প্রথম পাতা
যেকোনো পরিস্থিতিতে জুনের মধ্যে নির্বাচন
স্টাফ রিপোর্টার
২৯ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
নির্বাচন নিয়ে আবারো নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের নেয়া সংস্কার উদ্যোগ এগিয়ে নিতে যেকোনো পরিস্থিতিতে আগামী বছরের জুনের মধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল জাপানের রাজধানী টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লীগ (জেবিএফএল)-এর প্রেসিডেন্ট তারো আসো প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন। সরকারপ্রধান চারদিনের সরকারি সফরে বর্তমানে জাপানে আছেন। নিক্কেই ফোরাম ফর এশিয়ায় সম্মেলনে অংশ নেয়া ও দেশটির নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হতে স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৫ মিনিটে জাপান পৌঁছান প্রধান উপদেষ্টা।
বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু তারো আসো বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাওয়ায় প্রফেসর ইউনূসকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি মসৃণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য জাতীয় নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে। সেগুলো হলো- সংস্কার, হত্যাকারীদের বিচার এবং নির্বাচন আয়োজন। তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠন এবং ঋণ পরিশোধে অন্তর্বর্তী সরকার দেশের অর্থনীতির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিগত সরকার দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। এতে তরুণ সমাজের মধ্যে বিদ্রোহ সৃষ্টি হয়েছে। সেই তরুণরাই আমাকে এই বিশৃঙ্খলা দূর করার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিগত দশ মাসে আমাদের প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দিয়েছে জাপান। অপরিসীম সহায়তার জন্য আমি জাপানকে ধন্যবাদ জানাই। এক অর্থে এটি একটি কৃতজ্ঞতা সফর। প্রফেসর ইউনূস তারো আসোকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। যাতে তিনি নিজের চোখে পরিবর্তনগুলো দেখতে পারেন। সাক্ষাতের সময় তারো আসোর সঙ্গে থাকা কয়েকজন জাপানি সংসদ সদস্য বলেন, ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট (ইপিএ) স্বাক্ষর বাংলাদেশে বৃহত্তর পরিসরে জাপানি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। বাংলাদেশ আগামী আগস্টের মধ্যে আলোচনার কাজ শেষ করে সেপ্টেম্বর মাসে ইপিএ চুক্তি স্বাক্ষরের প্রত্যাশা করছে। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে জাপান হবে বাংলাদেশে ইপিএ স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ। প্রধান উপদেষ্টা রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিস্থিতি সম্পর্কে জাপানি সংসদ সদস্যদের অবহিত করেন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এজেন্ডা বাস্তবায়নে তাদের সহায়তা কামনা করেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট অন্যান্য শরণার্থী সংকটের থেকে ভিন্ন, কারণ তারা অন্য কোনো দেশে যাওয়ার জন্য অনুনয় করছেন না, বরং নিজ দেশে ফেরার দাবি করছেন। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ।
রোহিঙ্গা সংকটের সমাপ্তি ঘটানোর এখনই সময়
রোহিঙ্গা সংকটের সমাপ্তি ঘটানোর এখনই সঠিক সময় বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এ বিষয়ে জাপান ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে। গতকাল টোকিওর ইম্পেরিয়াল হোটেলে নিপ্পন ফাউন্ডেশনের প্রধান ইয়োহেই সাসাকাওয়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সম্মানে নৈশভোজের আয়োজন করেন। এ সময় দুই নেতা রোহিঙ্গা সংকট, মিয়ানমারের ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি এবং সামপ্রতিক মাসগুলোতে বিশ্বব্যাপী মানবিক সংকটে অনুদান ও সহায়তা মারাত্মকভাবে হ্রাস পাওয়া নিয়ে আলোচনা করেন। প্রফেসর ইউনূস সহিংসতাপীড়িত মিয়ানমারে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং অস্ত্রবিরতির মধ্যস্থতায় ইয়োহেই সাসাকাওয়ার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। দেশটিতে সামরিক বাহিনী আঞ্চলিক বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িত রয়েছে। নিপ্পন ফাউন্ডেশন এবং সাসাকাওয়া পিস ফাউন্ডেশনের প্রধান হিসেবে ইয়োহেই সাসাকাওয়া ১৫০ বারের বেশি মিয়ানমার সফর করেছেন এবং তিনি মিয়ানমার সরকার ও দেশটির শতাধিক জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে গভীর শ্রদ্ধার পাত্র। প্রফেসর ইউনূস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনে সাসাকাওয়ার সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, আমরা জানি আপনি মিয়ানমারের সব পক্ষের কাছেই গভীরভাবে সম্মানিত। প্রতি বছর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রায় ৩৫ হাজার শিশু জন্মগ্রহণ করছে, যারা কোনো ভবিষ্যতের আশা ছাড়াই বেড়ে উঠছে। তিনি বলেন এটি বিস্ফোরক ও বিপজ্জনক হয়ে উঠার আগেই আমাদের সাহায্য করুন। প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, মাদকপাচারের কারণে ক্যাম্পগুলোর নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও খারাপ করে তুলেছে। প্রধান উপদেষ্টা নিপ্পন ফাউন্ডেশনের কাছে জীবন রক্ষাকারী স্বাস্থ্য গবেষণার জন্য আইসিডিডিআরবি’কে সহায়তার আহ্বান জানান, যা ইউএসএইড’র অনুদান স্থগিত হওয়ায় বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা সাসাকাওয়াকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। নৈশভোজে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ অংশগ্রহণ করেন।
পাঠকের মতামত
বর্তমান সরকার ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এর কাজগুলো সম্পন্ন করবে সে লক্ষন দেখা যাচ্ছে না। স্বৈরশাসকের ন্যায় নিজেদের সিদ্ধান্ত জনগনের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। বিভিন্ন দলের সাথে আলোচনা করলেও আলোচনা মোতাবেক ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে না।