প্রথম পাতা
নির্বাচনের সুস্পষ্ট ঘোষণা না থাকায় বিএনপি হতাশ
স্টাফ রিপোর্টার
২৮ মে ২০২৫, বুধবার
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনগুলোর নেতাদের বৈঠকের পরও অন্তর্বর্তী সরকারের বক্তব্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় হতাশ হয়েছে বিএনপি। মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এতে বলা হয়, গত ২৪শে মে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে বিএনপি’র একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করেন। একইদিনে আরও দুইটি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তৎপরবর্তীতে আমরা আপনাদের সামনে আমাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছি। পরের দিন আরও ১৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন। রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার আলোচনার প্রসঙ্গে তার প্রেস সচিবের মাধ্যমে সরকারের যে বক্তব্য পাওয়া গিয়েছে, তাতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপের ঘোষণা না থাকায় আমরা হতাশ হয়েছি।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল কোনো সময়েই মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি এবং এখনো চায় না। কিন্তু আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ দাবি করে এসেছি। যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই সংস্কার ও নির্বাচন প্রক্রিয়া দু’টোই একইসঙ্গে চলতে পারে। পতিত ফ্যাসিবাদী শক্তির এবং ব্যক্তির অর্থাৎ দল এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
সংবাদ সম্মেলনে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত আলোচনায় আমরা উপরোক্ত বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছিলাম বরাবরের মতোই। আমরা লক্ষ্য করেছি, উক্ত দিনে অর্থাৎ শনিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভা শেষে উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে যে বক্তব্য জাতির সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে তা অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। উপদেষ্টা পরিষদের দায়িত্ব পালনে আমরা প্রথম থেকে অদ্যবধি সর্বোচ্চ সহযোগিতা প্রদান করে আসছি। সরকার পরিচালনায় নিরপেক্ষতার ঘাটতি এবং দুর্বলতার কারণে জনমনে সংশয় ও সন্দেহের উদয় হওয়া স্বাভাবিক। বিভিন্ন মহলের অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি-দাওয়া এবং এখতিয়ার বহির্ভূত বক্তব্য সরকারের স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ার যে অভিযোগ সরকারের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হয়েছে, সেটা মূলত সরকারের নিজস্ব অর্জন।
তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ‘পরাজিত শক্তির ইন্ধনে এবং বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সরকারের ওপর দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তোলা হচ্ছে।’ আমরা বলতে চাই, যথাশিগগিরই একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমেই পরাজিত শক্তির ইন্ধন এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র বন্ধ করা সম্ভব। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রদান করা জরুরি, এর কোনো বিকল্প নেই।
ড. মোশাররফ বলেন, দেশকে স্থিতিশীল রাখতে, নির্বাচন, বিচার ও সংস্কার কাজ এগিয়ে নিতে এবং চিরতরে এদেশে স্বৈরাচারের আগমন প্রতিহত করতে ফ্যাসীবাদবিরোধী বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা এবং জনপ্রত্যাশাকে ধারণ করে অতিশিগিরই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করা অতি জরুরি। এই লক্ষ্যে আমরা সরকারকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে যাচ্ছি। সরকারের স্বকীয়তা, সংস্কার উদ্যোগ, বিচার প্রক্রিয়া, সুষ্ঠু নির্বাচন ও স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কোনো কর্মকাণ্ডকে আমরা সকল সময়ে নিরুৎসাহিত করি এবং প্রতিরোধ করার অঙ্গীকরাবদ্ধ। অথচ উপদেষ্টা পরিষদের বিবৃতিতে কোনো কোনো মহল তাদের ওপরে অর্পিত দায়িত্ব পালনকে অসম্ভব করে তুলছে মর্মে একটি বিমূর্ত অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।
তিনি বলেন, জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক, সামাজিক এবং শ্রেণি-পেশার শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না হয়, যাতে ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করা যায় সেই জন্য সরকারের নিরপেক্ষ ভূমিকা এবং চরিত্র বজায় রাখার স্বার্থে আমরা বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণ চেয়েছি। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্যই এদেশের জনগণ রক্ত দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। অথচ সরকারের সামপ্রতিক কর্মকাণ্ডে জনমনে এ বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে ইশরাক হোসেনের পক্ষে আদালতের রায় অনুযায়ী গেজেট নোটিফিকেশন হয়েছে। অথচ সরকার আজ পর্যন্ত তার শপথ গ্রহণের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা আশা করি, কালবিলম্ব না করে সরকার তার শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নেবে।
বিএনপি’র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, জুলাই-ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশিগগিরই সম্ভব জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাই আমরা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০২৫-এর মধ্যে একটি জাতীয় সংসদ গঠনের জন্য অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। এই সর্বোচ্চ জন-আকাঙ্ক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানতম এজেন্ডা হওয়া উচিত বলে জনগণ মনে করে। এর অন্যথা হলে জনগণের দল হিসেবে বিএনপি’র পক্ষে এই সরকারের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি আরও বলেন, দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধকল্পে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার নাগালের মধ্যে রাখতে, বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতিশীলতা আনায়নের লক্ষ্যে সরকার ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, এই প্রত্যাশা আমাদের সকলের।
এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ইতিবাচক প্রক্রিয়া আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু সেটা তারা করেনি। আমরা আগেও বলেছি, নির্বাচনের জন্য এটা উপযুক্ত সময়। আর ডিসেম্বর ২০২৫-এর পরে, আপনারা জানেন ফেব্রুয়ারি মাসে রমজান, তারপরে বর্ষা ও পরীক্ষা আছে। এসএসসি এবং এইচএসসিসহ বড় বড় পরীক্ষা, এগুলো কিন্তু নির্বাচনের উপযুক্ত সময় না।
অন্য আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংস্কার তো আমরাও চাচ্ছি। কিন্তু সংস্কার হচ্ছে চলমান প্রক্রিয়া। ইচ্ছা করলেই অমুক দিনের মধ্যে সংস্কার শেষ করা যাবে, এটা কেউ বলতে পারে না। এই নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য কিছু উছিলা বের করা হচ্ছে। যেমন একটা উছিলা হলো, বিচার শেষ করতে হবে। আমারও তো বিচার চাই।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির ওপর নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এরপরেও কেন প্রশ্ন আসে, আমরা তাদের বিচার চাইবো না? বিএনপি সবচেয়ে বেশি তাদের বিচার চায়। তবে আমরা এটা বিশ্বাস করি, বিচার হবে স্বাধীন বিচারব্যবস্থার মধ্যে। স্বাধীন বিচার চাইবো, আবার বলবো, অমুক দিনের মধ্যে বিচার হতে হবে। এটা তো সাংঘর্ষিক। সেজন্য আমরা সংস্কার, নির্বাচন ও বিচারের প্রক্রিয়া প্রত্যেকটা আলাদা, এই জন্য তিনটা কাজই একসঙ্গে চলতে পারে এবং সেটা চলা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত
স্যার হতাশ হবেন না ধৈর্য ধরুন জনগণের মন বসতে চেষ্টা করুন আন্তরিকভাবে দলকে সংঘটিত করুন পুরনো বাস্তবতা বন্দোবস্ত থেকে বেরিয়ে এসে প্রস্তুতি নিন ইনশাআল্লাহ ফলাফল ভালই হবে। যেহেতু আপনি একজন ধার্মিক লোক কাজেই আল্লাহ তা'আলা বলেন কোন মোমেন কখনো হতাশ হয় না।