শেষের পাতা
সিলেটে কেন তর্কে জড়ালেন আরিফ-কয়েস
স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
১ জুন ২০২৫, রবিবার
সিলেটে কেন তর্কে জড়ালেন আরিফ ও কয়েস। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা নগর জুড়ে। ভাইরাল হয়েছে তাদের তর্কাতর্কির ভিডিও। এ নিয়ে সমালোচকরাও বসে নেই। তবে এই তর্ক প্রমাণ করে সিলেট বিএনপিতে অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে। এর আগে মোবাইলে কল ইস্যুতে আলোচিত হয়েছিলেন নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীও। বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী হচ্ছেন নগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি। নেতাকর্মীরাই জানিয়েছেন- সিলেট বিএনপি এখন বহু ধারায় বিভক্ত। এরমধ্যে একটি ধারার প্রধান হচ্ছেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও অপরটির প্রধান আরেক উপদেষ্টা এবং সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ৫ই আগস্টের পর তাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি দিন দিন প্রকাশ পাচ্ছে। সিলেট বিএনপি’র রাজনীতি বরাবরের মতো দ্বিধাবিভক্ত থাকায় নেতাকর্মীরাও বিব্রত। কয়েস লোদী হচ্ছেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির অংশের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে একজন। বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে এবার সিলেটে নগর বিএনপি’র পক্ষ থেকে শহীদ সোলেমান হলে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় প্রধান অতিথি করা হয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। শুক্রবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত সভায় তিনি প্রধান অতিথির ভাষণ দেয়ার সময় উপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আরিফ বলেন- দলের প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে নগর বিএনপি’র কার্য নিবাহী কমিটির সকল সদস্যদের উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু আজকে দেখা যাচ্ছে অনেকেই উপস্থিত নেই। তার এই বক্তব্যের সময় অডিয়েন্স থেকে কিছু কিছু ব্যঙ্গাত্মক সুর আসছিল। তার বক্তব্যের পর সভাপতির বক্তব্য রাখছিলেন নগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। একপর্যায়ে তিনি সাংবাদিকদের তার বক্তব্য লাইভ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন- আজকে হলভর্তি নেতাকর্মী রয়েছেন। গত দুইদিন ধরে নগর বিএনপি’র সব অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকছেন। এরপরও কেন এই অভিযোগ। এ কথা বলেই কয়েস লোদী আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। এমন সময় অতিথি সারিতে বসা আরিফুল হক চৌধুরী চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে কয়েস লোদীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। বলেন- আমি বক্তব্য দিলাম একভাবে আর তুমি বলছো আরেকভাবে। এটা ঠিক হচ্ছে না। এ সময় কয়েস লোদীও সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে উচ্চস্বরে কথা বলেন বলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে আরিফুল হক চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- আমি একভাবে কথা বলেছি। বিষয়টিকে অন্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটা সিনিয়র নেতাদের বক্তব্যের কাউন্টার হিসেবে বিবেচিত হয়। এ কারণে আমি বিষয়টি শুধরে দিয়েছি। কী ঘটেছে পরবর্তীতে ভিডিও’র মাধ্যমে সিলেটবাসী দেখেছে। এটা করা উচিত কিনা- সেটি সিলেটের মানুষই বিবেচনায় নেবেন। তবে রেজাউল হাসান কয়েস লোদী জানিয়েছেন- ‘আরিফুল হক চৌধুরী আমার সিনিয়র নেতা। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত হয়েছি। কেন এমনকি করা হলো এটি এখনো আমার বোধগম্য হচ্ছে না।’ দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন- আরিফুল হক চৌধুরী যখন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন তখন প্যানেল মেয়র-১ ছিলেন রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। তখন থেকেই তাদের দু’জনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এই বিরোধের প্রতিফলন দলের প্রতিষ্ঠাতাকে নিয়ে আয়োজন করা আলোচনা সভায় ঘটেছে। কেউ কেউ বলছেন; সভায় যারা অডিয়েন্সে উপস্থিত ছিলেন সেখান থেকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে কিছু কথা বার্তা হয়েছে। উপস্থিত থাকা অনেক নেতাকর্মীই ছিলেন তার বিরোধী। তাদের আচরণে ক্ষোভ বেড়েছে আরিফুল হক চৌধুরীর। আর সভাপতির বক্তব্যে কয়েস লোদী সেটির প্রটেকশন দেয়ায় আরও ক্ষোভ বাড়ে সাবেক এই মেয়রের। এ কারণে তার কথা না বুঝে কথা বলায় আরিফ ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপস্থিত থাকা নেতাকর্মীরা।