ঢাকা, ২৯ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৩০ জিলক্বদ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

সন্ত্রাসী ঢাকাইয়া আকবর খুন

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে
২৬ মে ২০২৫, সোমবার
mzamin

চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে বান্ধবী নিয়ে বেড়াতে গিয়ে দুর্বৃত্তের গুলিতে চিকিৎসাধীন সন্ত্রাসী আলী আকবর প্রকাশ ঢাকাইয়া আকবর (৩২) মারা গেছে। গতকাল সকাল ৮টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে, শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকার পশ্চিম পয়েন্টের ২৮ নম্বর দোকানের সামনে আড্ডারত অবস্থায় সন্ত্রাসী ঢাকাইয়া আকবরকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গত ৫ই আগস্টের পর চট্টগ্রামের আলোচনায় আসা সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের অনুসারীরা এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশের কয়েকটি সূত্র। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন দর্শনার্থী জান্নাতুল বাকী (৩০) এবং শিশু মহিম ইসলাম রাতুল (৮)। সে নগরের দক্ষিণ পতেঙ্গার ফুলছড়িপাড়ার শওকত হোসেনের ছেলে। আর জান্নাতুল বাকী ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডে কর্মরত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সূত্র বলছে, সম্প্রতি ঢাকা থেকে আটক হওয়া সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের লোকজন এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। আর ঘটনার কলকাঠি নেড়েছে বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খান ওরফে বড় সাজ্জাদ। যিনি ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের ‘গুরু’। গুলিবিদ্ধ ঢাকাইয়া আকবরও একসময় বড় সাজ্জাদের শিষ্য ছিল। কিন্তু বছরখানেক আগে কারাবন্দি অবস্থায় আকবরকে জামিন না করানোয় সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়। সেই থেকেই আকবরের ওপর ক্ষোভ থাকলেও সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে তা আরও বেড়ে যায়। পতেঙ্গা সৈকতে গোলাগুলির নেপথ্যে ছিল সেই দ্বন্দ্ব। ঘটনার শুরু থেকেই আকবরের সঙ্গে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুবকের বর্ণনা অনুযায়ী, নুসরাত জাহান নামে ওই তরুণীর সঙ্গে আকবরের ফেসবুকে পরিচয় হয় মাত্র পাঁচদিন আগে। কথাবার্তার একপর্যায়ে দেখা করার প্রস্তাব দেয় আকবর। ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার পতেঙ্গা সৈকতে বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। সে অনুযায়ী নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন মোড় এলাকায় এক ছোট ভাইকে দিয়ে প্রাইভেটকার পাঠায় আকবর। কিন্তু সেদিন ওই তরুণী আসেনি। পরদিন বিকালে তরুণীকে নিয়ে বেড়াতে যেতে আবারো একইস্থানে গাড়ি পাঠানো হয়। শুক্রবার বিকাল ৩টার পর অক্সিজেন মোড় জামান হোটেলের বিপরীতের প্রাইম ব্যাংকের সামনে দাঁড়ায় প্রাইভেটকারটি। কিছুক্ষণ পর নুসরাত জাহান নামে ওই তরুণী ঘটনাস্থলে যান বোরকা ও মাস্ক পরে। গাড়িতে ওঠার আগে তরুণী জানান, তার এক বান্ধবী ও বয়ফ্রেন্ডও সঙ্গে যাবে। পাঁচ মিনিটের মাথায় ওই তরুণী মুঠোফোনে ওই দু’জনকে সরাসরি পতেঙ্গা সৈকতে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রাইভেটকারে চড়ে। তরুণীকে নিয়ে এরপর যাওয়া হয় একই থানাধীন চালতাতলী পূর্ব মসজিদ এলাকায় আকবরের বাড়ির সামনে। সেখান থেকেই আকবর গাড়িতে চড়ে। গাড়ি গিয়ে থামে জিইসি মোড় এলাকায়। একটি কাপড়ের শো-রুম থেকে কয়েকটি শার্ট কেনে আকবর। 

এরপর গাড়িটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ধরে সরাসরি পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের দিকে রওয়ানা হয়। গাড়িতে থাকা অবস্থায় আকবর পতেঙ্গা এলাকার কয়েকজন বন্ধুকে ফোন করে। বিকাল আনুমানিক পাঁচটায় গাড়ি পতেঙ্গায় পৌঁছায়। আকবর তার বন্ধুদের ফোন করলে তারা আসতে দেরি হবে বলে জানায়। তখন ওই তরুণীসহ কর্ণফুলী টানেল হয়ে আনোয়ারা পারকির সমুদ্র সৈকতে যায়। সেখানে প্রায় আধাঘণ্টা তরুণীর সঙ্গে সময় কাটায় আকবর। একপর্যায়ে অচেনা কয়েকজন ছেলে আকবরকে সালাম দিয়ে জানায়, ফেসবুকে আকবরের ভিডিও তারা দেখে। আকবর তাদের চিনতে না পেরে সন্দেহবশত তড়িঘড়ি করে আবারো পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ফেরে। পতেঙ্গা সৈকতে ফেরার পর আকবরের পূর্বপরিচিত পতেঙ্গা এলাকার বন্ধুরা কল দেয় এবং সৈকতে তাদের দেখা হয়। যাদের মধ্যে তিনজন আকবরের সমবয়সী ছিল, বাকি একজন বড় ভাই। এরপর প্রাইভেটকার পার্কিং করে তারা সবাই মিলে সৈকতের ২৮ নম্বর দোকানে গিয়ে বসে। কিছুক্ষণ তারা গল্প করে দোকানিকে ডেকে নাশতা অর্ডার করে। এরই মধ্যে দোকানি পিয়াজু নিয়ে আসেন। আকবর এক প্লেট পিয়াজুসহ ওই তরুণীকে নিয়ে একটু দূরে আরেকটি টেবিলে গিয়ে বসে। প্রায় ১০ মিনিট পর হঠাৎ চার যুবক এসে আকবরকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। চারদিক ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ আকবর প্রাণ বাঁচাতে সমুদ্রের দিকে দৌড়াতে থাকে এবং একপর্যায়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আকবরের সঙ্গে থাকা সবাই এ সময় ঘটনাস্থল থেকে দৌড়ে পালায়।
আকবরকে গুলির পরপরই স্থানীয়রা সেখানে জড়ো হন। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালে নেয়ার আগে আকবর কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে, এই হামলার পেছনে রায়হান, খোরশেদ, ইমন ও বোরহান দায়ী। তারাই আকবরকে গুলি করেছে। ওই তরুণীর সঙ্গেও তার প্রথম দেখা। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ওই চারজন ছাড়াও সেগুন এবং মোহাম্মদ নামে আরও ২ জন ঘটনার সময় উপস্থিত ছিল। বাকি চারজনসহ এই ছয়জন চট্টগ্রামের আলোচিত এইট মার্ডার মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খানের অনুসারী।

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

আরও খবর

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status