খেলা
কাবরেরার প্লেয়ার সিলেকশন ও কৌশলই কি হারের কারণ!
স্পোর্টস রিপোর্টার
১২ জুন ২০২৫, বৃহস্পতিবার
দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে সফরকারী সিঙ্গাপুরের কাছে ২-১ গোলে হার দেখেছে হামজা-তপুরা । বাংলাদেশের এই ভরাডুবি জন্য কোচকে দায়ী করছেন বাংলাদেশের সাবেক ফুটবলাররা। তাদের মতে কোচ হাভিয়ের কাবরেরার কৌশল ও ভুল প্লেয়ার সিলেকশনের কারণেই দলের এই হার।
সিঙ্গাপুর ম্যাচকে সামনে রেখে ভুটানের বিপক্ষে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে ডিফেন্ডার তাজউদ্দিনকে পুরো ৯০ মিনিট খেলান কাবরেরা। অথচ সিঙ্গাপুর ম্যাচে তাকে একাদশেই রাখলেন না এই স্প্যানিশ কোচ। ভুটান ম্যাচের গোলদাতা সোহেল রানাকে একাদশে না রাখা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সিঙ্গাপুর ম্যাচের মাত্র দু’দিন আগে আপন বড় ভাইকে হারিয়েছেন গোলরক্ষক মিতুল মারমা। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন স্বাভাবিক। ম্যাচে তার নেতিবাচক প্রভাবও পড়েছে । ম্যাচে বাংলাদেশের হজম করা দুই গোলেই দায় আছে মিতুলের। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে বিষয়টি এক প্রকার স্বীকারও করেছেন এই গোলরক্ষক। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বিপর্যস্ত মিতুলকে একাদশে রাখা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেকরা। ট্রেনিংয়ে সবসময় সেটপিস নিতে দেখা যায় জামাল ভূঁইয়াকে। মাঝে মধ্যে কাজটি করেন সোহেল রানা। ভুটান ম্যাচে জামালের কর্নারেই গোল পেয়েছিলেন হামজা চৌধুরী। সিঙ্গাপুর ম্যাচের আগের দিনও ট্রেনিংয়ে সেটপিস নিয়েছেন জাতীয় দলের অভিজ্ঞ এই দুই ফুটবলার। অথচ এদের কাউকে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে একাদশে রাখেননি কাবরেরা। জাতীয় দলের সাবেক স্ট্রাইকার জাহিদ হাসান এমিলি রাখঢাক না করে বলেন, ‘আমাদের দলের সামর্থ্য ছিল সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জয়ের। উল্টো আমরা হেরেছি। এই দায় পুরোপুরি কোচের। কারণ তার কৌশল-পরিকল্পনা যেমন ভুল ছিল তেমনি তার খেলোয়াড় নির্বাচন ও পরিচালনা পদ্ধতিও সঠিক ছিল না।’ জাতীয় দলের সাবেক এই স্ট্রাইকার ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘কোচের শুরু থেকে তিন পয়েন্টের অ্যাপ্রোচ দেখা যায়নি। যখন এক গোল বাংলাদেশ দিলো এরপর তিনি জয়ের চেষ্টা করেছেন। অথচ যিনি গোল করলেন সেই ফরোয়ার্ড রাকিবকে তিনি রাইটব্যাক পজিশনে নামিয়ে আনলেন। তার যখন প্রতিপক্ষের বক্সে ভীতি ছড়ানোর কথা তখন তিনি রাইট ব্যাকে- যা অবিশ্বাস্য।’
দেশের অন্যতম শীর্ষ কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টুুও অবাক কোচের এমন কাণ্ডে। তিনি বলেন, ‘একজন খেলোয়াড় গোল করলেন সেই খেলোয়াড়কে কোন যুক্তিতে, কোন ট্যাকটিক্সে রাইট ব্যাক এটা আমার মোটেও বোধগম্য নয়। শুরু থেকেই খেলায় কোনো পরিকল্পনার ছাপ ছিল না।’ কানাডা জাতীয় ফুটবল দলে খেলা ফুটবলার শমিত সোমের অভিষেক হয়েছে এই ম্যাচে। শমিত গতকাল দুই অর্ধেই বেশ কয়েকটি ভালো বল দিয়েছিলেন বক্সে। প্রকৃত স্ট্রাইকার না থাকায় শমিতের এত সুন্দর পাস থেকেও গোল আসেনি। এতেও কোচকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন এমিলি।
তিনি বলেন, ‘সুমন রেজা, আল আমিনের মতো জেনুইন স্ট্রাইকার রয়েছে। সামিত বক্সে খুব ভালো ডেলিভারি দিতে পারেন। এটা জেনেও কেন আমরা শুরু থেকে আল আমিন কিংবা সুমনকে ব্যবহার করিনি। বাংলাদেশ ৬৬ মিনিটে গোল করার দশ মিনিট পরে আল আমিনকে নামিয়েছেন কোচ। তখন আবার রাকিব রাইটব্যাকে। সব কিছুই এলেমেলো।’ ম্যাচে দ্বিতীয়ার্ধে ১০টি কর্নার পেয়েছে বাংলাদেশ। যা থেকে কোনো ফায়দা নিতে পারেনি দল। এই ব্যর্থতার দায় কোচের ওপর চাপিয়ে এমিলি বলেন, ‘জামাল কর্নার ও ফ্রি কিকে সবচেয়ে ভালো। যখন কোচ দেখলেন অনেক স্পট কিক হচ্ছে তখনও তিনি জামালকে নামাননি।’ জাতীয় দলের আরেক সাবেক তারকা ফুটবলার ও বর্তমান লীগ চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদ ভুটানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের যৌক্তিকতা ও বাস্তবতা খুঁজে পাচ্ছেন না। আলফাজ বলেন, ‘তাজউদ্দিন ভুটান ম্যাচে অত্যন্ত ভালো খেলেছিলেন। অথচ তাকে এই ম্যাচে ব্যবহারই করলেন না কোচ। জামাল সেদিন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই ম্যাচে তাকে অন্তত কিছু সময় খেলানোর প্রয়োজন ছিল।’
অগ্রজ আলফাজের সঙ্গে এমিলি এক সুরেই বলেন, ‘দলে প্রতিষ্ঠিত রাইটব্যাক তাজউদ্দিন রয়েছেন। কোচ সেখানে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার শাকিল তপুকে শিফট রাইট ব্যাক খেলিয়েছেন। কাজেম মূলত মিডফিল্ডার তাকে আবার করেছেন রাইট উইং। ফলে কাজেমের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত পারফরম্যান্স আসেনি।’ গোলের খেলা ফুটবল। বাংলাদেশ দু’টি গোল হজম করেছে। এই দুই গোল হজমের পেছনে গোলরক্ষকের পাশাপাশি রক্ষণকেও দায়ী করছেন এমিলি। তিনি বলেন, ‘দু’টি গোলেই মিতুল ঠিক মতো গ্রিপ করতে পারেননি। মিতুল মিস করার পরও কিন্তু দু’টি গোলের ক্ষেত্রে কিছু সময় পাওয়া গিয়েছিল। প্রথম গোলের ক্ষেত্রে দুই-তিন জনের কাছে বল ঘুরেছে। দ্বিতীয় গোলের সময় সিঙ্গাপুরের ফরোয়ার্ড বেশ কয়েক সেকেন্ড সময় পেয়েছেন। দুই ক্ষেত্রেই আমাদের ডিফেন্ডাররা প্রয়োজনীয় সময় পেলেও ঠিক মতো কাভার করতে পারেননি।’ মিতুলের পারফরমেন্স নিয়ে সাবেক গোলরক্ষক বিল্পব ভট্টাচার্য বলেন, ‘দেখুন মিতুল কিন্তু ভালো করছিল। ও ভালো গোলরক্ষক। কিন্তু আপনার বুঝতে হবে দু’দিন আগে ওর আপন বড় ভাই মারা গেছে। ওর মানসিক অবস্থা ভালো ছিল না। এই অবস্থান এমন ভুল হতেই পারে। এখানে কোচ ওকে না খেলিয়ে সুজনকে খেলালো ভালো করতেন। এখানে মিতুলের চেয়ে দায়টা বেশি কোচের।’ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ অক্টোবরে। এই সময়ের আগেই কোচ নিয়ে ফেডারেশনের চিন্তাভাবনা করা উচিত বলে মনে করেন ফুটবল সংশ্লিষ্টরা। দল নির্বাচন ও খেলার পদ্ধতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচিত এই কোচ।