শেষের পাতা
সিলেটের অবৈধ পশুর হাট নিয়ে হার্ডলাইনে পুলিশ
ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে
৩০ মে ২০২৫, শুক্রবারপরিস্থিতি ভিন্ন। উত্তাল সময়। যদিও সিলেটের পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত। এই অবস্থায় কোরবানির পশুর হাট নিয়ে যাতে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সে কারণে আগে থেকেই সতর্ক পুলিশ প্রশাসন। কোনো বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন সিলেটের পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিম। গতকাল তিনি এ নিয়ে তার কার্যালয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করেছেন। তার কথায় আপাতত আশ্বস্ত হয়েছে হাট-বাজার কর্তৃপক্ষ। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী পশুর হাট কাজিরবাজার। এ বাজার সিলেটের প্রধান হাট। এ হাট ছাড়াও এবার সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬টি পশুর হাট ইজারা দিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। আরেক হাট রয়েছে দক্ষিণ সুরমার ট্রাক টার্মিনাল। সিলেটের কাছাকাছি সিলেট সদর উপজেলায়ও রয়েছে ১০টি পশুর হাট। কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে এত পশুর হাটের অবস্থান নিয়ে প্রতি বছরই শঙ্কা জাগে। হয় নানা বিশৃঙ্খলা। পশু সহ ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর মূল কারণ হচ্ছে; দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পশুর খামারিদের লক্ষ্য থাকে প্রধান হাট কাজিরবাজার। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই তারা পশু নিয়ে আসতে থাকেন। কিন্তু প্রতি বছরই হয় পশু ছিনতাই। জোরপূর্বক নামিয়ে দেয়া হয় অবৈধ পশুর হাটে। এ কারণে কাজির বাজার পশুর হাটের কর্তৃপক্ষ পথে পথে হাট না বসাতে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। সিটি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন-নগরের পরিধি বেড়েছে। চাহিদাও বেড়েছে। এসব বিবেচনায় ৬টি পশুর হাট এবার ইজারা দেয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার ইজারা কার্যক্রম শেষ করা হয়েছে। নগরের মধ্যে সিটি করপোরেশন কর্তৃক ইজারা দেয়া হাটগুলোর মধ্যে রয়েছে টিলাগড় পয়েন্ট, মেজরটিলা বাজার, শাহপরান বাজার, মিরাপাড়া, টুকেরবাজার ও মাছিমপুর। অভিযোগ উঠেছে এবার পশুর হাট ইজারায় সিন্ডিকেট হয়েছে। পুরাতনদের সঙ্গে নতুনরা মিলে সিন্ডিকেট করার কারণে সিলেট সিটি করপোরেশন ইজারা মূল্য কম পেয়েছে। ইজারা নেয়ার বিষয়টি সিন্ডিকেট কিনা সে ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আজিজুর রহমান স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। তিনি বলেন- দরপত্র প্রকাশ্যে খুলে সর্বোচ্চ দরদাতাদের ইজারা দেয়া হয়েছে। এবং নিজেদের খরচে নিয়মমতো হাট- বাজার বসাবেন এবং পরবর্তীতে জায়গা পরিষ্কার করবেন- সেটি বলে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন- এবার সিটি করপোরেশন পশুর হাট ইজারা দেয়ার অনুমতি বিলম্বে পেয়েছে। কয়েকদিন আগে অনুমতি পেলে ফের টেন্ডার আহ্বান করা যেতো। যেহেতু সময় নেই সে কারণে দ্রুতই টেন্ডার আহ্বান করে ৬টি হাট ইজারা দেয়া হয়েছে। খামারিরা জানিয়েছেন- সিলেটে ট্রাক থেকে চাঁদাবাজি, পথে পথে ট্রাক সহ গরু ছিনতাই ও অবৈধ হাটে জোরপূর্বক পশু নামিয়ে দেয়া হয়। এর ব্যাখ্যা তুলে ধরে গতবারের আলোকে তারা বলেন- নগরের মেন্দিবাগ, উপশহর, দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকার নদীর তীর, চণ্ডিপুল, নগরের আখালিয়া, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সরকার ঘোষিত কোনো হাট বসে না। কিন্তু প্রতিবারই দেখা যায় ঈদের আগে এসব জায়গায় অবৈধ হাট বসিয়ে পশু ছিনিয়ে নেয়া হয়। এতে করে বাইরে থেকে আসা অনেক খামারি পশু নিয়ে অন্যান্য জায়গায় চলে যান। সিলেটের প্রধান পশুর হাট কাজিরবাজারের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন লোলন মানবজমিনকে জানিয়েছেন- যারা হাটের মালিক তাদের মাথায় অনেক চিন্তা থাকে। পশু যাতে হাটে বেশি উঠে সেজন্য হাট কর্তৃপক্ষ আপ্রাণ চেষ্টা করেন।
সিলেটের কাজিরবাজার প্রধান পশুর হাট হওয়ায় দেশের অনেক এলাকার খামারিদের গন্তব্য থাকে এই হাটে। কিন্তু পথে পথে খামারিরা বাধাপ্রাপ্ত হলেও অনেক খামারি সিলেট থেকে চলে যান না। এবারের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন- এবার সিলেটে সবচেয়ে বেশি খামারি ও পশু ব্যাপারী আসতে চাইছেন। ইতিমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে বড় বড় গরু নিয়ে অনেক খামারি ও ব্যাপারী এসে গেছেন। তাদেরকে হাট কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করছে। তিনি জানান- কোরবানির পশুর হাটকে সামনে রেখে সিলেটের কাজিরবাজারকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এবার গোটা বাজারে নতুন সংযোজন হচ্ছে সিসিটিভি। ক্রেতা-বিক্রেতার নিরাপত্তা বিবেচনায় সেটি করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে- সিলেটের পশুর হাটের নিরাপত্তা সহ সার্বিক বিষয় নিয়ে গতকাল হাট কর্তৃপক্ষ সহ সিলেটের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পুলিশ কমিশনার। এতে বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী ও নগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সহ রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা হাট-বাজার ইজারাদার অংশের লোকজনও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে; পুলিশ কমিশনার এবার সিলেট নগর এলাকায় অবৈধ পশুর হাট নিয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। একই সঙ্গে হাটমুখী পশুবাহী গাড়িতে যাতে কেউ ছিনতাই, চাঁদাবাজি না করতে পারে সে ব্যাপারে পুলিশি কার্যক্রম চালাবেন বলে জানিয়েছেন। এতে হাট-বাজার কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা চাইলে পুলিশের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি। তবে; হাটের নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষকে সিসিটিভির ফুটেজ সহ নিরাপত্তা কার্যক্রম শুরু করার উপর তাগিদ দেন তিনি। বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে কাজিরবাজার সহ কয়েকটি হাটের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন- বাইরে থেকে আসা ব্যাপারী যে হাটে পশু নিতে চাইবে সে হাটে যাবে। পথিমধ্যে কেউ বাধা দিলে প্রশাসন সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। পুলিশ কমিশনারের এমন আশ্বাসে সবাই স্বস্তি পেয়েছেন। যদি সিলেটে রাজশাহী, বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর সহ ওই অঞ্চলের ব্যাপারীরা পশু নিয়ে নির্বিঘ্নে সিলেটের হাটে আসতে পারেন তাহলে পশুর দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। নতুবা দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।