ঢাকা, ১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

বিশ্বে প্রজনন হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাচ্ছে: জাতিসংঘ

মানবজমিন ডিজিটাল

(১ সপ্তাহ আগে) ১০ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ৪:০৪ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:১০ পূর্বাহ্ন

mzamin

নম্রতা নাঙ্গিয়া ও তার স্বামী তাদের পাঁচ বছরের মেয়ের জন্মের পর থেকেই আরেকটি সন্তান নেয়ার কথা চিন্তাভাবনা করছেন। কিন্তু সবসময় একটি প্রশ্ন তাদের মাথায় আসছে-‘আমরা কি আরেক সন্তানের খরচ  বহন করতে পারব?’ নম্রতা মুম্বাইতে থাকেন এবং একটি ওষুধের দোকানে কাজ করেন। তার স্বামী একটি টায়ার কোম্পানিতে কাজ করেন। একটি সন্তানকে প্রতিপালন করতে গিয়েই তারা হিমশিম খাচ্ছেন।

সন্তানের স্কুল ফি, বাস ভাড়া, সাঁতারের ক্লাস সবই খুব ব্যয়বহুল। নম্রতা বলছেন, আমরা যখন ছোটো ছিলাম তখন পরিস্থিতি অন্যরকম ছিল। আমরা আগে স্কুলে যেতাম, সঙ্গে অন্যকিছু করতে হতো না। কিন্তু এখন তোমার বাচ্চাকে সাঁতার কাটানো শেখাতে হবে, ছবি আঁকতে পাঠাতে হবে, দেখতে হবে ওরা আর কী কী করতে পারে।

জাতিসংঘের প্রজনন অধিকার সংস্থা জাতিসংঘ জনসংখ্যা উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনএফপিএ) একটি নতুন প্রতিবেদন অনুসারে, নম্রতার পরিস্থিতি বিশ্বব্যাপী স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। সংস্থাটি উর্বরতা হ্রাসের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত তার সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে, সতর্ক করে দিয়েছে যে লাখ লাখ মানুষ তাদের পছন্দমতো সন্তান ধারণ করতে পারছে না। কারণ এর কয়েকটি কারণ হল পিতা-মাতার খরচের ধাক্কা এবং উপযুক্ত সঙ্গীর অভাব।

ইউএনএফপিএ ১৪টি দেশের ১৪,০০০ মানুষের ওপর তাদের সন্তান জন্মদানের ইচ্ছা সম্পর্কে জরিপ চালিয়েছে। প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন বলেছেন যে তাদের কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক সন্তান হয়নি বা হবে বলে তারা আশা করেন না। জরিপ করা দেশগুলো হলো, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, হাঙ্গেরি, জার্মানি, সুইডেন, ব্রাজিল, মেক্সিকো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মরক্কো, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নাইজেরিয়া। বিশ্ব জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ এই দেশগুলো নিম্ন, মধ্যম ও উচ্চ আয়ের দেশ। নিম্ন ও উচ্চ উর্বরতা সম্পন্ন দেশগুলোর মিশ্রণ।

ইউএনএফপিএ তরুণ প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রজনন বছর পেরিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের উপরও জরিপ করেছে। ইউএনএফপিএ-এর প্রধান ড. নাটালিয়া কানেম বলছেন, বিশ্বে উর্বরতার হারে অভূতপূর্ব পতন শুরু হয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ মানুষ দুই বা ততোধিক সন্তান চান। উর্বরতার হার মূলত হ্রাস পাচ্ছে কারণ অনেকেই তাদের পছন্দের পরিবার তৈরি করতে অক্ষম বোধ করছেন। এটাই আসল সংকট।

ইউরোপে উর্বরতা নিয়ে গবেষণা করা জনসংখ্যাবিদ আনা রটকির্চ বলছেন, এটাকে একটা সংকট বলা ভুল, বরং এটাই বাস্তব। আমার মনে হয় এটা একটা পরিবর্তন। সামগ্রিকভাবে উর্বরতার চেয়েও বেশি কিছুরই অভাব রয়েছে। তিনি ইউরোপে এই বিষয়ে দীর্ঘ গবেষণা করেছেন এবং বিশ্বব্যাপী এর প্রতিফলন দেখতে আগ্রহী। ৫০ জনেরও বেশি (৩১%) উত্তরদাতারা যখন বলেছিলেন যে তাদের প্রত্যাশার চেয়ে কম সন্তান আছে, তখন তিনি অবাক হয়েছিলেন। এই বছরের শেষের দিকে ৫০টি দেশে গবেষণা চালানো হয়। সকল দেশে ৩৯% মানুষ বলেছেন যে, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে তারা সন্তান ধারণ করতে পারছেন না। সর্বোচ্চ সাড়া মিলেছে কোরিয়ায় (৫৮%), সর্বনিম্ন সুইডেনে (১৯%)। মাত্র ১২% মানুষ বন্ধ্যাত্ব বা গর্ভধারণে অসুবিধা - কে তাদের পছন্দের সংখ্যক সন্তান না পাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু থাইল্যান্ড (১৯%), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (১৬%), দক্ষিণ আফ্রিকা (১৫%), নাইজেরিয়া (১৪%) ও ভারতসহ (১৩%) দেশগুলোতে এই সংখ্যা বেশি ছিল।

হংকং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংখ্যাবিদ অধ্যাপক স্টুয়ার্ট গিটেল-বাস্টেন বলছেন, ‘এই প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ কম উর্বরতার বিষয়টি নিয়ে সত্যিই সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে এসেছে।’ আগে সংস্থাটি এমন নারীদের ওপর বেশি মনোযোগ দিত যাদের তাদের ইচ্ছার চেয়ে বেশি সন্তান আছে। এখন ইউএনএফপিএ কম উর্বরতার প্রতিক্রিয়ায় সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানাচ্ছে।

সংস্থাটি শিশুদের জন্য আর্থিক অবস্থার চেয়েও বড় বাধা খুঁজে পেয়েছে সময়ের অভাব। মুম্বাইয়ের নম্রতার ক্ষেত্রে এটি সত্য। প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করতে তার কমপক্ষে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। যখন তিনি বাড়ি ফিরে আসেন তখন তার সন্তান মায়ের সাথে সময় কাটাতে চায়, কিন্তু তিনি এতটাই ক্লান্ত থাকেন সেই সময় দিতে পারেন না। নম্রতার কথায়, একটি কর্মদিবসের পর স্পষ্টতই একজন মা হিসেবে আপনার মনে একটা অপরাধবোধ কাজ করে যে আপনি আপনার সন্তানের সাথে পর্যাপ্ত সময় কাটাচ্ছেন না। তাই আমি এবং আমার স্বামী কেবল একটি সন্তানের ওপরই মনোযোগ দিতে চাই।

সূত্র: বিবিসি

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status