প্রথম পাতা
ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে: তারেক
স্টাফ রিপোর্টার
২৯ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তারুণ্যের সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল- নিজস্ব ছবি
গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিপক্ষ না বানাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে। এজন্য দেশবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন করেছে। তিন মাসের মধ্যেই তারা নির্বাচন করতে পেরেছে।
গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি’র তিন সংগঠন এই সমাবেশের আয়োজন করে। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ আয়োজনে ধারাবাহিক কর্মসূচির সমাপনী ছিল নয়াপল্টনের সমাবেশ। সকাল থেকে এই সমাবেশে বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। দুপুরের পর সমাবেশ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকায়। একপর্যায়ে এটি পরিণত হয় এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সমাবেশে।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে মনে হয়, এরই ভেতরে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কার অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ। এরই ভেতর জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, সংস্কার নিয়ে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভেতরে এবং বাইরে কারও কারও মনে হয় কিছু ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। সর্বশেষ একটি স্ল্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন তারেক রহমান। প্রথমে তিনি স্লোগান দেন। দ্বিতীয়বার তার সঙ্গে নেতাকর্মীরা স্লোগান দেন। স্লোগানটি হলো- দিল্লি নয়, পিন্ডি নয়, নয় অন্য কোনো দেশ, সবার আগে বাংলাদেশ। তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচারের সময় আমরা দেখেছি, তারা কীভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে। আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, পলাতক স্বৈরাচারের পরে যে সরকারের কাছে দেশের মানুষ আশা করেছিল যে, আইনের প্রতি সম্মান থাকবে। আমরা দেখেছি, আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে যারা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করেছে, সেই স্বৈরাচারের সেই একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে পাচ্ছি। আপনাদের কাছে আজকে জিজ্ঞাসা, যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখায় না, যারা আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করে তাদের কাছ থেকে আমরা কতোটুকু সংস্কার আশা করতে পারি। পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে ব্যক্তি মানসিকতায় সংস্কার অনেক বেশি জরুরি। ইশরাকের ক্ষমতা গ্রহণ বা শপথে বাধা সৃষ্টি করে আজ আমরা আবারো স্বৈরাচারী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, নিরপেক্ষতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতাই কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান পুঁজি। তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, জনগণের বিশ্বাস ও ভালোবাসা নষ্ট হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া ঠিক হবে না। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আবারো আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, গণতান্ত্রকামী জনগণ এবং গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায় তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে আসুন। নির্বাচন করুন। যদি ভবিষ্যতে নির্বাচনে জনগণের রায় পান তাহলে আবার সরকারের দায়িত্বগ্রহণ করুন।
তারেক রহমান বলেন, গত দেড় দশকে ভোটার তালিকায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি নতুন ভোটার সংযুক্ত হয়েছেন। সেই নতুন ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিয়ে তাদের নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পায়নি। পতিত পরাজিত স্বৈরাচারের কাছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা নির্বাচন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। সুতরাং সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেয়া উচিত বলে আমরা বিশ্বাস করি বা আমরা মনে করি।
তিনি আরও বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময় এই বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যেই সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করছে। সুতরাং অতীতে বাংলাদেশে রেকর্ড রয়েছে, তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সম্ভব। কিন্তু আজ আমরা দেখছি, ১০ মাস পার হয়ে গেল, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না। আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের সরাসরি ভোটে, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ একটি সরকার দ্রুত দেখতে চাই।
নেতাকর্মী ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, কারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, কারা আপনাদের প্রতিনিধি হবে- জাতীয় নির্বাচনে আপনারাই ভোট দিয়ে, আপনাদের সেই প্রতিনিধিকে আপনারা নির্বাচিত করবেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়ার (জিয়াউর রহমান) সৈনিক, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, আপনারা জনগণের কাছে যান। তাদের প্রত্যাশা জানার চেষ্টা করুন, তাদের প্রত্যাশা বোঝার চেষ্টা করুন। জনগণের মন জয় করুন। কারণ জনগণই বিএনপি’র সকল রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।
বিএনপি’র নেয়া যে বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা তার কয়েকটি অগ্রাধিকার কর্মসূচি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইনশাআল্লাহ বিএনপি জনগণের রায়ে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ এবং জনগণের উন্নয়নে পর্যায়ক্রমে দলের গৃহীত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করবে। তবে যেকোনো দলের তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে দরকার একটি জবাবদিহিমূলক সরকার। দরকার একটি নির্বাচিত সরকার।
তিনি বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা যদি পৌঁছে দেয়া যায়, জনগণ যাতে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা পায়, সেজন্য সরকারি এবং প্রাইভেট যে সেক্টর আছে-কীভাবে দু’টিকে একত্রিত করে আমরা স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তুলতে পারি, সেটির বিষয়েও আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করছি। আমরা সেটির বিষয়েও কাজ করছি। স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং জলবায়ুর পরিবর্তন-এই তিনটির অপরটির উপর প্রভাব রয়েছে। সুতরাং খাল খনন এবং বৃক্ষরোপণের বিষয়টিও বিএনপি’র অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। সারা দেশে পরিকল্পিত উপায়ে বৃক্ষরোপণ করা গেলে জলবায়ুর নীতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করা সহজ হবে। প্রায়ই আমরা পত্রিকায় পাতায় দেখি, বাংলাদেশে বিশেষ করে ঢাকায় শহরের যে বাতাস, সেটি বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে যে খারাপ শহরগুলো, তার একটি-দুইটির মধ্যে ওঠানামা করছে।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শুধু তাই নয়, বৃক্ষরোপণসহ আরও কিছু জলবায়ু পলিসি নির্ধারণের জন্য এরই মধ্যে আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ শুরু করেছি। আমাদের লক্ষ্য থাকবে, একটি নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছরের ভেতরে ২৫ থেকে প্রায় ৩০ কোটি বৃক্ষরোপণ করা। একই সঙ্গে লক্ষ্য থাকবে সামগ্রিকভাবে দেশের যে তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি পর্যন্ত কমিয়ে নিয়ে আসা। বাংলাদেশকে সমৃদ্ধি এবং সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে আমাদেরকে। আর কথা বলার রাজনীতি নয়, বিএনপি’র আগামীদিনের রাজনীতি নিরাপদ কর্মপরিবেশ এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির রাজনীতি। আর কথা বলার রাজনীতি নয়, এখন বাস্তবায়ন এবং দৃষ্টান্ত স্থাপনের রাজনীতি।
তিনি বলেন, দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে আমরা অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেছি কয়েকটি। জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে নারী-পুরুষ সবার জন্য নৈতিক মূল্যবোধ কর্মসূচি, কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা, গ্রামীণ উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিকাশ, দক্ষতা বাড়াতে ব্যাপক কর্মসংস্থান চালু, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং জনশক্তি রপ্তানি। এমন কয়েকটি বিষয় অগ্রাধিকার তালিকায় রেখে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত এবং নিরাপদ মানবিক বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে বিএনপি স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছে। যার উপরে কাজ করতে হবে।
ফ্যামিলি কার্ড চালুর বিষয়ে তারেক রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রায় চার কোটির মতো পরিবার রয়েছে। এই পরিবারগুলোর মধ্য থেকে প্রথম পর্যায়ে কমবেশি ৫০ লাখ গ্রামীণ পরিবারের জন্য আমরা ফ্যামিলি কার্ড চালুর পরিকল্পনা করছি। মা কিংবা স্ত্রী নারী প্রধানের নামে ফ্যামিলি কার্ড ইস্যু করা হবে। প্রান্তিক এই পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক বা প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তার আওতায় আনা হবে। আমরা আশা করি- সময়ের সঙ্গে এর মাধ্যমে পরিবার এবং সমাজে একদিকে নারীর ক্ষমতায়ন ঘটবে। অপরদিকে পরিবারগুলোর সামনে ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হওয়ার পথ তৈরি হবে।
তিনি বলেন, কৃষকদের জন্য ফার্মারস কার্ড চালু করা আমাদের জন্য অন্যতম অগ্রাধিকার। একটি নীতিমালার আওতায় ইস্যু করতে হবে কৃষকদের ফার্মার্স কার্ড। এই ফার্মার্স কার্ডে জমির পরিমাণ, দাগ নম্বরসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য থাকবে। কৃষক এবং কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে কৃষিখাতে বর্তমানে শ্রমশক্তির পরিমাণ কমবেশি প্রায় সাড়ে তিন কোটি। এদের মধ্যে যেমন বর্গাদার চাষি কিংবা ভূমিহীন কৃষক রয়েছেন। অনেক কৃষকের নামে নির্দিষ্ট পরিমাণ কিছু জমিও রয়েছে। যেসব বর্গা চাষি কিংবা নামে থাকা জমিতে বছরে একাধিক ফসল ফলাতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়েন। এমন কৃষকদেরকে কমপক্ষে একটি ফলনের সম্পূর্ণ খরচ রাষ্ট্রীয়ভাবে দেয়ার পরিকল্পনা আমরা করছি। উৎপাদনের জন্য ফার্মার্স কার্ডের মাধ্যমে এভাবে সরকারি সহায়তা পেলে উৎপাদন যেমন একদিকে বাড়বে তেমনি কোনো কৃষিজমিও অনাবাদি থাকবে না। এবং একই সঙ্গে ভূমিহীন কৃষকদের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
ব্যক্তি, পরিবার ও দেশের উন্নয়নের জন্য অবশ্যই বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, জনগণের রায়ে বিএনপি সরকার গঠনের দায়িত্ব পেলে- সরকারের প্রথম দিন থেকেই বিভিন্ন সেক্টর ভিত্তিক কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। বিএনপি’র প্রথম এবং প্রধান অগ্রাধিকার হবে এটি। এই জন্য দেশে- বিদেশে কর্মসংস্থানের খাতগুলোকে চিহ্নিত করার কাজ ইতিমধ্যে আমরা হাতে নিয়েছি। বর্তমান বিশ্ব তথ্য প্রযুক্তির বিশ্ব। এই সময় বিশ্ব বাজারের সঙ্গে দক্ষতা এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে অবশ্যই তথ্য ও কারিগরি শিক্ষায় দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই। এ কারণে আমরা একটি নির্দিষ্ট বয়স থেকে তরুণ প্রজন্মকে নৈতিক এবং কর্মমুখী শিক্ষায় প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে চাই।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিদ্যমান যে একাডেমিক সিলেবাস এর পাশাপাশি স্কুল, কলেজ পর্যায় থেকেই আমরা আইসিটি এবং কারিগরি শিক্ষা প্রবর্তন করতে চাই। একই সঙ্গে আমরা বর্তমানের স্পোর্টস শুধু ব্যায়াম বা শারীরিকের বিষয় নয়। সুতরাং এই স্পোর্টসকে একটি পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে ক্রীড়াকে আমরা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই। বর্তমান বিশ্বে সাফল্যের প্রতিযোগিতায় যদি টিকে থাকতে হয়। তাহলে বহুমুখী প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে হবে। শিক্ষার্থীদের একাধিক ভাষা শেখাটা জরুরি। বর্তমানে আমরা স্কুল-কলেজে সাধারণত বাংলা-ইংলিশ শেখার সুযোগ পাই। তবে এর পাশাপাশি যদি আমরা কিছু ভাষা যেমন- আরবি, মান্দারিন, জার্মান, ফ্রেঞ্চসহ এই ধরনের বহুল প্রচলিত ভাষা এবং যদি সম্ভব হয় তাহলে চতুর্থ ভাষা হিসেবে আরেকটি ভাষা শিখাতে পারি।
তারেক রহমান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের সন্তানদের জন্য বিশ্ববাজার উন্মুক্ত হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে আগ্রহী যুবশক্তিকে যুব সম্পদে পরিণত করার জন্য সরকারি উদ্যোগে বিদেশি ভাষার উপর তিন মাস থেকে এক বছরের কোর্স আমরা চালু করতে চাই। দেশে যাতে বহু ভাষা শেখা যায় এজন্য আমরা বহু ভাষা শিক্ষক নিয়োগ করতে চাই। যার মাধ্যমে আমরা বেকার সমস্যা অথবা কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করতে পারবো। এর বাইরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্লাম্বিং, ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক্স, ডেন্টাল হাইজিনিস্ট, কিংবা মেডিক্যাল টেকনিশিয়ানের মতো স্বল্পমেয়াদি কোর্স করেও দক্ষ পরিকল্পনাগুলো হাতে নিয়েছি। যা এরই মধ্যে কাজগুলোকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে।
ই-কমার্সের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মের ভাই-বোনেরা আপনারা সবাই অনলাইন কেনাকাটা সম্পর্কে জানেন। অনলাইন ভিত্তিক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন, কিংবা আলী বাবার মতো বিশ্ববিখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য হাজারো পণ্যের চাহিদা রয়েছে। এই সমস্ত প্ল্যাটফর্মের সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলেছি। বিশ্ববিখ্যাত এইসব প্ল্যাটফর্মের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের বাংলাদেশে অনেক পণ্য তৈরির সুযোগ রয়েছে। অ্যামাজনের মতো বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মকে সামনে রেখে আমরা আমাদের দেশে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পের উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ আমরা গ্রহণ করতে পারি। বিশ্ববিখ্যাত ই-কমার্সের চাহিদা মিটিয়ে কীভাবে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করা যায়। এরই মধ্যে যারা এক্সপার্ট আছেন তাদের সঙ্গে আমরা আমাদের টিম নিয়ে কাজ শুরু করেছি। বাংলাদেশের বহু তরুণ প্রজন্মের সদস্য অনলাইনে কাজ করেন কিংবা করছেন কিংবা কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। আপনাদের জন্য কর্মসংস্থান এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে আমাদের উদ্যোগ রয়েছে। আমি জানি
বর্তমানে শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মের সামনে ফ্রিল্যান্সিং একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় সেক্টর উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে এই মুহূর্তে ১০ লাখ ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে শতকোটি টাকার আয় করতে সক্ষম হচ্ছেন। আউটসোর্সিংয়ের সঙ্গে যুক্ত বেশকিছু মানুষের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা জানিয়েছেন- লেনদেনের জন্য বাংলাদেশে পেপাল, ওয়াইজ বা স্ট্রইপের মতো আন্তর্জাতিক গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান ব্যবহারের সুযোগ না থাকায় তাদের অর্জিত যে অর্থ দেশে আনা কষ্টকর হয়ে পড়ে। আমি মনে করি সবার আগে এই ধরনের যে সমস্যা সেই সমস্যার সমাধান করা উচিত। এই বিষয়টি নিয়ে আমি এক দশক ধরে কথা বলে এসেছি। বিএনপি মনে করে প্রায়োরিটি বেসিসে আইটি, ইন্টারপ্রেইনার, ই-কর্মাস সেক্টর এবং ফ্রিল্যান্সারদের সুবিধায় পেপালের মতো আন্তর্জাতিক গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করা উচিত। বাংলাদেশে পেপাল সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে যার লক্ষ্য আমাদের রয়েছে। তাহলে লাখ লাখ ফ্রিল্যান্সারের কাজের সুযোগ বাড়ার পাশাপাশি রেমিট্যান্সের পরিমাণও বাড়বে।
স্বাস্থ্যসেবা প্রসঙ্গে তারেক রহমান আরও বলেন, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম- এই নীতির আলোকে দেশে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা বিএনপি’র পরিকল্পনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার। জনসচেতনতার মাধ্যমে অনেক ধরনের রোগ থেকে মুক্ত রাখা যায়। নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিএনপি এক থেকে তিন বছরের স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর একটি অংশ হিসেবে প্রতিটি গ্রামে আমরা হেল্থ কেয়ার ওয়ার্কার নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। এই হেল্থ কেয়ার ওয়ার্কারদের ৮০ শতাংশ হবে নারী। অর্থাৎ সারা বাংলাদেশে যদি আমরা এক লাখ হেল্থ কেয়ার ওয়ার্কার নিয়োগ করি তারমধ্যে নিয়োগ পাবেন ৮০ থেকে ৮৫ হাজার নারী। যার মাধ্যমে আমরা একটি বিশাল অংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবো। শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি জনগণের দোরগোড়ায় যাতে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া যায়। জনগণকে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যায় সেজন্য সরকারি এবং প্রাইভেট যে সেক্টর রয়েছে, কীভাবে দু’টিকে একত্রিত করে আমরা স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তুলতে পারি। সেটির বিষয়েও আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করছি, কাজ করছি।
সমাবেশে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে বর্তমানে যে ষড়যন্ত্র চলছে, সেই ষড়যন্ত্র জনগণই মোকাবিলা করতে পারবে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে। নির্বাচনকে বিলম্বিত করার জন্য পতিত স্বৈরাচার দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্র করছে। তা না হলে সংস্কার এবং মামলা-দু’টি বিষয়কে নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করার কোনো অর্থ হয় না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, সরকারের মাথা থেকে পচন ধরেছে। নিচ পর্যন্ত পচন ধরেছে। এভাবে চলতে থাকলে তাহলে আওয়ামী লীগ যা ক্ষতি করেছে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি করবে। আর গণমানুষের আকাঙ্ক্ষিত, আস্থার একটি প্রতীক ছিল সরকার। কিন্তু ৯ মাসের কার্যক্রমে আমরা কিছু পাই নাই। শুধু পেয়েছি অবজ্ঞা। এ দেশের মানুষকে সরকার অবজ্ঞা করছে। এই সরকারের মধ্যে যারা আছে, আমি বলি এই সরকার ঔপনিবেশিক সরকার। এই সরকারের মধ্যে যারা আছে অর্থাৎ ৯০ ভাগই এদেশের নাগরিক নয়।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্র রুখতে হবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, তরুণের সংগ্রামের বিজয় হয়েছে। এখন আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে আছি। যেটা হলো সুষ্ঠু নির্বাচন, যেটা যতদ্রুত সম্ভব দিতে হবে। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বার্তা পরিষ্কার, গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের পথ হচ্ছে নির্বাচন। তাই আজকে নির্বাচন নিয়ে হেলাফেলা চলবে না। সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনের রোডম্যাপ পেছানোর কোনো সুযোগ নেই।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে।
যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। এ ছাড়া সমাবেশে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতাসহ দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে ঢাকায় বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা, সিলেট, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বাস নিয়ে এসে নয়াপল্টনে সমাবেশে যোগ দেন। এ ছাড়া এই বিভাগের বাইরে বরিশাল, বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলা এবং বিভাগ থেকেও বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন। নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ব্যানার, জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিসম্বলিত ফেস্টুন, টি-শার্ট ও বিভিন্ন রঙের ক্যাপ পরে এবং মাথায় জাতীয় ও দলীয় পতাকা বেঁধে সমাবেশে যোগ দেন। তারা বিভিন্ন স্লোগানে সমাবেশ প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তুলেন। ওদিকে সমাবেশকে ঘিরে নয়াপল্টন এবং এর আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে ছিল।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নয়াপল্টন এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দুপুর ১২টার মধ্যে সমাবেশস্থল পেরিয়ে তারুণ্যের ঢল নামে- বিজয়নগর, পুরানা পল্টন, জিরো পয়েন্ট, ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিল, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ, মগবাজার, শাহবাগ ও মৎস্য ভবনসহ বিভিন্ন এলাকায়। এতে নয়াপল্টনের আশপাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অদূরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় তীব্র যানজট। অনেকটা স্থবির সড়কে সাধারণ মানুষকে পায়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে মঞ্চে সংগীত পরিবেশন করেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা।
পাঠকের মতামত
ডক্টর ইউনুস স্যার তো বারবার বলতেছেন আগামী জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তারপরও আপনারা ডিসেম্বর ডিসেম্বর করে মুখে ফেনা তুলতেছেন কেন। আপনারা নির্বাচনের পর যদি ক্ষমতায় আসেনও তারপরও আমি মনে করি আপনারা ওই এক মেয়াদও টিকতে পারবেন না।
BNP is the puppet; India is the puppeteer.
ভারতীয় পররাষ্ট্রন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধির জয়সওয়াল দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের চান। যাক আপনার এক বিদেশী supporter পাওয়া গেলো।
একদল খাইছে, আরেকদল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে’, এই প্রসঙ্গে, ডঃ ইউনুস স্যার কীভাবে রাস্তায় সমস্ত মিছিল বন্ধ করতে সক্ষম হবেন, সে সম্পর্কে আপনার মতামত কি দয়া করে জানাতে পারেন? How can he run the country for another 5 years? Your explanation will be highly appreciated.
‘একদল খাইছে, আরেকদল খাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে’
উনাকে যখন দায়িত্ব দেওয়া হয় তখন বলা হয় নাই যে, "আপনি নির্বাচন করা ছাড়া আপনি আর কিছু করতে পারবেননা এবং এত দিনের মধ্যে নির্বাচন শেষ করতে হবে"।
একটা কথা আছে ' রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন ' তারেক রহমান কিংবা বিএনপি যদি রেগে গিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা বশি।
জনাব তারেক রহমান দেশে কেন ফিরছেন না কিংবা কবে ফিরবেন নেতা কর্মিদের সেটা কেন জানালেন না।
Rightly said.
দেশ শাসনে জনগণের ভোটাধিকার জরুরী এবং ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন করা জরুরী। নির্বাচিত প্রতিনিধি ব্যতিত নয় বছরেও সমস্যার সমাধান হবেনা। ফলশ্রুতিতে নতুন নতুন সমস্যা দেশটাকে গিলে খাবে এবং স্বৈরাচার আবার ক্ষমতার মসনদে চলে আসবে। সাধু সাবধান !
নির্বাচন মাত্র ছয় মাস এগিয়ে আনার এ প্রচেষ্টার কারণ জানতে পারি কি?