ঢাকা, ৩০ মে ২০২৫, শুক্রবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১ জিলহজ্জ ১৪৪৬ হিঃ

শেষের পাতা

অচল চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট

সংঘর্ষ, লাঠিচার্জ কর্মবিরতিতে চিকিৎসক-নার্সরা

স্টাফ রিপোর্টার
২৯ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
mzamin

সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে জুলাই বিপ্লবে আহতদের বিষপান, গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা চেষ্টার পর এবার আহত যোদ্ধাদের হাতে লাঞ্ছিত হওয়ার অভিযোগে কর্মবিরতি শুরু করেছেন জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সসহ কর্মচারীরা। আর এই কর্মবিরতিকে ঘিরে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও ভর্তি থাকা জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে হাসপাতাল কর্মচারীদের। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, কোস্ট গার্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। দিনভর নানা নাটকীয়তার একপর্যায়ে জুলাই যোদ্ধাদের ওপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা ও লাঠিচার্জের প্রতিবাদে তাদের বিচার চেয়ে হাসপাতালের সামনের প্রধান সড়ক ব্লকেড করে রাখা হয়। নিরাপত্তাহীনতায় হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান ভর্তি থাকা অনেক সাধারণ রোগী।

এর আগে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কামাল আকবর গত রোববার দুপুরে জুলাই যোদ্ধাদের চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ নিতে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যান। হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার সময় ওই রুমের সামনেই সঠিক চিকিৎসার দাবিতে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন আলী হামজা শিমুল, সাগর, আবু তাহের ও মারুফ। এরপর তাদের উদ্ধার করে সোহ্‌রাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর তারা আবারো সোহ্‌রাওয়ার্দী থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার চক্ষু বিজ্ঞানে এসে পরিচালকের রুমের সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় চক্ষু বিজ্ঞানের পরিচালক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরীসহ সকলকে অবরোধ করে গায়ে পেট্রোল ঢেলে আত্মহত্যার হুমকি দেন। এ সময় চিকিৎসক-নার্সসহ আশপাশের জুলাই যোদ্ধারা তাদের নিভৃত করেন। এরপর মঙ্গলবার রাতে আবারো নার্সদের সঙ্গে বসচা হয় হাসপাতালটিতে ভর্তি জুলাই আহতদের। এরপর গতকাল সকাল থেকেই নিরাপত্তাহীনতা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করেন হাসপাতালটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর একপর্যায়ে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা বেশকিছু রোগীর সঙ্গে হাতাহাতি হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এ সময় জুলাই বিপ্লবে আহত হয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকা রোগীদের স্বজনদের ওপরও হামলা করা হয়। এরই মধ্যে তালা খুলে নিচে চলে আসেন হাসপাতালটিতে ভর্তি থাকা জুলাই আন্দোলনে আহতরা। তাদের সঙ্গে এ সময় যোগ দেন পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি থাকা জুলাই আহতরা। পরে বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনান্য হাসপাতালে ভর্তি থাকা আহত যোদ্ধারাও ঘটনাস্থলে চলে আসেন। এ সময় লাঠিসোটা নিয়ে জোটবদ্ধ আহতদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ শুরু হয় হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এ সময় হাসপাতালের ভেতর ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। তোপের মুখে কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিৎসক-নার্সরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেলে পুরো হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় জুলাই আহতরা। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনী ও পুলিশকে খবর দিলে দুপুরে ঘটনাস্থলে ব্যাপক পরিমাণ সেনাবাহিনী, পুলিশ, কোস্ট গার্ড ও র‌্যাবের সদস্যরা উপস্থিত হয়। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশৃঙ্খলাকারীদের ওপর চড়াও হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। একপর্যায়ে আহতদের একটি পক্ষ হাসপাতালের ভেতরে অবস্থান নিলেও বাইরে আরেকটি পক্ষ বাইরের মেইন রাস্তা ব্লকেড করে দেয়। 

ঘটনাস্থলে শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কামাল আকবর উপস্থিত হয়ে বলেন, আজকে যারা আমাদের জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালিয়েছে তার বিচার করতে হবে। আর যারা এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক আছেন তাদের এই মুহূর্তে মুক্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, এই আহতদের মানসিক অবস্থা ভালো না। তাদের সঙ্গে এভাবে ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। এর ভেতরে দেশি-বিদেশি শক্তি কাজ করছে। তাই এ সবের পেছনে যারা আছে গোয়েন্দা রিপোর্ট ও ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করতে হবে। এবং তা করতে হবে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আমাদের জুলাই ফাউন্ডেশনের অফিসে বসবো। কথা বলে সবকিছুর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরে তার অনুরোধে সন্ধ্যার পর জুলাই যোদ্ধারা রাস্তা ছেড়ে দিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।  

এদিকে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সসহ সকলে হঠাৎ কর্মবিরতিতে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। গতকাল সকাল থেকেই বন্ধ ছিল বহির্বিভাগের সেবাও। কেউ কেউ দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে গিয়েছেন। নির্ধারিত অপারেশনও বাতিল করতে হয়েছে। হাসপাতালের পরিচালক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, মঙ্গলবার কয়েকজন জুলাই যোদ্ধা আমার রুমে প্রবেশ করে নিজেদের মধ্যে তর্কে জড়িয়ে পড়ে এবং একপর্যায়ে হাতাহাতি করে। তাদের একজন পেট্রোল জাতীয় দাহ্য পদার্থ নিয়ে আসে। তারা আত্মহত্যা করতে চাচ্ছিলো, নাকি হাসপাতাল জ্বালিয়ে দিতে চাইছিল, তা পরিষ্কার নয়। এদের মধ্যে নানা গ্রুপিং রয়েছে। এক গ্রুপ আমাকে প্রায় দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে অন্য একটি গ্রুপ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সেনাবাহিনীর সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। নিরাপত্তাহীনতায় সকলে কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছে। তারা (জুলাই আহত) হাসপাতালের কোয়ার্টারে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে। আমিও মঙ্গলবার রাত থেকে ছুটিতে আছি। বতমানে জানে আলম নামে একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। 

হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জানে আলম বলেন, বুধবার সংঘর্ষের সময় জুলাইয়ে আহত এবং রোগীর স্বজনদের হামলায় আমাদের চিকিৎসক, কর্মচারীদের অনেকে আহত হয়েছেন। সেনাবাহিনী এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পর উনারা হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় আটকে পড়া চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীদের উদ্ধার করেন। 

ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা জানান, মঙ্গলবার জুলাইয়ের আহত কয়েকজন ও  হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দু’পক্ষকেই নিবৃত করে তাদের সরিয়ে দেই। হাসপাতালের ভেতরে কিছু চিকিৎসক, নার্স এবং সেবা নিতে আসা রোগী আটকা পড়েছিলেন, আমরা তাদের বের করে দিয়েছি। গাড়ি-ঘোড়াও চলছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক। 
 

পাঠকের মতামত

সরকারী হাসপাতালগুলিতে এখন রাখঢাক ছাড়াই রুগী ও তাদের সঙ্গীদের লাঠি থেরাপী দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য উপদেস্টা(?) কবে পদত্যাগ করে রুগী নয় হাসপাতালগুলিকে বাচতে দিবেন।

Ahmad Zafar
২৯ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ৮:১৯ পূর্বাহ্ন

শেষের পাতা থেকে আরও পড়ুন

শেষের পাতা সর্বাধিক পঠিত

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2025
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status