খেলা
‘কোচ আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন’
স্পোর্টস ডেস্ক
১১ জুন ২০২৫, বুধবার
গেল রোববার পোলিশ ফুটবল ফেডারেশন বিবৃতিতে জানায়, জাতীয় দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোচ মিখাও প্রবিয়েশ। ২০১৪ সাল থেকে অধিনায়কত্ব করে আসা লেভানডোভস্কির জায়গায় অধিনায়কত্ব পান অভিজ্ঞ মিডফিল্ডার পিয়ত্র জেলিনস্কি। এর ৩৯ মিনিট পর সামাজিক মাধ্যমে লেভানডোভস্কি জানান, এই কোচ যতদিন দায়িত্বে আছেন, ততদিন জাতীয় দলে খেলবেন না তিনি। এবার সিদ্ধান্তের পেছনের ঘটনাপ্রবাহও বিস্তারিত তুলে ধরলেন পোল্যান্ডের অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড। বললেন, কোচ তার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
পোলিশ ক্রীড়া সংবাদমাধ্যম স্পোর্তভাফাক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ৩৬ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকার বলেন, ‘প্রবিয়েশের কাছ থেকে চমকপ্রদ একটি ফোনকল পাই। তিনি জানান যে, আমার আর্মব্যান্ড নিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি একটুও প্রস্তুত ছিলাম না। বাচ্চাদেরকে ঘুমতে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন। স্রেফ কয়েক মিনিটের আলোচনা ছিল। কী হয়ে গেল, পরিবারকে সেটা জানানোর সময় পর্যন্ত পাইনি। কারণ একটু পরই ফেডারেশনের ওয়েবসাইটে খবর খবরটি ফুটে ওঠে, অনলাইনে ভেসে বেড়াতে থাকে। আমার সঙ্গে যোগাযোগের যে প্রক্রিয়া ছিল, খুবই বিস্ময়কর তা।’
বিশ্বকাপের যখন আর এক বছরের মতো বাকি, বিশ্বকাপ বাছাই উতরানোর চ্যালেঞ্জ দলের সামনে, তার এমন বিদায় জন্ম দিয়েছে অনেক প্রশ্নের। লেভানডোভস্কি সরাসরি দায় দিলেন কোচকেই। তার মতে, যোগাযোগের প্রক্রিয়ায় প্রাপ্য সম্মান তাকে দেওয়া হয়নি। বার্সেলোনার এই স্ট্রাইকার বলেন, ‘দুই-এক বছর নয়, ১১ বছর ধরে এই আর্মব্যান্ড পরছি আমি, জাতীয় দলের হয়ে খেলছি ১৭ বছর ধরে। আমার ধারণা ছিল, এই ধরনের ব্যাপারগুলি ভিন্নভাবে সামলানো হয়। বিশেষ করে, পিঠেপিঠি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ ছিল, ওই ম্যাচ শেষে পরবর্তী ট্রেনিং ক্যাম্প অনেক দিন পরে। এত তাড়াহুড়ো কেন? স্রেফ ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছে আমার সঙ্গে। এই ব্যাপারটি তো এমন হওয়ার কথা নয়! কোচ আমার ভরসার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আমি সবসময় জাতীয় দলের হয়ে নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়েছি, সবসময় আমার কাছে এটা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এবার যা হলো, তাকে কষ্ট পেয়েছি।’ পোল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা (১৫৮) ও সবচেয়ে বেশি গোলের (৮৫) রেকর্ড লেভানডোভস্কির। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ফুটবলার তো বটেই, অনেক বছর ধরে পোল্যান্ডের একমাত্র বৈশ্বিক তারকাও তিনি। বার্সেলোনার হয়ে ক্লাব মৌসুম শেষে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য মলদোভার বিপক্ষে সবশেষ প্রীতি ম্যাচে ও ফিনল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে খেলেননি তিনি। লেভানডোভস্কির ধারণা, এতে প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন কোচ।
তিনি বলেন, স্রেফ আর্মব্যান্ড কেড়ে নেওয়ার ব্যাপার এটি নয়, বরং যেভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। আর্মব্যান্ড হারানো নিয়ে আমার ভাবনা নেই। জেলিনস্কির ওপর আমার বিশ্বাস আছে এবং তার প্রতি শুভকামনা থকবে সবসময়। তবে আমার মনে হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের চাপে পড়ে এমনটি করেছেন কোচ। আমাদের মধ্যে যে মতানৈক্য হয়েছিল, কোচ তা ভঙ্গ করেছেন এবং তার আচরণে আমি বিস্মিত। ‘এবার আমি ট্রেনিং ক্যাম্পে থাকছি না, এটা তো কোচের সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করা হয়েছিল। আমি তাকে ফোন করে বলেছিলাম যে, তার কী মনে হয়, আমার বিশ্রাম নেওয়া উচিত কি না। তিনি বলেছিলেন, এই ভাবনায় তার সমর্থন আছে এবং এটাও বলেছেন যে, তিনি নিজেই ফোন করে এটা আমাকে বলতে চেয়েছিলেন।’
এই ঘটনা সহজে ভুলে যাবেন না বলে জানালেন লেভানডোভস্কি। তবে জাতীয় দলের দুয়ার চিরতরে বন্ধও রাখেননি তিনি। লেভা বলেন, ‘ফুটবলে বিশ্বাসই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। সফল হতে হলে একই পথের পথিক হতে হবে। কখনও কখনও কার সঙ্গে কিছু নিয়ে দ্বিমত হতেই পারে, খুবই স্বাভাবিক তা। তবে এবার যেভাবে যা হলো, তা ভুলে যাওয়া কঠিন।
আমি আরও সময় নিতে চাই এবং স্থির হয়ে ভাবতে চাই। এরপর নিজের ভাবনা বলতে পারব, জানাতে পারব ভবিষ্যৎ নিয়ে। আমি সবসময়ই জাতীয় দলকে প্রাধান্য দিয়েছি।’ আর দিন সংবাদ সম্মেলনে কোচ প্রবিয়েশ বললেন, দলের ভালোর জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পুরো একটা দিন ভেবেছি, অনেক চিন্তা করেছি সিদ্ধান্তটি নিতে। অনেক পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্তটি নিয়েছি। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ও স্থান সবসময়ই কঠিন। লেভানদোভস্কি অসাধারণ একজন ফুটবলার। তবে আমার মনে হয়েছে, অধিনায়ক পরিবর্তনের সময় এখনই।’