খেলা
লঙ্কায় ‘শীতনিদ্রা’ ভাঙবে কি শান্তদের
স্পোর্টস রিপোর্টার
১১ জুন ২০২৫, বুধবার
দেশে ফের উঠেছে ফুটবল জাগরণ। হামজা চৌধুরী, শমিত সোমদের ঘিরে দেশে এখন ফুটবল উন্মাদনা। অন্যদিকে দেশের ক্রিকেট দিন দিন যেন হারাচ্ছে জৌলুস। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই খেই হারিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে টাইগাররা। দেশের ক্রিকেট যেন যাচ্ছে শীতনিদ্রায়। প্রশ্ন হচ্ছে শ্রীলঙ্কা সফরে সেই নিদ্রা ভাঙবে তো টাইগারদের। দলটির বিপক্ষে তাদের মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র টেস্ট জয় সেই ২০১৭ তে। এরপর ৮ বছর কেটে গেছে দলটির বিপক্ষে আর আর জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। পৃথিবীর বেশ কিছু প্রাণীর ক্ষেত্রে এই শীতনিদ্রা নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে। বিজ্ঞানে শক্ত প্রমাণ না থাকলেও ধারণা করা হয় ভল্লুক, শামুক, সাপ, কাঠবিড়ালী, মৌমাছি, কুকুরসহ বেশ কিছু প্রাণী শীতকালে অবিরত নিদ্রাযাপন করে। সেটা ছয় মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্তও হতে পারে। লঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের টেস্ট পরিসংখ্যানটা অনেকটা এমন গভীর ঘুমের মতোই। ২০১৩ তে গলে প্রথম দলটির বিপক্ষে ড্র’র সাধ পায় বাংলাদেশ। এরপর কেটে যায় ৭ বছর, ২০১৭ তে এসে প্রথম জয়ের দেখা মিলে নিজেদের শততম টেস্ট ম্যাচে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে এখন পর্যন্ত ৬ সিরিজ মধ্যে প্রাপ্তি শুধু একটি ড্র। ১৭ জুন থেকে গলে শুরু হবে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। বর্তমান খেই হারানো পরিস্থিতিতে সেখানে থাকছে শান্তদের জেগে ওঠার কঠিন চ্যালেঞ্জই!
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ সামনে রেখে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্প। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে গতকালও দলের ক্রিকেটাররা অনুশীলনে ঘাম ঝরিয়েছেন। ঈদের খুব বেশি ছুটি কাটানোর সময় হয়নি নাজমুল হোসেন শান্তর দলের। শুক্রবার দুপুরে শ্রীলঙ্কায় যাবে বাংলাদেশ দল। তার আগে আজ ও বৃহস্পতিবার মিরপুরে হবে লাল বলের প্রস্তুতি ম্যাচ, যেখানে মুখোমুখি হবে জাতীয় দলের টেস্ট ক্রিকেটার ও বাংলাদেশ ‘এ’ দলের খেলোয়াড়রা। টেস্ট সিরিজের জন্য ইতোমধ্যেই ১৬ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বিসিবি। দুই বছর পর ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছেন পেসার এবাদত হোসেন। অধিনায়ক হিসেবে থাকছেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং সহ-অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ।
দুই যুগেও বাংলাদেশ দল টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পায়নি। এখন পর্যন্ত দেশে বিদেশে ৭৮ টেস্ট সিরিজ খেলে জয় পেয়েছে মাত্র ৯টিতে। অন্যদিকে সিরিজ ড্র করেছে ১২ বার। সাফল্য যা এসেছে বেশির ভাগই দেশের মাটিতে। বিদেশের মাটিতে ৩৫ সিরিজের বিপরীতে তিন জয় ও চার ড্রই প্রাপ্তি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ঘরে বাইরে ১২ টেস্ট সিরিজ খেলে জয় একটিতেও নেই। প্রাপ্তি বলতে একটি সিরিজ ‘ড্র’ তাও ৮ বছর আগে। সবশেষ সেখানে ২০২২ শ্রীলঙ্কা সফরে যায় বাংলাদেশ। দুটি ম্যাচই হয় কেন্ডির পাল্লেকেলে স্টেডিয়ামে। প্রথম ম্যাচে ড্র করলেও পরের ম্যাচে হারে ১০ উইকেটের বড় ব্যাবধানে। দলটির বিপক্ষে টেস্টে শেষ দেখা নিজেদের মাটিতে ২০২৪ এ। সেখানে ২-০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে শ্রীলঙ্কায় কতটা চ্যালেঞ্জের মুখে টাইগাররা।
গেল কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের টেস্টই নয় সব ফরম্যাটে বেশির ভাগ হারের কারণ চরম ব্যাটিং ব্যর্থতা। দলের ওপেনার থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার এমনকি লেজের ব্যাটাররাও ব্যাট হাতে দলের জন্য অবদান রাখতে ব্যর্থ। সবশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেটে সিরিজের প্রথম ম্যাচে হেরে যায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ১৯১ ও দ্বিতীয় ইনিংসে টেনেটুনে আড়াইশ পার করলেও শেষপর্যন্ত ম্যাচ হারে ৩ উইকেটে। ব্যাটারদের ব্যর্থতায় বোলাররাও প্রতিরোধ করতে পারেন না। তবে ব্যাটিংয়ের তুলনায় দলের বোলিংয়েই আস্থা রাখা যায়। বলার অপেক্ষা রাখে না শ্রীলঙ্কায় জিততে হলে দলের ব্যাটিং উন্নতি করা ছাড়া বিকল্প নেই। নাজমুল হোসেন শান্ত, সাদমান ইসলাম, এনামুল হক বিজয়, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহীম, লিটন দাস, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন, জাকের আলী অনিক, মেহেদী হাসান মিরাজরা ব্যাট হাতে অবদান রাখতে পারলে হয়তো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বাংদেশ।