ঢাকা, ১৯ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

অনলাইন

গ্রেটা থুনবার্গকে নিয়ে গাজাগামী ত্রাণবাহী নৌকা আটক করে আনা হলো ইসরাইলে

মানবজমিন ডিজিটাল

(১ সপ্তাহ আগে) ১০ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১:৫৭ অপরাহ্ন

সর্বশেষ আপডেট: ১২:০৫ পূর্বাহ্ন

mzamin

সোমবার গ্রেটা থুনবার্গ এবং অন্যান্য কর্মীদের বহনকারী গাজাগামী একটি ত্রাণবাহী নৌকা ইসরাইলি বন্দরে পৌঁছালে সে দেশের সেনাবাহিনী তাদের থামিয়ে আটক করে। ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলি নৌবাহিনীর সঙ্গে থাকা নৌকাটি সন্ধ্যায় আশদোদে পৌঁছায়। বন্দরে নামার পর থুনবার্গের একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করা হয়। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১২ জন কর্মীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য তাদের মেডিকেল পরীক্ষা করা হচ্ছে।

তাদের প্রতিনিধিত্বকারী আইনি অধিকার গোষ্ঠী আদালাহ জানিয়েছে, তাদের নির্বাসনের পাঠানোর আগে রামলেতে একটি আটক কেন্দ্রে রাখা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে থুনবার্গসহ অন্যান্য সাহায্যকর্মীরা ত্রাণ নিয়ে বেরিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সবচেয়ে মারাত্মক এবং ধ্বংসাত্মক হামলা চালানো হয়েছে গাজায়। একইসঙ্গে মানবিক সাহায্য প্রবেশের ওপর রয়েছে ইসরাইলের বিধিনিষেধ। এর জেরে ২০ লাখ ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।

এই যাত্রার আয়োজনকারী ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন জানিয়েছে, জরুরি সাহায্য পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করার সময় কর্মীদের ‘ইসরাইলি বাহিনী অপহরণ’ করে। একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, জাহাজটিকে বেআইনিভাবে থামানো হয়। এর নিরস্ত্র বেসামরিক ক্রুদের অপহরণ করা হয় এবং এর জীবন রক্ষাকারী পণ্যসম্ভার, যার মধ্যে শিশুদের খাবার এবং চিকিৎসা সরবরাহ ছিল সেগুলো জব্দ করা হয়।

গাজা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার (১২০ মাইল) দূরে আন্তর্জাতিক জলসীমায় জাহাজটি আটক করা হয়েছে এবং আদালাহ জোর দিয়ে বলেছে যে, ইসরাইলের এটি দখল করার ‘কোনো আইনি অধিকার’ নেই। ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ভ্রমণকে জনসংযোগের একটি কৌশল হিসেবে চিত্রিত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছে যে, ‘সেলিব্রিটিদের সেলফি ইয়াট’ নিরাপদে ইসরাইলের উপকূলে পৌঁছেছে। বলা হয়েছে যে, কর্মীরা তাদের নিজ দেশে ফিরে যাবেন এবং প্রতিষ্ঠিত চ্যানেলের মাধ্যমে সাহায্য গাজায় পাঠানো হবে। এমন একটি ফুটেজ প্রচার করা হয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে ইসরাইলি সামরিক কর্মীরা লাইফ জ্যাকেট পরা কর্মীদের স্যান্ডউইচ এবং পানি বিতরণ করছেন।

ইসরাইল বলছে নৌকায় খুব কমই ত্রাণ ছিল

ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নৌকাটিতে এক ট্রাকেরও কম ত্রাণ ছিল। ইসরায়েলি সরকারের মুখপাত্র ডেভিড মেনসার বলেছেন, ‘এটিতে মানবিক সাহায্য ছিল না। বরং মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়াস ছিল। বরং গত দুই সপ্তাহে ইসরায়েল ১,২০০ টিরও বেশি ট্রাক বোঝাই পণ্য পৌঁছে দিয়েছে। বুঝতে হবে আসলে কে গাজাকে খাওয়াচ্ছে। গ্রেটা কোনো সাহায্য আনছিল না, বরং সে নিজেকে আনছিল।’

হামাসের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে আড়াই মাস ধরে অবরোধের পর ইসরাইল গত মাসে গাজায় কিছু মৌলিক সাহায্য প্রবেশের ছাড়পত্র দেয়। কিন্তু মানবিক কর্মী এবং বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, অবরোধ প্রত্যাহার না করা হলে এবং ইসরাইল তার সামরিক আক্রমণ বন্ধ না করলে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা রয়েছে। আয়োজকরা জানিয়েছেন, গত মাসে ফ্রিডম ফ্লোটিলার সমুদ্রপথে গাজা পৌঁছানোর একটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, যখন মাল্টার কাছে আন্তর্জাতিক জলসীমায় দু’টি ড্রোন জাহাজটিতে আক্রমণ করে। এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করা হয়েছে। হামলার ফলে জাহাজের সামনের অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ইসরায়েলের দখল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে অধিকার গোষ্ঠী

ম্যাডলিন নৌকাটি এক সপ্তাহ আগে সিসিলি থেকে যাত্রা শুরু করে। যাত্রা পথে বৃহস্পতিবার এটি চারজন অভিবাসীকে উদ্ধার করতে থামে, যারা লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের আটক এড়াতে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। একটি পূর্ব-রেকর্ড করা বার্তায় থুনবার্গ বলেছেন, ‘আমি আমার সকল বন্ধু, পরিবার এবং সহকর্মীদের অনুরোধ করছি, যেন তারা আমাকে এবং অন্যদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মুক্তি দেয়ার জন্য সুইডিশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন।’

মানবাধিকার সংগঠন আদালাহ এক বিবৃতিতে বলেছে যে, নিরস্ত্র কর্মীদের গ্রেপ্তার, যারা মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য বেসামরিকভাবে কাজ করে, আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের শামিল।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একজন ফরাসি সদস্য এবং ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত রিমা হাসানও এই নৌকায় ছিলেন। ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলি নীতির বিরোধিতা করার কারণে তাকে ইসরাইলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। রিমা ছাড়াও ছয়জন ফরাসি নাগরিক নৌকায় ছিলেন। ফরাসি প্রেসিডেন্ট  ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ কনস্যুলার সুরক্ষা এবং ফরাসি নাগরিকদের প্রত্যাবাসনের আহ্বান জানিয়েছেন। ম্যাক্রোঁ বলেন, ‘ফ্রান্স যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক অবরোধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। এটি একটি অগ্রহণযোগ্য পরিস্থিতি যা গাজায় চলছে। মার্চের শুরু থেকে যা ঘটছে তা লজ্জাজনক।’ 
প্রেসিডেন্টের কথায়, ফ্রান্সের উচিত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়া। সুইডিশ সংবাদ সংস্থা টিটি জানিয়েছে, সুইডিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়া মালমার স্টেনগার্ড বলেছেন যে নৌকার ক্রু এবং যাত্রীরা ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। স্টেনগার্ড বলেছেন যে, মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়ন হল যে কেউ বিপদে নেই এবং কনস্যুলার সহায়তার কোনও প্রয়োজন নেই।

গ্রেটা থুনবার্গের রাগ নিয়ন্ত্রণের ক্লাস নেয়া উচিত: ট্রাম্প

হোয়াইট হাউসে থুনবার্গ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয় তাকে রাগ নিয়ন্ত্রণের ক্লাসে পাঠানো উচিত। এটাই গ্রেটার জন্য আমার প্রাথমিক সুপারিশ।’ ট্রাম্প জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি অবশ্য জানি না, এটা আসল রাগ কিনা।’

গাজার ওপর ১৮ বছরের অবরোধ

২০০৭ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী ফিলিস্তিনি বাহিনীর কাছ থেকে হামাস ক্ষমতা দখলের পর থেকে ইসরাইল এবং মিশর গাজার ওপর বিভিন্নভাবে অবরোধ আরোপ করেছে। ইসরাইল বলেছে যে, হামাসকে অস্ত্র আমদানি থেকে বিরত রাখার জন্য এই অবরোধ প্রয়োজন, অন্যদিকে সমালোচকরা বলছেন যে, এটি গাজার ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর শাস্তির সমান। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের নেতৃত্বে হামলার ফলে সৃষ্ট যুদ্ধের প্রথম দিকে ইসরাইল গাজা থেকে সমস্ত সাহায্য বন্ধ করে দেয়, কিন্তু পরে মার্কিন চাপের মুখে তারা নতি স্বীকার করে।

মার্চের শুরুতে হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতি শেষ করার কিছু মুহূর্ত আগে দেশটি আবারও খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধসহ সমস্ত আমদানি বন্ধ করে দেয়। ৭ অক্টোবরের ওই হামলায় হামাসের নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা প্রায় ১,২০০ জনকে হত্যা করে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ২৫১ জন জিম্মিকে অপহরণ করে। এদের বেশিরভাগই যুদ্ধবিরতি চুক্তি বা অন্যান্য চুক্তির দ্বারা মুক্তি পেয়েছে। হামাস এখনও ৫৫ জন জিম্মিকে ধরে রেখেছে, যাদের অর্ধেকেরও বেশি নিহত বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলের সামরিক অভিযানে ৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বেসামরিক নাগরিক এবং যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করে না, তবে তারা বলেছে যে, নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। যুদ্ধ গাজার বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস করে দিয়েছে এবং প্রায় ৯০% মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে। যার ফলে সেখানকার মানুষ প্রায় সম্পূর্ণরূপে আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আরেকটি যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা কয়েক মাস ধরে অচলাবস্থার মধ্যে রয়েছে। হামাস বলেছে যে, তারা কেবল একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের বিনিময়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেবে।

অন্যদিকে সমস্ত বন্দীকে ফিরিয়ে দেয়া এবং হামাসকে পরাজিত, নিরস্ত্র এবং নির্বাসিত না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরায়েল।

সূত্র: এপি নিউজ

অনলাইন থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

অনলাইন সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status