প্রথম পাতা
সারা দেশে কর্মসূচি, হাসনাত-মাসউদের হুঁশিয়ারি
সচিবালয়ে দিনভর বিক্ষোভ
স্টাফ রিপোর্টার
২৭ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রত্যাহারের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে দিনভর বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন কর্মচারী। এতে মন্ত্রণালয়ের দপ্তরগুলোতে অফিসিয়াল কাজে স্থবিরতা দেখা দেয়। মঙ্গলবার আবারো বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। একইসঙ্গে কর্মসূচি পালনের জন্য সচিবালয়ের বাইরে সারা দেশের সরকারি দপ্তরের কর্মচারীদের প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।
এদিকে সোমবার সকালে চট্টগ্রামে দলের এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহও কঠোর হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, কর্মচারীরা সরকারের কাজে বাধা দিলে, হুমকি দিলে জনগণই তাদের বিকল্প খুঁজে নেবে। সংস্কারে বাধা দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারকে জিম্মি করলে পরিস্থিতি ভালো হবে না। একইদিন বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে হান্নান মাসউদও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সচিবালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও চট্টগ্রাম বন্দরে চলমান আন্দোলনকে ইঙ্গিত করে কড়া হুঁশিয়ারি দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। তিনি বলেছেন, ‘আজ সচিবালয়, এনবিআর কিংবা পোর্টে যারা স্ট্রাইক করছেন, তাদের বলছি, বিপ্লব ওখানেও হবে।
অন্যদিকে, আজ মঙ্গলবার আবারো বিক্ষোভ মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা। একইসঙ্গে একই ধরনের কর্মসূচি পালনের জন্য সচিবালয়ের বাইরে সারা দেশের সরকারি দপ্তরের কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। এখন থেকে সচিবালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের সবগুলো সংগঠন মিলে ‘বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম’ নামে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবনের নিচে ঐক্য ফোরামের নেতারা মঙ্গলবারের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের একাংশের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর বলেন, কর্মসূচি ততক্ষণ পর্যন্ত চলমান থাকবে, যতক্ষণ না পর্যন্ত এই ‘কালো’ আইন বা অধ্যাদেশ বাতিল সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার না করা হবে। এই আইন বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে চলমান কর্মসূচি সমাপ্ত হবে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয় চত্বরের বাদামতলায় সমবেত হওয়ার আহ্বান জানান। সোমবার আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে উপদেষ্টা রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকায় সেই বৈঠকটি সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান বাদিউল কবীর। আবার বৈঠকের সময় ঠিক হলে তা সাংবাদিকদের জানিয়ে দেয়া হবে বলেন তিনি। ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের আরেকাংশের সভাপতি মুহা. নূরুল ইসলাম বলেন, ?সারা দেশের কর্মচারীরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন।
সচিবালয়ে বিক্ষোভের বিষয়ে যা বললেন হাসনাত আবদুল্লাহ: বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, জুলাইয়ের অভ্যুত্থান চলাকালে আপনারা কালো ব্যাজ ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন। অথচ এখন আপনারাই অফিস কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিচ্ছেন। ৫ই আগস্টের আগে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেও, তখন কিন্তু আপনারা কেউই পদত্যাগ করেননি। সোমবার এনসিপি’র চট্টগ্রাম উত্তর জেলার পথসভা কর্মসূচির আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এ সময় সচিবালয়ে বিক্ষোভ নিয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে হাসনাত বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার টিকে গেলে আপনারা ঠিকই পদলেহন করে চাকরি করতেন। সুতরাং ৫ই আগস্ট পরবর্তী বাংলাদেশে আপনারা যদি জনগণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে এ সরকারকে হুমকি দেন ও সংস্কার কার্যক্রমে বাধা দেন, তবে মনে রাখবেন, জনগণই আপনাদের বিকল্প খুঁজে নেবে। হাসনাত বলেন, ‘৫ই আগস্টের আগে কোনো সচিব, কোনো আমলা বা কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কি পদত্যাগ করেছেন। একজনও কি পদত্যাগ করেছেন। রাস্তার মধ্যে নাগরিকদের যে এভাবে গুলি করে হত্যা করছিল, তখন কি একজন সচিব বা আমলার পদত্যাগের খবর এসেছিল? কিন্তু এই সরকারের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর তারা সহযোগিতা না করে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। সরকারকে জিম্মি করলে পরিস্থিতি ভালো হবে না বলে মন্তব্য করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে লাখ লাখ হাসনাত আবদুল্লাহ আছেন। এই হাসনাত আবদুল্লাহ বেঁচে থাকতে এই সংস্কার কার্যক্রমে যদি বাধা আসে, সেটি কঠোর হাতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করা হবে। আপনারা এটা ভাববেন না যে আপনাদের বিকল্প নাই। জনগণ বিকল্প খুঁজে নেবে। সুতরাং সরকারকে সহযোগিতা করুন। সংস্কার কার্যক্রমকে সহযোগিতা করুন। সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে যদি আপনাদের কোনো পর্যালোচনা থাকে, তবে সেটি আপনারা নিজেরা আলোচনা করে সমাধান করুন। সরকারকে যদি জিম্মি করেন, সেটার পরিস্থিতি ভালো হবে না।
হান্নান মাসউদ যা বললেন: পৃথক দাবি-দাওয়া নিয়ে সচিবালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও চট্টগ্রাম বন্দরে চলমান আন্দোলনকে ইঙ্গিত করে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। তিনি বলেছেন, আজ (গতকাল) সচিবালয়, এনবিআর কিংবা পোর্টে যারা স্ট্রাইক করছেন, তাদের বলছি, বিপ্লব ওখানেও হবে। গতকাল বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে হান্নান মাসউদ এই হুঁশিয়ারি দেন। মাসউদ ফেসবুকে লিখেছেন, আজ (গতকাল) সচিবালয়, এনবিআর কিংবা পোর্টে যারা স্ট্রাইক করছেন, তাদের বলছি, বিপ্লব ওখানেও হবে। আপনারা দুর্নীতি আর লুটপাটের স্বাধীনতা চাচ্ছেন, কিন্তু চব্বিশ-পরবর্তী সময়ে এটা আর পাবেন না। হাসিনার পুরো শাসনামলের প্রতিটি গুম, খুন, দুর্নীতি, অর্থ পাচার সবকিছুর সহযোগী আপনারা। ভাববেন না, পার পেয়ে গেছেন। পুনশ্চ বলছি, পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের উচিত অবিলম্বে এসব দুর্নীতিগ্রস্তদের অপসারণ করে, নিরপেক্ষ কমিশনের মাধ্যমে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া।
গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ -এর খসড়া অনুমোদনের পর গতকাল অধ্যাদেশ জারি করা হয়। কর্মচারীদের অভিযোগ, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশটি করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদনের পর থেকেই এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-মিছিল করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। তারা এই অধ্যাদেশকে ‘নিবর্তনমূলক ও কালাকানুন’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু এই আন্দোলন চলার মধ্যেই রোববার সন্ধ্যায় ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে সরকার। এ নিয়ে আরও ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন কর্মচারীরা। এ অবস্থায় অধ্যাদেশটি প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার বেলা ১১টায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারী মিছিল করে সচিবালয় চত্বরের বাদামতলায় জমায়েত হন। এরপর তারা সচিবালয়ের ভেতর বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবনের নিচে সমাবেশ করেন। এরপর আবারো মিছিল নিয়ে বাদামতলায় জমায়েত হন তারা। একপর্যায়ে সচিবালয়ের মূল ফটকের কাছে যান তারা। এ সময় প্রধান ফটকসহ সচিবালয়ের বিভিন্ন ফটক বেশ কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে সেখান থেকে সরে এসে আবারো মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নতুন ভবনের নিচে আসেন কর্মচারীরা। সেখানেই বেলা আড়াইটায় কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে গতকালের মতো কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
পাঠকের মতামত
বিগত স্বৈরাচারের দোসরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার কে বেকায়দায় ফেলার জন্য সুযোগ বুঝে কাজ বন্ধ করে অন্যায় ভাবে রাস্তায় নেমে ধর্মঘট অবরোধ করিলে কঠোর হস্তে দমন করা হউক এবং সরকারি চাকুরী বিধি লংঘনের দায়ে কালবিলম্ব না করে তাদের কে চাকুরীচ্যুত করা উচিত কারণ দেশে অনেক শিক্ষিত মেধাবী তরুণ বেকারত্ব জীবনযাপন করিতেছেন।
ফ্যাসিবাদী হাসিনা যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন আপনারা কোথায় অন্ধকারে ছিলেন?