শেষের পাতা
জাপান যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা
কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৭ মে ২০২৫, মঙ্গলবার
নানামুখী চাপে পদত্যাগের হুমকি দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যার প্রেক্ষিতে তার অত্যাসন্ন জাপান সফর নিয়ে ‘শঙ্কা’ দেখা দিয়েছিল। এই অবস্থার মধ্যে সোমবার দুপুরে সফরটির প্রস্তুতি জানাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে শঙ্কার বিষয়টি সামনে আসে। প্রশ্ন উঠে- প্রধান উপদেষ্টার সফরটি আদৌ হচ্ছে কিনা? জবাব দিতে খানিকটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েন সদ্য ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব নেয়া রুহুল আলম সিদ্দিকী। অবশ্য তিনি শেষ পর্যন্ত নিজেকে সামলে নেন। বলেন- সফরটি হচ্ছে। এ নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা বা শঙ্কা নেই। সেই সঙ্গে সফরে ৭টি বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার তথ্যও নিশ্চিত করে গত সপ্তাহে নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে সচিবের পদে আসীন হওয়া ওই জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক। কিন্তু তাতেও আশ্বস্ত হতে পারছিলেন অনেকে। তাদের মধ্যে কানাঘুষা ছিল। যার কারণে টোকিও’র কনফার্মেশনটি জরুরি হয়ে পড়ে। অবশ্য জাপান হতাশ করেনি। তারা সব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার টোকিও সফরটি নিশ্চিত করেছে এক বার্তায়।
টোকিও’র বার্তায় যা বলা হয়েছে- সোমবার জাপান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৮-৩১শে মে সরকারি সফরে জাপান সফর করবেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে বৈঠক করবেন। এছাড়াও নিক্কিই ফোরাম ৩০তম ‘এশিয়ার ভবিষ্যৎ’- শীর্ষক সম্মেলনে যোগ দেবেন।
ঢাকার সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত: এদিকে সোমবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার সফর নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আহূত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়- অত্যাসন্ন সফরে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে সর্বমোট সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হবে। সমঝোতাগুলো হচ্ছে- প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপনে জাপানের জেবিআইসি ঋণ চুক্তি, ওনডা এবং নাকসিসের সঙ্গে বাংলাদেশ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের (এসইজেড) আলাদা দু’টি ভূমি সংক্রান্ত সমঝোতা, ব্যাটারি ও সাইকেল কারখানা স্থাপন নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সঙ্গে সমঝোতা, বিডাতে ওএসএস প্রযুক্তি স্থাপন নিয়ে জাইকার সঙ্গে সমঝোতা এবং দক্ষতা ও ভাষা উন্নয়নে মানবসম্পদ বিষয়ক বিএমইটি’র সঙ্গে আলাদা দু’টি সমঝোতা। সংবাদ সম্মেলনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব জানান, টোকিওর কাছে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা চাইবে ঢাকা। সেইসঙ্গে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী রেলপথ ডুয়ালগেজ ডাবল লাইনে উন্নীতকরণে একচেঞ্জ অফ নোটও সই হতে পারে। টোকিও বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা ইস্যু, নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে ৩০শে মে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারত্বে রয়েছে। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে সার্বিক বিষয়গুলোর ভবিষ্যৎ দিক-নির্দেশনা ঠিক করা হবে। বৈঠকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং বিভিন্ন খাতভিত্তিক সহযোগিতা, বিশেষ করে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি ও সাংস্কৃতিক বিনিময়, রোহিঙ্গা ইস্যু, নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুগুলো আলোচনায় থাকবে। স্মরণ করা যায়, ২০২৩ সালে বাংলাদেশকে সাড়ে ২২ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দিয়েছে জাপান। আগেরবার ঋণের সুদহার ১ দশমিক ৬ শতাংশ, এককালীন ফ্রন্টঅ্যান্ড ফি দশমিক ১ শতাংশ ছিল। ঋণটি ১০ বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য। ২০২০ ও ২০২১ সালে জাপান সরকার বাংলাদেশকে সাড়ে ৬৮ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তার ঋণ দিয়েছিল।
সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়: বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষাবিষয়ক সমঝোতা রয়েছে জাপানের। সেই সমঝোতার আওতায় সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করতে চায় দেশটি। ২০২৩ সালে জাপান তাদের নতুন অফিসিয়াল সিকিউরিটি এসিস্ট্যান্স (ওএসএ) কর্মসূচির সুবিধাভোগী চারটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকেও রেখেছে। আর এ কর্মসূচির আওতায় সামরিক সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি বিক্রি করতে দুই দেশের একটি চুক্তি প্রয়োজন।
আইপিএস-এ সরকারের অবস্থান ও বিগ-বি প্রকল্প: ২০২৩ সালে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস) নিয়ে বাংলাদেশ নিজ অবস্থান ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় আউটলুক প্রকাশ করে। এ আউটলুকে সামরিক প্রসঙ্গটি বাদ দিয়ে ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে অবাধ, মুক্ত ও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে দেখতে চায় ঢাকা। চীনকে কোণঠাসা করতে জাপানের কাছে অবাধ ও মুক্ত আইপিএস গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান আসন্ন শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে জানতে চাইবে টোকিও। চলতি মাসের মাঝামাঝি ষষ্ঠ এফওসিতে ইতিমধ্যে টোকিও জানিয়েছে, জাপানের অবাধ ও মুক্ত আইপিএস এবং বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথের (বিগ-বি) নতুন পরিকল্পনার আওতায় এ অঞ্চলে টেকসই উন্নয়ন দেখতে চায় টোকিও। দেশটির বিগ-বি পরিকল্পনায় ভারত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ অঞ্চলে বলয় বিস্তার করতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক বিনিয়োগকে গুরুত্ব দিচ্ছে জাপান।
পাঠকের মতামত
Japan and its people are mostly sympathetic to Bangladesh its people. Unfortunately some Bangladeshis cause serious harms to the friendly and cooperative relations between the two countries. Concerned personnel must be careful to avoid any disruptive situations. Many of my friends in both the countries and myself have been making our best efforts to enrich good understanding and cooperation among the governments of the two countries. Prof. Dr. Muhammad Yunus is one of the most respected person in Japan since long. We most fervently hope and wish that his mission will be greatly successful.