প্রথম পাতা
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ গ্রেপ্তার
স্টাফ রিপোর্টার
২৮ মে ২০২৫, বুধবার
কুষ্টিয়ায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মঙ্গলবার আনুমানিক ভোর ৫টায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত একটি বিশেষ অভিযানে কুষ্টিয়া জেলা থেকে শীর্ষ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে, তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে সুব্রত বাইন এর অপর দুই সহযোগী শুটার আরাফাত এবং শরীফকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানকালে ৫টি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড অ্যামোনিশন এবং ১টি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের নামে বিভিন্ন থানায় হত্যা ও চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন নাশকতামূলক কার্যক্রম সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। উল্লেখ্য যে, সুব্রত বাইন এবং মোল্লা মাসুদ সেভেন স্টার সন্ত্রাসী দলের নেতা এবং ‘তালিকাভুক্ত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের’ অন্যতম। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানটি পরিচালনা করা হয়। অভিযান দলের দক্ষতায় কোনো রূপ ক্ষয়ক্ষতি এবং নাশকতা ছাড়াই অভিযানটি সম্পন্ন হয় এবং অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। উক্ত সফল অভিযান বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ফরমেশন, দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং বাংলাদেশ পুলিশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। স্থানীয়রা জানান, মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকার সোনার বাংলা সড়কের পুরাতন তিনতলা একটি ভবন ঘিরে ফেলেন সেনা সদস্যরা। ওই সড়কে সেনাবাহিনীর ৬টি গাড়ি দেখতে পান তারা। পরে সকাল ৭টার দিকে সেনা সদস্যরা বাড়ির ভেতরে অভিযান শুরু করেন। স্থানীয় কয়েকজন জানান, যে বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে, সেটির সামনে পৌরসভার সাইনবোর্ডে বাড়ির মালিকের নাম লেখা মীর মহিউদ্দিন। তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলার মেসে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ১৮ জন ছাত্র থাকেন।
মেসের কয়েকজন ছাত্রের ভাষ্যমতে, নিচতলায় এই বাড়ির পেছনের বাড়ির এক স্থানীয় বাসিন্দা প্রায় ৫ মাস আগে ভাড়া নেন। ১২-১৫ দিন আগে অতিথি পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তিকে রেখে যান। নিচতলায় কী হয় বা কারা থাকেন, তা কখনো দেখেননি তারা। তবে একজনকে দিনে দু’একবার শুধু খাবার খাওয়ার সময় বের হতে দেখেন। ছাত্ররা জানান, মঙ্গলবার ভোর ৫টার পর বাড়ির সামনে সেনাবাহিনীর ৫-৬টি গাড়ি আসে। গাড়ির বহরে একটি কালো মাইক্রোবাসও ছিল। ২০-৩০ জন সেনা সদস্য বাড়ির তালা খুলতে বলেন। তালা খোলার পর তারা দোতলা ও তিনতলায় ওঠেন। এরপর মেসের সব বাসিন্দাকে দ্বিতীয়তলার একটি ও তৃতীয়তলার একটি কক্ষে রাখেন। পরে অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে সুব্রত বাইনকে ধরিয়ে দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরস্কার ঘোষণা করেছিল। পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম এই সুব্রত বাইন।
নব্বইয়ের দশকে ঢাকায় সুব্রত বাইনের চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের উত্থান ঘটে। চলে দখলবাজিও। তখন থাকতেন নয়াটোলা আমবাগানে। একপর্যায়ে তিনি হয়ে ওঠেন মূর্তিমান এক আতঙ্ক। ঢাকার মগবাজার এলাকায় সুব্রত বাইন ছাড়াও মোল্লা মাসুদের পৃথক বাহিনী তৎপর ছিল। সুব্রতর নামে ৩০টিরও অধিক খুনের মামলা রয়েছে। যার প্রায় সবগুলোতেই সাজাপ্রাপ্ত। এ ছাড়া অবৈধ অস্ত্র এবং চাঁদাবাজিসহ প্রায় ১০০ মামলার আসামি সে। ২০০১ সালে ঢাকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরতে পুরস্কার ঘোষণা করা হলে সুব্রত ও মাসুদ ভারতে পালিয়ে যায়।
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের হাত ধরেই মোল্লা মাসুদ অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ে। তবে চারদলীয় জোট সরকারের আমলেই সে ভারতে পালিয়ে যায়। ২০০৩ সালের পরে তাকে আর বাংলাদেশে দেখা যায়নি। ভারতে সে আবু রাসেল মো. মাসুদ নামে পরিচিত হয়। ভারতীয় নাগরিক রিজিয়া সুলতানাকে বিয়ে করে সেখানে বসবাস করছিল।