খেলা
মাঠের ফুটবলটা ঠিকঠাক খেলতে পারবেনতো হামজা-তপু-জামালরা?
স্পোর্টস রিপোর্টার
(১৮ ঘন্টা আগে) ১০ জুন ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১:১৬ পূর্বাহ্ন
সর্বশেষ আপডেট: ৮:০৫ অপরাহ্ন

হ্যামিলিয়নের বাঁশিওয়ালা হয়ে বাংলাদেশের ফুটবলে আবির্ভাব ঘটেছে হামজা চৌধুরীর। তাকে পেয়ে প্রাণ ফিরেছে দেশের ফুটবলে। মাঠে দর্শক ফিরতে শুরু করেছে। খেলারও উন্নতি চোখে পরছে। হামজার উপস্থিতিতে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ ভারতের মাটিতে ভারতের সঙ্গে ড্র করে ফিরেছে। এবার ঘরের মাঠে সিঙ্গাপুর। যেখানে হামজার সঙ্গে আছেন শমিত সোম, ফাহমিদুল ইসলাম। তাদের ওপর বিশ্বাস করেই দেশের ফুটবলকে নিয়ে আবারও বড় স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন সমর্থকরা। এদের কারণেই সিঙ্গাপুর ম্যাচকে ঘিরে স্মরণ কালের সেরা উন্মাদনা তৈরি হয়েছে দেশের ফুটবলে। বাফুফেও সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে। ম্যাচটাকে বাণিজ্যিকি করণ করতে গিয়ে মাঠের বাইরের দিকেই বেশি নজর দিয়েছেন তারা। ম্যাচের আগে কনসার্ট, মধ্যবিরতীতে ব্যবস্থা করা হয়েছে আতশবাজির। এই ম্যাচকে ঘিরে চারজন নারী উপস্থাপককেও হাজির করাচ্ছে বাফুফে। তাদেরও নানা কর্মকাণ্ড থাকছে ম্যাচটির আগে ও পরে। এসবের বাইরে হামজা শমিতদের নিয়ে হোটেলে যা হয়েছে, তা ছিল নজিড়বিহীন।
ফুটবলের ইতিহাস-ঐতিহ্যে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে সিঙ্গাপুর। আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের অভিষেক হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। তারও ২৫ বছর আগে বৈশ্বিক ফুটবলে পথচলা শুরু সিঙ্গাপুরের। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের অভিষেক আসরেই এই সিঙ্গাপুরের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। সেটি মালয়েশিয়ার মারদেকা কাপে। কাজী মো. সালাউদ্দিনের গোলে বাংলাদেশ লিড নিয়েও ধরে রাখতে পারেনি, ম্যাচ শেষ হয়েছিল ১-১ গোলের সমতায়। ওই ম্যাচের ৪২ বছর পর ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক ফুটবলে দ্বিতীয়বার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুর। ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে ওই ম্যাচে বাংলাদেশ লিড নিয়েও জিততে পারেনি, হেরেছিল ২-১ গোলে। দীর্ঘ ১০ বছর পর আবার মুখোমুখি দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দুই দেশ। তবে আন-অফিসিয়াল ম্যাচে বাংলাদেশ আরও ৩ বার খেলেছে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে। ১৯৭৩ সালে মারদেকা কাপ খেলে দেশে ফেরার পথে সিঙ্গাপুরে দুটি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। দেশটির জাতীয় দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ জিতেছিল ১-০ গোলে। গোল করেছিলেন নওশেরুজ্জামান। যেটি বাংলাদেশ দলের প্রথম জয়। যদিও ওই ম্যাচটি টায়ার-১ ছিল কিনা সে তথ্য পাওয়া যায়নি। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ‘বি’ দল পাঠানো হয়েছিল মারদেকা কাপে। ওই সময় বাংলাদেশ জাতীয় দল ছিল ভারতের দিল্লিতে নেহরু কাপ খেলতে। সেবার সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে হেরেছিল ২-১ গোলে। এরপর ২০১৫ সালে ফিফা প্রীতি ম্যাচে সিঙ্গাপুরকে আতিথেয়তা দিয়েছিল বাংলাদেশ। সর্বশেষ ওই ম্যাচে বাংলাদেশ নাসির উদ্দিন চৌধুরীর গোলে শুরুতে লিড নিয়েও হেরেছিল ২-১ ব্যবধানে।
দীর্ঘ ১০ বছর পর আজ (মঙ্গলবার) ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৭ টায় যে ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ, সেই ম্যাচ নিয়ে তোলপাড় পুরো ক্রীড়াঙ্গন। এই ম্যাচটি এশিয়ান কাপের টিকিট অর্জনের। কেবল সে কারণেই আলোচিত নয় ম্যাচটি। আলোচনার রসদ জুগিয়েছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হামজা চৌধুরী, কানাডা জাতীয় দলে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন খেলোয়াড় শমিত সোম ও ইতালির চতুর্থ বিভাগের দলে খেল ফাহমিদুল ইসলামের অন্তর্ভূক্তি। যদিও হামজা, ফাহামিদুলের অভিষেক হয়ে গেছে। ভারত ও ভুটানের বিপক্ষে খেলেছেন হামজা। ফাহমিদুল ইসলামের অভিষেক হয়েছে ভুটানের বিপক্ষে। সবকিছু ঠিক থাকলে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে অভিষেক হবে শমিত সোমের। বাংলাদেশ দলে এখন ৬ জন প্রবাসী ফুটবলার। দেশের প্রধান ফুটবল ভেন্যু ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়াম ১৬০ কোটি টাকায় নতুন করে সেজেছে। দীর্ঘ ৫৫ মাস পর এই স্টেডিয়ামে ফুটবল ফিরেছে গত ৪ জুন ভুটানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। তবে মঙ্গলবারের সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচটি এখন আলোচনার তুঙ্গে। আলোচনা শুধু মাঠের খেলার কারণে নয়। আলোচনা হচ্ছে বাফুফের বেশ কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে।
সাধারণ ফিফা এএফসির এধরণের ম্যাচে খুব বেশি আনুষ্ঠানিকতা দেখা যায়না কোথাও। কিন্তু বাফুফে এই ম্যাচকে সামনে রেখে যা করছে তা আসলে সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। ম্যাচটিকে টাকা আয়ের খাত বানাতে গিয়ে বঞ্চিত করা হয়েছে সাধারণ দর্শকদের। টিকেটের দাবিতে দিনের পর দিন আন্দোলন করেছেন যারা তারা টিকেট পাননি। অথচ টিকেট পেয়েছেন বনানী ক্লাব, অলকমিউনিটি ক্লাবের কর্মকর্তারা। পেশাদার লীগের ক্লাবগুলোকেও চাহিদামতো টিকেট দেয়া হয়নি। ফুটবলারদের ব্যবহার করা হয়েছে নানা ভাবে। বিশেষ করে হামজা চৌধুরী ও শমিত সোমকে। একদিনে সাত আটটা করে সাক্ষাৎকার দিতে দেখা গেছে এই দুই ফুটবলারকে। যারা চেয়েছে তারাই হোটেলে ছবি তুলতে পেরেছেন হামজা শমিতের সঙ্গে। স্পন্সরদের খুশি করতে তাদের ডেকে এনে ছবি তোলানো হয়েছে। যা নিয়ে খুবই বিরক্ত জাতীয় দলের হেড কোচ হাভিয়ের কাবরেরা। এতো সব ইন্টারভিউ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামজাদের উপস্থিতি মোটেও ভালো চোখে দেখছেন না এই স্প্যানিশ কোচ। সাবেক ফুটবলারদের মতেও বাফুফে খেলার চাইতে বাইরে বেশি মনোযোগ দিয়ে ফেলেছে।
তবে এসব পাশকাটিয়ে মাঠের ফুটবলে ভালো খেলবে বাংলাদেশ, এটাই সকলের প্রত্যাশা।