শেষের পাতা
তিন সীমান্ত দিয়ে ৫৪ জনকে পুশইন করলো বিএসএফ
বাংলারজমিন ডেস্ক
৩১ মে ২০২৫, শনিবার
সীমান্ত দিয়ে পুশইন অব্যাহত রয়েছে। শেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ৫৪ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। এরমধ্যে হবিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ২২ জন, ফেনী সীমান্ত দিয়ে ১৩ জন ও মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে ১৯ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়েছে।
হবিগঞ্জে ফের ২২ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ, আহত ২
স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ থেকে জানান, চুনারুঘাট সীমান্তের রেমা-কালেঙ্গা জঙ্গল এলাকা দিয়ে ২২জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান। শুক্রবার ভোরে কোনো এক সময় কালেঙ্গা সীমান্ত দিয়ে তাদের ঠেলে দেয় বিএসএফ। বিজিবি রেমা বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত ডেবরাবাড়ি নামক স্থান দিয়ে পুরুষ ৯ জন, মহিলা ৮ এবং শিশু ৫ জনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পুশইন করে। সংবাদ পেয়ে বিজিবি’র টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করে। বর্তমানে জিজ্ঞাসাবাদ, পরিচয় জানা ও অন্যান্য আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান জানান, আমরা ভোরে খবর পাই বিএসএফ ২২জনকে পুশইন করেছে। সঙ্গে সঙ্গে বিজিবিকে খবর দেই। বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের একটি উপজাতি সমপ্রদায়ের বাড়িতে রাখেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে তাদের পোশাক ভিজে গিয়েছিল এবং দু’জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রবিন মিয়া বলেন, ২২জনকে পুশইন এর বিষয়টি আমি শুনেছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।
পুশইনের পর আটককৃতরা হলেন, জোহর আলী (৮০), মো. আরিফ (১৯), মো. আসাদুল (৩০), মোছা. আছিয়া বেগম (৬০), মো. আশরাফুল (৩৫), মোছা. জাহানারা (৩০), মোছা. কাকলী (১০), মোছা. আশরাফী (৬), মো. আমিনুল ইসলাম (৩৫), মোছা. আফরোজা (২৪), মো. আঃ হামিদ (৪২), মোছা. রেহানা বেগম (৪০), মো. সুজন (২২), মোছা. হাসি খাতুন (১৮), মোছা. পারভীন বেগম (২১), মো. শাহিনুর (০৩), মো. হাসানুর (০৭), মো. নজরুল ইসলাম (৫০), মোছা. ফাতেমা বেগম (৪৭), মো. ইমরান হোসেন (২৩), মোছা. সাবিনা (২০) ও মো. ইসমাইল হোসেন (২)।
চোখ বেঁধে পুশইন
ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনী সীমান্তে এবার নারী ও শিশুসহ ১৩ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। শুক্রবার ভোররাতে জেলার ছাগলনাইয়ার সীমান্ত দিয়ে এ ঘটনা ঘটে বলে। ফেনী সীমান্তের দায়িত্বরত বিজিবি অভিযান পরিচালনা করে একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে তাদেরকে আটক করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিজিবি-৪ ফেনী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন।
বিজিবি জানায়, শুক্রবার ভোররাতে ছাগলনাইয়া উপজেলার মটুয়া বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত দিয়ে ৪টি পরিবারের নারী ও শিশুসহ ১৩ জনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয় বিএসএফ। এ সময় স্থানীয়দের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে বিজিবি গিয়ে তাদের আটক করে। পরে তাদের ছাগলনাইয়া থানায় হস্তান্তর করে। আটককৃতরা হলেন- কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী থানার নাহরগঞ্জ ইউনিয়নের ছোট ধনিসরকাটা গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে মো. ইশরাক হোসেন (৪০)। একই জেলার ফুলবাড়ি থানার খরিবাড়ি ইউনিয়নের নাগদেহ গ্রামের মো. হোসেন আলীর ছেলে মো. আলতাফ (৩৯), তার স্ত্রী মোমিনা বেগম (৩২)। ফুলবাড়ী উপজেলার ফুলবাড়ী ইউনিয়নের পানি মাছ কুটি গ্রামের জকিরুল হকের ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম (৩৮), তার স্ত্রী ঊর্মি বেগম (২৯), তাদের ছেলে ওহিদুল ইসলাম (১১), মো. রেজাউল হক (৯), মেয়ে আরিফা আক্তার (৩), একই গ্রামের জকিরুল হকের ছেলে মোমিনুল হক (৩৫), তার স্ত্রী শেফালী বেগম (৩০), তাদের মেয়ে মনিজা আক্তার (১৩), মনজু আক্তার (১০) ও তিন মাস বয়সী ছেলে রমজান আলী।
বিজিবি জানায়, বিএসএফ’র পুশইন করা ১৩ বাংলাদেশিকে প্রথমে হাত ও চোখ বেঁধে সীমান্ত এলাকায় নিয়ে আসা হয়। পরে বৈরী আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে প্রত্যেকের হাত ও চোখের বাঁধন খুলে সুকৌশলে বাংলাদেশে পুশইন করে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, রাতের অন্ধকার এবং এলাকা সম্পর্কে অবগত না থাকায় ঠেলে দেয়ারা মটুয়া এলাকায় পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে অবস্থান করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বিজিবিকে জানায়, বিভিন্ন সময় ইটভাটার কাজ করার জন্য তারা ভারতে প্রবেশ করেছিল। আটককৃতদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, বিজিবি’র হস্তান্তরকৃত ১৩ জনকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে মটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। তাদের খাবার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সহযোগিতা করা হচ্ছে।
কমলগঞ্জের দুই সীমান্তে ১৯ জনকে পুশইন
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের দুই সীমান্ত দিয়ে আরও ১৯ জনকে পুশইন করেছে বিএসএফ। শুক্রবার সকালে উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের চাম্পারায় সীমান্ত দিয়ে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ১৪ জন ও শমসেরনগর ইউনিয়নের বাঘিছড়া সীমান্ত দিয়ে পাঁচজনকে ঠেলে দিলে অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের আটক করে বিজিবি। আটককৃতদের মধ্যে নারী, পুরুষ ও শিশুও রয়েছে। তারা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক বলে নিশ্চিত করেছে বিজিবি। বিজিবি-৪৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক এ এস এম জাকারিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আটককৃতদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হবে।