এবং স্থির উৎক্ষেপণ অবকাঠামোর ওপর নির্ভরশীল। পাশাপাশি প্রয়োজন হয় প্রশিক্ষিত স্থল কর্মীর উপস্থিতিও। ক্ষেপণাস্ত্রে জ্বালানি ভরার সময়টাকেই সবচেয়ে 'ঝুঁকিপূর্ণ সময়' বলে মনে করা হয়—বিশেষ করে যখন শত্রুপক্ষের স্যাটেলাইট ও নজরদারি বিমান আকাশে উপস্থিত থাকে। শনাক্তকরণ এবং আক্রমণের ঝুঁকি কমাতে, ইরান প্রায়শই রাতে জ্বালানি ভরার কাজটি সম্পন্ন করে , যখন দৃশ্যমানতা কম থাকে এবং আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্তকরণের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।

কঠিন জ্বালানি 
ফাতেহ-১১০ এবং জোলফাঘরের মতো স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সাধারণত কঠিন জ্বালানি দ্বারা চালিত হয়। এই সিস্টেমগুলোতে জ্বালানি এবং অক্সিডাইজারের মিশ্রণ আগে থেকেই ক্ষেপণাস্ত্রের দেহের মধ্যে সংরক্ষিত থাকে। ফলে এগুলো উৎক্ষেপণের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত থাকে, আলাদাভাবে জ্বালানি ভরার প্রয়োজন পড়ে না। এছাড়া এগুলো দ্রুত ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাটফর্ম থেকেও উৎক্ষেপণ করা যায়। যার ফলে হঠাৎ হামলা বা বিচ্ছিন্নভাবে পরিচালিত যুদ্ধের ক্ষেত্রে এগুলোর কার্যকারিতা বেশি। তবে একবার জ্বলে উঠলে কঠিন জ্বালানি-চালিত ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে থামানো বা থ্রোটল করা যায় না। গতিশীলতা ও দ্রুত ব্যবহারের সুবিধা থাকলেও এই প্রযুক্তির বড় সীমাবদ্ধতা হলো—নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি।

কেন ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে নিজস্ব অক্সিজেন বহন করতে হয়?
ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য কেন অনবোর্ড অক্সিডাইজারের প্রয়োজন হয়, এই প্রশ্নটি প্রায়শই ওঠে। জেট ইঞ্জিনগুলো বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে, তার বিপরীতে, ক্ষেপণাস্ত্র ইঞ্জিনগুলোকে এমন পরিবেশে কাজ করতে হয় যেখানে অক্সিজেন অপর্যাপ্ত বা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো  কয়েক ডজন - এমনকি শত শত - আকাশে উড়তে পারে,  এমনকি যেখানে অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে সেখানেও। তাদের গতিবিধি যথাযথ করার হলে  শুরু থেকেই দহনের জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু বহন করতে হয়।

প্রযুক্তি এবং কৌশল

ইরানের রাতে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়টি কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এটি সামরিক পরিকল্পনার অংশ, যেখানে নেপথ্যে কাজ করছে প্রযুক্তি, কৌশল এবং যুদ্ধের মনস্তত্ত্ব। কঠিন এবং তরল জ্বালানিযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র, মোবাইল লঞ্চ প্ল্যাটফর্ম এবং রাতের  আড়ালকে  ব্যবহার করে, ইরান এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করেছে যা শত্রুপক্ষকে অপ্রস্তুত করে ও মানসিক দুর্বল করে দিতে পারে।  এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও এর মানে এই নয় যে পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিরোধ ও প্রতিরক্ষার চলমান যুদ্ধে, উৎক্ষেপণের সময় নির্ধারণ করা ক্ষেপণাস্ত্র বেছে নেবার মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ।

সূত্র :  দা জেরুজালেম পোস্ট

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status