খেলা
ঢাকায় ফুটবল উৎসব
স্পোর্টস রিপোর্টার
১১ জুন ২০২৫, বুধবার
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ১টা, জাতীয় স্টেডিয়ামের সব প্রবেশ পথেই মানুষের লম্বা লাইন। তখনও খেলা শুরুর অনেক বাকি। গতকাল সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশ ফুটবল দলের ম্যাচ ছিল সন্ধ্যা ৭টায়, স্টেডিয়ামের গেট খোলার কথা দুপুর ২টায়! ৩০ মিনিট দেরিতে গেট খুলতেই আলোর বেগে প্রবেশ করতে শুরু করেন দর্শকরা। বেলা ৫টা বাজার আগেই পুরো গ্যালারি ভরে যায় দর্শকে। স্টেডিয়ামের আশেপাশের দৃশ্য দেখলে প্রথমেই মাথায় আসবে উৎসব শব্দটা! আসলেই তো এটা উৎসবই, যার নাম ফুটবল উৎসব।
এএফসি কোয়ালিফায়ারের বাছাইপর্বে বাংলদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়ে উত্তাপ গেলো কয়েক সপ্তাহ ধরেই টের পাওয়া যাচ্ছিল। অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরু হতেই চাপের মুখে ওয়েবসাইট ডাউন হয়ে যায়। ফের বিক্রি শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই টিকিট শেষ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরেই টিকিটের জন্য মানুষের হাহাকার দেখা গেছে। এই যে এত হাইপ সেটা যে মুখের কথা নয় সেটা টের পাওয়া গেলো গতকাল। গতকালও অনেক মানুষ টিকিটের খোঁজে ছিলেন। ঈদের সরকারি ছুটি শেষ হতে এখনও বাকি ৩ দিন, ঢাকাও এখনও অনেকটাই ফাঁকা। তবে গতকাল জাতীয় স্টেডিয়ামের আশেপাশে দেখে এগুলো মনে হওয়ার কোনো কারণ নেই! বরং এখানে রীতিমতো মানুষের ঢল নামে। সকাল থেকে কাঠফাটা রোদ, আর গরমে অতিষ্ট হওয়ার দশা। বাইরে দাঁড়ালেই শরীর থেকে ঘাম ঝরছে ক্রমাগত! বিকাল ৪টা নাগাদ বৃষ্টিও নামলো! তবে কোনো কিছুতেই আসে যায় না দর্শকদের! বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচ নিয়েই বুঁদ হয়েছিলেন তারা। কারও গায়ে দলের জার্সি-হাতে টিকিট, কারো কারো গায়ে জড়ানো বাংলাদেশের পতাকা, বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড- সব মিলিয়ে ম্যাচ শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই উন্মাদনা শুরু হয়ে গিয়েছিল জাতীয় স্টেডিয়াম এলাকায়।
খেলাপাগল সাব্বির রহমানের বাড়ি পঞ্চগড়, সঙ্গে ৫ বন্ধুকে নিয়ে সকালেই এসে নেমেছেন ঢাকায়। এরপর সোজা জাতীয় স্টেডিয়ামে। ৫৩ বছর বয়সী মুসা শেখ বৃষ্টিতেও বসে ছিলেন গ্যালারিতে, তখনও ম্যাচের বাকি অন্তত দেড় ঘণ্টা। এমন আরও অনেক ফুটবলপ্রেমী গতকাল এসেছিলেন বাংলাদেশের খেলা দেখতে! প্রেসবক্সের নিচে বরাদ্দ ছিল নারীদের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ফুটবলারদের জন্য। সেখানে হাজির হন জাতীয় নারী দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারও। এছাড়া বিপ্লব ভট্টাচার্য, সাফজয়ী অধিনায়ক আমিনুল হক ছাড়াও বেশ কয়েকজন সাবেক ফুটবলারও এদিন মাঠে আসেন। তাদের একটি করে টিকিট দেয় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন।
মোহাম্মদপুরের কামরুল বিভিন্ন খেলায় প্ল্যাকার্ড বিক্রি করেন। বেশিরভাগ সময়েই মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচের সময় যান তিনি। তবে এদিন বাংলাদেশ ফুটবল দলের ম্যাচে এসে রীতিমতো অভিভূত তিনি। কামরুল বলেন, ‘ক্রিকেটে যেতাম এতদিন ফুটবলেও যে আমাদের এত দর্শক এটা জানতাম না। দারুণ বিক্রি হচ্ছে মানুষের আগ্রহ দেখে এত খুশি লাগতেছে!’ বাংলাদেশ ফুটবলে আল্ট্রাস অনেক জনপ্রিয় সমর্থক গোষ্টি। বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুরের ম্যাচে তাদের টিকিট না পাওয়া নিয়ে গত কয়েকদিন ফুটবল পাড়া বেশ সরগরম ছিল। টিকিটের দাবিতে ৯দিন বাফুফের সামনে অনশনও করে তারা। তাতেও তাদের টিকিট না পাওয়ার সমস্যার সমাধান আসেনি। গতকাল ম্যাচের দিনও সেটা দেখা গেলো। দল বেধে তারা ১ নম্বর গেটের সামনে জড়ো হন। তাদের জন্য গেট বন্ধ রাখতে বাধ্য হন নিরাপত্তাকর্মীরা। এতে বাংলাদেশ দলের হেড কোচ হাভিয়ের কাবরেরার গাড়ি আটকে থাকে অন্তত ২০ মিনিট। তবে শেষ পর্যন্ত তাদের আটকে রাখা যায়নি। এক পর্যায়ে ৪ নম্বর গেট ভেঙে, টপকে তারা স্টেডিয়ামে ঢুকে পড়ে। পরে সোজা গ্যালারিতে চলে যায় দলটি। এসব দেখে বাংলাদেশ ফুটবলে শেষ কবে এত উন্মাদনা দেখা গেছে সেটা নিয়েও আলোচনা শুরু হয় সমর্থক-সাংবাদিকদের মধ্যে। ঘরোয়া ফুটবলে কোটি টাকার সুপার কাপের ফাইনালে একবার স্টেডিয়ামের গ্যালারি উপচে পড়েছিল। সেটাও ১৪ বছর আগের কথা। সুপার কাপের ওই ফাইনাল ছিল ২০১১ সালের ৬ই আগস্ট। এরপর লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাও ২০১১ সালের ৬ই সেপ্টেম্বরে নাইজেরিয়ার সঙ্গে খেলেছিল ঢাকা স্টেডিয়ামে। তখনও এমনই ভীড় ছিল স্টেডিয়ামে। সবমিলিয়ে গত কয়েকদিনে যে ফুটবলের জৌলুশ ফিরছে বলে উচ্চারিত হয়েছে সেটা গতকাল পরিষ্কার হলো আরেকটু।